ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্র-ফিলিপিন্স সামরিক সম্পর্ক জোরদার

দক্ষিণ চীন সাগর ॥ পাল্টাচ্ছে শক্তির ভারসাম্য

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

দক্ষিণ চীন সাগর ॥ পাল্টাচ্ছে শক্তির ভারসাম্য

পঁচিশ বছর অনিশ্চিত ও কঠিন সময় পার করার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপিন্স চলতি সপ্তাহে এক নতুন ও ক্রমশ জটিল সামরিক সম্পর্ক দৃঢ়ভাবে গড়ে তুলবে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের শক্তি প্রদর্শনের ঘটনার দিকে দৃষ্টি রেখেই অনেকাংশে এ সামরিক মৈত্রী জোরদার করা হচ্ছে। ২০১৪ সালের এক চুক্তি অনুযায়ী ফিলিপিন্সে পাঁচটি সামরিক ঘাঁটিতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমতি দেয়া হবে। এতে গত কয়েক দশকের তুলনায় এখন দ্বীপ দেশটিতে আরও বেশিসংখ্যক আমেরিকান সৈন্য, বিমান ও জাহাজ মোতায়েন করা হবে। চলতি সপ্তাহে দুটি দেশের যৌথ সামরিক মহড়া হবে এবং মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ্যাশটন বি কার্টার বুধবার ম্যানিলা পৌঁছেছেন। এর মধ্য দিয়ে দুটি দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তুলে ধরা যাবে এবং সামরিক তাৎপর্য অনুষ্ঠানাদিও সম্পন্ন হবে। কার্টার এক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণ করবেন। দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপিন্সের দাবি করা সমগ্র ভূখ-কেই প্রয়োজন হলে এরূপ ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় আনা যাবে। অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো মোতায়েন করবে বলে নিশ্চিত করেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ম্যানিলায় আমেরিকার এ নতুন সামরিক উপস্থিতি দক্ষিণ চীন সাগরের ঐ অংশে শক্তির ভারসাম্য পাল্টে দিতে পারে। ফিলিপিন্স বর্তমানে ঐ সাগরে এর দাবি করা ভূখ-কে মার্কিন কোস্ট গার্ডের ব্যবহৃত দুটি ৫০ বছরের পুরনো নৌযান এবং দুটি জঙ্গীবিমান দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করে থাকে। ফলে চীন ভুখ- নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ এবং ফিলিপিনো জেলেদের হটিয়ে দিতে পারে। নতুন চুক্তিটি ঐ পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। চীন দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিকায়নের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে চুক্তিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। যুক্তরাষ্ট্রও ঐ সাগরে চীনের তৎপরতাকে সামরিকায়ন বলে অভিহিত করে থাকে। চীন দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশ নিজের বলে দাবি করে থাকে। চীন দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশ নিজের বলে দাবি করে থাকে। বাইরের শক্তিরা নয়, ঐ অঞ্চলের দেশগুলোরই যে কোন বিরোধের মীমাংসা করা উচিত বলেও চীন জোর দিয়ে মত ব্যক্ত করে থাকে। ফিলিপিন্স দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অংশীদার হয়ে রয়েছে। দেশটি এশিয়াতেই আমেরিকার অন্যতম পুরনো মিত্র। দেশটিতে কয়েক দশক ধরেই সুবিক বে ও ক্লার্ক এয়ারবেজে কয়েকটি বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ছিল। কিন্তু জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ফিলিপিন্সের পার্লামেন্ট সদস্যরা ১৯৯১ সালে দেশ থেকে আমেরিকান সৈন্যদের বিদায় করে দেন। এরপর কয়েক বছর সামরিক সম্পর্কে চিড় ধরে, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ভূখ-গত দাবি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়ায় দুটি দেশ পুনরায় মিত্রতায় আবদ্ধ হয়। ফিলিপিন্সে ২০০ মাইলের একক অর্থনৈতিক অঞ্চলের জলরাশির শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত। ফিলিপিনোরা এর জলরাশিকে পশ্চিম ফিলিপিন সাগর বলে থাকে। চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রকে ফিলিপিন্সের পাঁচটি সামরিক ঘাঁটি অন্তত দশ বছর ধরে স্থাপনা নির্মাণ ও পরিচালনা করতে দেবে। চুক্তিটিতে দেশের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি এবং চারটি বিমান ঘাঁটি অন্তর্ভুক্ত। এদের একটি রয়েছে পশ্চিমাঞ্চলীয় পালাওয়ান বন্দরে। দ্বীপটি দক্ষিণ চীন সাগরের এক দিক বরাবর ২৭০ মাইলজুড়ে বিস্তৃত। ফিলিপিন সুপ্রীমকোর্ট জানুয়ারিতে চুক্তিটি অনুমোদন করে। পুয়েট্রো প্রিন্সেসাস্থ ঐ এ্যান্টোনিও বটিস্টা এয়ার বেজটিকে ফিলিপিন্স দক্ষিণ চীন সাগরে এর অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর দৃষ্টি রাখতে এবং আমেরিকানরা আরও দূরে তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে কাজে লাগাবে। ফিলিপিন্সের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল বেস্টিটিটো প্যাভিলা এ কথা জানান। চীন ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামেরও দাবি করা কয়েকটি বালুচর ও দ্বীপ এবং সেই সঙ্গে ফিলিপিন্সেরও একক অর্থনৈতিক অঞ্চল বলে দাবি করা অঞ্চলের অনেকাংশ নিজের ভূখ- বলে দাবি করছে। চীন ভূমি পুনরোত্তলন ও কৃত্রিম দ্বীপগুলোকে সামরিক স্থাপনা দিয়ে সুরক্ষিত করে ঐসব এলাকায় নিজের অধিকার ব্যক্ত করেছে। ফিলিপন্স ঐ বিরোধ নিয়ে আন্তর্জাতিক সালিশ চেয়েছে। শীঘ্রই সালিশের সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হতে পারে। কিন্তু চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মঙ্গলবার বলেন, চীন ঐ ভূখ-ের ওপর প্রশ্নাতীত সার্বভৌমত্ব দাবি করছে এবং আইনের ছদ্মাবরণে এক রাজনৈতিক উস্কানি হিসেবে সালিশ প্রত্যাখ্যান করছে। -নিউইয়র্ক টাইমস
×