ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ নুরুজ্জামান

কোন পথে আফ্রিদি-ওয়াকারের ভবিষ্যত!

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

কোন পথে আফ্রিদি-ওয়াকারের ভবিষ্যত!

এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় কেঁপে উঠেছে পাকিস্তান ক্রিকেট। নাটকীয়তার পর ছোট্ট ফরমেটের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বড় তারকা শহীদ আফ্রিদি। পদত্যাগ করে অন্দরের খবর চাউর করে বোমা ফাটিয়েছেন কোচ ওয়াকার ইউনুস। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই অবস্থায় কোন পথে পাকিস্তান ক্রিকেট? কিন্তু মিসবাহ-উল হকের অধীনে টেস্টে এবং আজহার আলীর ওয়ানডে দলে যথেষ্ট স্থিতিশীলতা রয়েছে। তাই দল নয়, বরং আফ্রিদি ও ওয়াকরের ভবিষ্যত নিয়েই থাকছে বড় প্রশ্ন। যদিও নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেও সাধারণ সদস্য হিসেবে টি২০ চালিয়ে যেতে আগ্রহী ‘বুম বুম’ আফ্রিদি। ছোট্ট পরিসরে ইতোমধ্যে সরফরাজ আহমেদকে অধিনায়ক করা হয়েছে। নির্বাচক কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে গ্রেট ওয়াসিম আকরাম ও রমিজ রাজার অধীনে প্যানেল করে নতুন কোচ খুঁজছে বোর্ড (পিসিবি)। পাকিস্তান ক্রিকেটে কখন কী হয়, বোঝা মুশকিল! ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মোহাম্মদ হাফিজের স্থলে আফ্রিদিকে দ্বিতীয়বারের মতো টি২০ অধিনায়ক করা হয়। গত বছর বিশ্বকাপ খেলে ওয়ানডে থেকে অবসর নেন তিনি। টেস্ট ছাড়েন সেই ২০১০ সালে। ওই বছরই টি২০ বিশ্বকাপে দলকে সেমিতে তুলে নিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও সেমিতে উঠেছিল পাকিস্তান। আফ্রিদি ৪৩ টি২০তে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে জিতিয়েছেন ১৯টিতে, হার ২৩, টাই ১। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চেয়ে আফ্রিদি বলেন, ‘আমি আপনাদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। তাই সবার কাছে ক্ষমা চাইছি।’ ভিডিও বার্তায় আফ্রিদি আরও উল্লেখ করেন, ‘যখন আমি পাকিস্তানের জার্সি গায়ে তুলি, জার্সিটা পরে মাঠে যাই। আমি কিন্তু তখন পাকিস্তানের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা সঙ্গে নিয়েই মাঠে নামি। পাকিস্তান দলটা কেবল ১১ ক্রিকেটারকে নিয়ে নয়। পুরো দেশের মানুষই এই দলটার সঙ্গে থাকেন।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘দেশের নেতৃত্ব দেয়াটা ছিল আমার জন্য দারুণ গর্বের বিষয়। এ নিয়ে তিন ফরমেটেই অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছি। পাশে থাকার জন্য দেশবাসী ও পিসিবি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খানকে অশেষ ধন্যবাদ।’ অধিনায়ক জীবনের শেষ সময়টা অবশ্য মোটেই ভাল কাটেনি। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে লীগ পর্ব থেকে এবং এক জয়ের বিপরীতে টানা তিন হারে টি২০ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় আফ্রিদিদের। বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করলেও ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের কাছে পাত্তা পায়নি পাকিস্তান। নেতৃত্ব ছাড়ার আগে আফ্রিদিকে নিয়ে অবশ্য কম আলোচনা হয়নি। টি২০ বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর সতীর্থদের সঙ্গে দেশে না ফিরে দুবাইয়ে অবস্থান করেন তিনি। এরপর চুপিসারে পাকিস্তানে গেলেও পিসিবির সভায় অনুপস্থিত থাকেন। অবশ্য এ সময় তার মেয়ে অসুস্থ ছিল বলে খবর। মাঠের পারফর্মেন্স ভাল না হলেও স্বভাবসুলভ স্টাইলে নিজেই আলোচনার জন্ম দিয়েছেন আফ্রিদি। ‘এটা একেবারে পরিষ্কার, আফ্রিদির নিজের ফর্ম এবং নেতৃত্ব নিয়ে পিসিবি মোটেই সন্তুষ্ট নয়। তাই প্রয়োজনে তাকে বরখাস্তের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে। কেবল অধিনায়ক নয়, এমন কি সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবেও তাকে দলের সঙ্গে রাখতে চায় না বোর্ড!’ নাম না প্রকাশ করে পিসিবির এক কর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। সেখানে আরও বলা হয়, ‘গণমাধ্যমে আফ্রিদির দেয়া বক্তব্যে বোর্ডের বেশিরভাগ সদস্যই অখুশি।’ তবে পিসিবি প্রধান শাহরিয়ার খান চাইছিলেন, নেতৃত্ব ছেড়ে আফ্রিদি সাধারণ ক্রিকেটার হিসেবে খেলা চালিয়ে যাক। শেষ পর্যন্ত সেটিই হয়েছে। হয়ত তার সঙ্গে কথা বলেই আফ্রিদি সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। ১৯৯৮ থেকে পাকিস্তানের জার্সিতে ২৭ টেস্ট, ৩৯৮ ওয়ানডে ও ৯৮ টি২০ খেলে ১১ হাজারের ওপরে রান করেছেন, লেগস্পিনে তিন ভার্সন মিলিয়ে নিয়েছেন ৫৪০ উইকেট। তবে পাকিস্তানের মতো একটা দলের জন্য তিন ভার্সনে তিন অধিনায়কের কোন মানে নেই বলে মনে করেন ওয়াসিম আকরাম। সাবেক পেসার বলেন, ‘পাকিস্তানের ক্রিকেটের সংস্কৃতি ভিন্ন। আর দশটা দেশের মতো নয়। আমার মনে হয় না এখানে ভিন্ন ভিন্ন তিন অধিনায়ক রাখার কোন মানে আছে। কারণ আমরা একজন নেতাকেই ঠিকমতো মানি না। সেখানে খেলোয়াড়রা তিন অধিনায়ককে সহজভাবে গ্রহণ করবে, এমনটা আশা করা যায় কিভাবে?’ অন্যদিকে ওয়াকার বলেন, ‘আমি পাকিস্তানের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।’ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগেই এ ঘোষণা দেন সাবেক এই গতি তারকা। ২০১০-২০১১ মৌসুমের পর ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তানের কোচ হন ৪৪ বছর বয়সী ওয়াকার। তিনি আরও বলেন, ‘আক্ষরিক অর্থেই আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি। বিশ্বকাপে আমরা তাদের চাওয়া পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছি।’ দায়িত্ব ছাড়ার দু’দিন পর বোমা ফাটান ওয়াকার। এক বিশেষ সাক্ষাতকারে সদ্যবিদায়ী পাকিস্তানী কোচ বললে, দলটির ব্যর্থতার কারণ নেপথ্যের ‘দুই মাথা’! বোর্ডের শীর্ষ দুই কর্তার স্বেচ্ছাচারিতাকে বড় করে দেখছেন সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার। একজন বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান, অন্যজন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান নাজাম শেঠী। তারা নাকি স্বৈরাচারে মতো পাকিস্তান ক্রিকেটকে ভিন্ন দুইদিকে চালাতে চাইছেন! ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা পরিবারের দুই মাথা থাকা। তাতে কোন কাজ হয় না। কেবল কোচ নয়, সব মিলিয়ে গোটা পাকিস্তান ক্রিকেটই এই দু মাথায় ভুগছে। দুটি ভিন্ন নির্দেশনা। সবার আগে এটা ঠিক করা প্রয়োজন।’ এর মধ্য দিয়ে সাবেক কোচ যেন পিসিবির মাথা ধরেই টান দিয়েছেন। ক্রিকেট দলের জন্য বোর্ড, বোর্ডের জন্য ক্রিকেট দল নয়- এটা বুঝতে হবে বলেও মত ওয়াকারের, ‘আগেও বলেছি, পিসিবির উচিত দলের আরও কাছে আসা, কোচিং স্টাফদের কাছে আসা। উন্নতির জন্য এটা সবার আগে প্রয়োজন। কারণ তারা ক্রিকেট দলের জন্য, খেলাটির ভালর জন্য, দেশের জন্য কাজ করেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেটের সংস্কৃতিটাই এমন যে তাদের কাছে ক্রিকেটারদের ধরণা দিতে হয়। এটা অন্যরকম হওয়ার কথা ছিল। এই সংস্কৃতি দ্রুত বদলাতে হবে।’ ওদিকে নতুন কোচ নিয়োগ নিয়েও নাটক কম হচ্ছে না। ওয়াকার সরে দাঁড়ানোয় নতুন কোচ চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে পিসিবি। আকরাম ও রমিজ রাজাকে সেখানে অন্তর্বর্তী পরামর্শক করা হয়েছে, একই সঙ্গে তারা নতুন কোচ নির্বাচনের কাজটাও করবেন। আরেক সাবেক আকিব জাভেদ আগ্রহী ছিলেন।
×