ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রুইফকে নিয়ে ধোঁয়াশা!

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

ক্রুইফকে নিয়ে ধোঁয়াশা!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘প্রিয় ফেসবুক বন্ধুরা, সংবাদ মাধ্যমে অনেক লেখালেখি হচ্ছে আমাকে নিয়ে। আমি না কি আবারও বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো- এ বিষয়ে আমি এখনও কিছুই জানি না। বাফুফে আমাকে কিছুই জানায়নি।’ কথাগুলো লোডভিক ডি ক্রুইফের। এক বছর পর বাংলাদেশ ফুটবলে আবারও কোচ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে লোডভিক ডি ক্রুইফের। বাফুফের ন্যাশনাল টিমস ম্যানেজমেন্ট কমিটির সিদ্ধান্তে এমনটাই জানানো হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে এই ডাচ্ কোচের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছিল বাফুফের। এরপর আর তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো ক্রুইফকে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১৪ সালের অক্টোবরে চাকরি ছেড়ে দিলে পরের বছরের জানুয়ারিতে আবারও নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। সেবার শুধু বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্যই তাকে রাখা হয়েছিল। এরপর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বসহ বেশকিছু ম্যাচের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ক্রুইফকে। শেষ পর্যন্ত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মাঝে দায়িত্ব পালন করেন সাইফুল বারী টিটু, ইতালিয়ান ফ্যাবিও লোপেজ ও মারুফুল হক। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দুই ম্যাচে বাজে পারফর্মেন্সের লোপেজকে বরখাস্ত করা হয়। সাফ ফুটবল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাজে পারফর্মেন্সের জন্য মারুফুল নিজেই কোচ থাকতে আর রাজি হননি। মারুফুল হকের পর আপাতত দায়িত্ব পালন করছেন স্প্যানিশ গঞ্জালো সানচেজ মোরেনো। ক্রুইফের অধ্যায়ে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স ছিল মোটামুটি মানের। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের অনেকেই বলছেন, ক্রুইফ হচ্ছেন সবদিক থেকেই ব্যতিক্রম একজন কোচ। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসে তিনিই প্রথম বিদেশী কোচ, যিনি দ্বিতীয় দফায় কাজ করার সুযোগ পান। গত ৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ফুটবল আসর ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’-এ তার অধীনে খেলে রানার্সআপ হয় স্বাগতিক বাংলাদেশ। যেখানে বাংলাদেশের সম্ভাবনা-সামর্থ্য ছিল বড়জোর সেমিফাইনাল খেলা, সেখানে ফাইনাল পর্যন্ত যাওয়াটা অনেক বড় সাফল্যই মানছেন ফুটবলবোদ্ধারা। ২০১৫ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ জিততে পারলে অনেক অর্জনের মালিক হতে পারতেন ডাচ্ কোচ ক্রুইফ। যেতে পারতেন আবদুস সাদেক, জর্জ কোটান কিংবা জোরান জর্জেভিচের কাতারে। অল্পের জন্য তা পারলেন না। ফাইনালে মালয়েশিয়া যুবদলকে হারাতে পারলেই ২৬ বছর পর বাংলাদেশ ফিফা স্বীকৃত কোন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ আবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারত। ১৯৮৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘প্রেসিডেন্টস গোল্ডকাপ’-এর ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার ইউনিভার্সিটি দলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। দলের কোচ ছিলেন আবদুস সাদেক। এরপর ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারের চার জাতি আমন্ত্রণমূলক ট্রফি (কোচÑ জার্মানির অটো ফিস্টার), ১৯৯৯ (কোচÑ ইরাকের সামির শাকির) ও ২০১০ সালে সাউথ এশিয়ান গেমস, ২০০৩ সালে সাফ গেমস শিরোপা জিতলেও এগুলো ফিফা স্বীকৃত কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল না। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ আসরটি ফিফা স্বীকৃত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হওয়াতে দীর্ঘদিন পর আরেকটি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। সর্বশেষ ২০০৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়শিপের ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ জাতীয় দল। সেবার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সার্বিয়ান কোচ জোরান জর্জেভিচের অধীনে এসএ গেমসের ফাইনালে আফগানিস্তানকে হারিয়ে স্বর্ণপদক জিতলেও সেটা ছিল বাংলাদেশের অনুর্ধ ২৩ দল। যেকোন পর্যায়ে বাংলাদেশের সর্বশেষ শিরোপা অর্জন ২০০৩ সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন গোল্ডকাপে। সেবার অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটানের অধীনে বাংলাদেশ ফাইনালে মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আফসোস, সাদেক-কোটান-জর্জেভিচ হতে পারেননি ক্রুইফ! জাতীয় ফুটবল দলের ১৭তম বিদেশী কোচ ক্রুইফ। তার অধীনে জাতীয় ফুটবল দল ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়ার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ এবং এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এশিয়ান গেমসে অংশ নেয়। কোনটিতেই তার দল আশাতীত রেজাল্ট করতে পারেনি। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে ১৬৫ থেকে ১০০-১২০-এর মধ্যে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন ক্রুইফ। ক্রুইফ অক্টোবরে ফিরে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ছিল ১৮১ (অবশ্য বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ভাল রেজাল্ট করায় তখন বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫৭)! সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল ক্রুইফদের মূল এ্যাসাইনমেন্ট, সেখানে সপ্তম হয় বাংলাদেশ। ব্যর্থ হন ক্রুইফ। এদেশের ফুটবলে যদি আবারও ফেরা হয় ক্রুইফের, তাহলে আবারও বাংলাদেশ দলের সুদিন ফিরিয়ে আনতে পারবেন কি এই ডাচ্ম্যান?
×