ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন বৈধ

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন বৈধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে (আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে) মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধন বৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া এক রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের বেঞ্চ মঙ্গলবার নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণসহ এই রায় দেয়। নির্দেশনায় আদালত বলেছে, সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি যে ১১ দফা নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। আর নিবন্ধনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভা-ারের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়ার জন্য গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা এবং এর অপব্যবহার ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে আদালতের পর্যবেক্ষণে। আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। বিটিআরসির পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ব্যারিস্টার রেজা-ই রাকিব। মোবাইল ফোন অপারেটর রবির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ফতেমা আনোয়ার। মঙ্গলবার মামলাটির রায় ঘোষণা করে নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ৫২ নম্বরে ছিল। রায় ঘোষণার আগে মামলার সিম নিবন্ধন বিষয়ে শুনানি করেন রাষ্ট্র ও রিটকারী আইনজীবীরা। আদালত রায়ে আরও বলেছেন, গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে যে সিম নিবন্ধন করা হচ্ছে তা একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে কোন ভাবে এটি অপব্যবহার না হয়। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করতে বলা হয়। একই সঙ্গে যদি কোন গ্রাহকের আঙ্গুলের ছাপের অপব্যবহার হয় তাহলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পরে মুরাদ রেজা সাংবাদিকদের জানান, আদালত রুল নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছে। সেখানে দুটি বিষয়ের কথা বলেছেন আদালত। এক. বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের বিটিআরসি যে সকল বিষয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। দুই. আঙ্গুলের ছাপ যেন যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয় ন্যাশনাল আইডি যেখানে সংরক্ষিত হচ্ছে। রিটে বলা হয়, আমাদের দেশে তথ্য সংরক্ষণের কোন আইন নেই। যতদিন আইন না হচ্ছে ততদিন ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে সিম রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি তৃতীয় পক্ষের হাতে ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। এতে এই ফিঙ্গার প্রিন্ট অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। আবেদনে বিদেশী একটি জার্নালের তথ্য তুলে ধরা বলা হয় যে, বায়োমেট্রিকের কারণেই বিদেশে ৬৫ ভাগ অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৪ মার্চ রুল জারি করে। রুলে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন কার্যক্রম কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। মঙ্গলবার রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন আদালত। এর আগে এই রুলের ওপর ৩ ও ১০ এপ্রিল পর পর দুই দিন শুনানি হয়। এর আগে গত ৯ মার্চ রিট আবেদনটি দায়ের করেন আইনজীবী এসএম এনামুল হক। পরে গত ১৪ মার্চ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে (ফিঙ্গার প্রিন্ট) মোবাইল সিম নিবন্ধন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ। এক সপ্তাহের মধ্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও ডিজি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, জাতীয় পরিচয়পত্র উইংয়ের ডিজি, স্বরাষ্ট্র, আইন, ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ সচিব, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেল, সিটিসেল ও টেলিটক কর্তৃপক্ষকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রিট আবেদনকারী পক্ষের যুক্তি ছিল, দেশের ছয়টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে পাঁচটির মালিকানাই বিদেশীদের হাতে। দেশের ৯৭ শতাংশ গ্রাহকের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। নিবন্ধনের সময় তারা আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণ করলে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে এবং তার অপব্যবহার হতে পারে। বায়োমেট্রিক তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের সংশয় কাটাতে সরকার ও মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে প্রচার চালানো হচ্ছে।
×