ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচনী সহিংসতা

মুন্সীগঞ্জে সংঘর্ষে এমপির ভাতিজাসহ আহত ১৫ ॥ পিস্তল উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

মুন্সীগঞ্জে সংঘর্ষে এমপির ভাতিজাসহ আহত ১৫ ॥ পিস্তল উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জে ইউপি নির্বাচন নিয়ে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে এমপির ভাতিজাসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। শহরের পার্শ্ববর্তী পঞ্চসার ইউপির নির্বাচনী সহিংসতা এখন ছড়িয়ে পড়েছে মুন্সীগঞ্জ শহরে। শহরের জেনারেল হাসপাতাল, হাসপাতাল সড়ক ও মেথরপট্টির কাছের জুবলি রোডে ও সুপার মার্কেট এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষ বাঁধে। এছাড়া পাভেলের সমর্থকরা প্রতিবাদস্বরূপ ঢাকা-সিপাহীপাড়া-টঙ্গীবাড়ি সড়কের পঞ্চসার বণিক্যপাড়া রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। তাই শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এবং মুক্তারপুর ও আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। এই রিপোর্ট লেখার সময় রাত সাড়ে ৭টায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মোস্তফা তার মুক্তারপুরের ফ্যাক্টরিতে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছে। সব মিলিয়ে এখানে এক বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আহত জেলা তরুণ লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদ মৃনাল কান্তি দাসের ভাতিজা আদর দাস (২৫), তরুণ লীগের সভাপতি মৃদুল দেওয়ান জালাল (৩৫), জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাভেল (২৪), বাদল রহমান (৩৫), রিয়াজুল (২২), দুলাল হোসেন (৩৫) ও হাসানকে (৩০) মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে বিকেলে এদের প্রথম ছয়জনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। পুলিশ দু’টি বিদেশী পিস্তল, তিনটি পুড়িয়ে দেয়া মোটরবাইক এবং তিনটি ফাঁকা গুলির খোসা জব্দ করেছে। আহতের মধ্যে প্রথম চারজনকে অবৈধ অস্ত্র রাখার প্রাথমিক অভিযোগে পুলিশের আটকাবস্থায় চিকিৎসাধীন ররেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল সাত্তারের লোকজন সাড়ে ১০টার দিকে সদরের মুক্তারপুরের গোসাইরবাগ এলাকায় জনসংযোগে আসলে বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মোস্তফার লোকজন বাঁধা দেয়। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। পরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে মোটরবাইকে করে জেলা তরুণ লীগের সভাপতি মৃদুল দেওয়ান ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাভেলসহ কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে যায়। বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজনের সাথে বিত-া শুরু হয়। এক পর্যায়ে ফাঁকা গুলির শব্দ শোনা যায়। পরে সেখানে যায় সরকার দলীয় স্থানীয় সাংসদ মৃনাল কান্তি দাসের ভাতিজা আদর দাস। বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম মোস্তাফা দাবি করেছে তারা শাওবান ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজে গিয়ে তাকে অস্ত্র তাক করে নির্বাচনে জনসংযোগ না চালানোর জন্য হুমকি দেয় এবং ৬/৭ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এই সময় জনতা তাদের ঘিরে ফেলে গণধোলাই দেয় এবং মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়। তবে আদর দাসের অনুজ আপন দাস সন্ধ্যায় এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, মৃদুল দেওয়ান আগে থেকে ঐ এলাকায় ছিলেন। হঠাৎ মৃদুলের ফোন থেকে অন্য একজন আদরের ফোনে জানায়, মৃদুল এক্সিডেন্ট করেছে। এই খবর শুনেই আদর আরেকটি মোটরসাইকেল সাবেক ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি গোলাম রসুল সিরজী রোমান সেখানে যায়। পরে গোলাম মোস্তফার লোকজন তাদের আটকে মিলের ভেতরে নিয়ে বেদম প্রহার করে। পুলিশ তাদের উদ্ধার করতে গেলে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মৃদুল এবং আদরের সাথে অবৈধ অস্ত্র থাকার অভিযোগ তোলা হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ সেখানে যায়। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে দুপুর ১টার দিকে নিয়ে আসে। এই সময় হাসপাতালে শাহ জামাল ও নছিবুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলা হয়। এই সময় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সরদার রুবেল (৩৫), চম্পাতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হামিদুল হক (৪৭) ও হৃদয় (২৬) আহত হয়। পরে আহতদের ঢাকায় রেফার্ড করলেও প্রায় দুই ঘণ্টা সরকারী এই হাসপাতালটির প্রধান ফটক আটকে রাখা হয়। তাই এ্যাম্বুলেন্স ডুকতে পারেনি। পরে পুলিশ পৌনে ৩টার দিকে ফটকটি খুলে ঢাকায় পাঠায় আহতদের। আপন দাস জানান, আদরসহ অন্যদের ছয়টি মোটরসাইকেল সেখানে ছিল। চারটি পুড়িয়ে দিয়েছে এবং দু’টি মোস্তফার লোকজন লুট করেছে। যাদের উপর হামলা করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। কিন্তু মোস্তফার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা বছির মাদবর হত্যাসহ বহু হত্যাসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে মামলা রয়েছে। আপন আরও জানান, এছাড়া শহরে শিশিরের নেতৃত্বে মৃনাল কান্তির ব্যানার ফেস্টুন ছেড়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুস সাত্তার বলেন, “আমার মনোনয়ন বৈধ হওয়ায় সেখানে গিয়েছিলাম ভোটারদের দেয়ার জন্য। কিন্তু আমাকে বাধা দেয়া হয়। আর এই বিষয়টিই জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিল মৃদুলরা। তাদের নির্মমভাবে প্রহার করা হয়েছে। এদিকে শহরের মেথরপট্টির কাছে জুবলী রোডে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ হয়। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’র সভাপতি রেজাউল ইসলাম সংগ্রাম ও তার লোকজন এই গুলি ছোড়ার খবরে মেয়র ফয়সাল বিপ্লবের লোজন বিকেল তিনটার দিকে সংগ্রামের অফিসে হানা দেয়। পরে পুলিশ ও র‌্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সহকারী পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান জানান, অস্ত্র তাদের সাথে ছিল নাকি অস্ত্র দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে পুলিশ আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত রয়েছে পরে বিস্তারিত বলা যাবে। বিকেলে এই রিপোর্ট লেখা সময় উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। তাই শহর ও মুক্তারপুরের আশপাশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউপির নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তৃণমূল সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী গোলাম মোস্তফাকে মনোনয়ন দিয়ে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠায়। কিন্তু নানা অভিযোগের কারণে কেন্দ্র তাকে বাদ দিয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সাত্তারকে মনোনয়ন দেয়। ইউনিয়নটিতে ৭ মে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। রবিবার প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। ১৮ এপ্রিল প্রত্যাহারের শেষ দিন। আগামী ১৯ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা শুরু হবে। এখানে ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। তবে নির্বাচনক বিশ্লেষকরা মনে করছে- বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হবে।
×