ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

চিত্রশিল্পীর ক্যানভাস ও কণ্ঠশিল্পীর গানে নববর্ষ আবাহন

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

চিত্রশিল্পীর ক্যানভাস ও কণ্ঠশিল্পীর গানে নববর্ষ আবাহন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলার লৌকিক উৎসব চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে আজ বুধবার বিদায় ১৪২২ বঙ্গাব্দ। কাল বৃহস্পতিবার নতুন বাংলা বছর ১৪২৩ বঙ্গাব্দের সূচনা দিন পয়লা বৈশাখ। সেই সুবাদে মঙ্গলবার নববর্ষ আবাহনের রঙে রঙিন হয়েছে রাজধানীর সংস্কৃতি অঙ্গন। নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে শুরু হয়েছে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। সামিনা নাফিজের আঁকা ছবিতে সাজানো প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘বৈশাখ এবং দেশজ শিল্পের পুনর্বয়ন।’ সন্ধ্যায় বেঙ্গল শিল্পালয়ে বৈশাখ উৎসবে গাওয়া হয়েছে নববর্ষের আবাহনী গান। লোকগানের সুরসুধায় সিক্ত হয়েছেন শহুরে সুরের অনুরাগীরা। বর্ষবরণের বর্ণিলতায় যেন সচল হয়েছে শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়। নববর্ষের নানা অনুষঙ্গকে ধারণ করে তেমনই কিছু ছবি এঁকেছেন চিত্রশিল্পী সামিনা নাফিজ। সেসব চিত্রকর্ম নিয়ে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের জুম গ্যালারিতে মঙ্গলবার শুরু হলো এই শিল্পীর প্রথম একক প্রদর্শনী। সন্ধ্যায় বৈশাখ এবং দেশজ শিল্পের পুনর্বয়ন শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত একেএম আতিকুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার পরিচালক ব্রুনো প্লাস। সামিনার চিত্রপটে উদ্ভাসিত হয়েছে রঙিন পাখা, শোলার বাঘ, পাখি, ফুল, মাটির পুতুল, শখের হাড়িসহ বাংলার লোককলার রকমারি সব বিষয়। কোলাজ পদ্ধতিতেও সৃজিত হয়েছে কিছু চিত্রকর্ম। চিত্রপটে ছড়িয়েছেন নতুন বর্ণ ও রূপের আবেশ। আশ্রয় নিয়েছেন দেশজ শিল্পভাষার। সেই ধারায় উজ্জ্বল বর্ণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অলংকারধর্মিতা। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে ২৩টি ছবি। এর মধ্যে ২১টি ছবি তেলরং মাধ্যমে এবং ২টি ছবি মিশ্র মাধ্যমে আঁকা হয়েছে। প্রদর্শনী শেষ হবে ২৫ এপ্রিল। সোম থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে। ‘চিত্ত জাগুক গানে গীতে কাব্যে কথায়’ এই প্রত্যাশায় সঞ্জীবিত হয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে নববর্ষ আবাহনে চলছে পাঁচ দিনের বৈশাখ উৎসব। বেঙ্গল শিল্পালয়ের অনুষ্ঠিত উৎসবের চতুর্থ দিন ছিল মঙ্গলবার। এদিনের আয়োজন সাজানো হয় লোকসঙ্গীত দিয়ে। সঙ্গে ছিল যন্ত্রসঙ্গীতের পরিবেশনা। প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়ের সঞ্চালনায় মাটির গান প্রাণের গান পরিবেশন করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন সিদ্দিকুর রহমান, লাবিক কামাল গৌরব, ভজন বাউল, হালিমা পারভীন, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, চন্দনা মজুমদার, কিরণ চন্দ্র রায় ও ইফ্ফাত আরা দেওয়ান। দোতরার সুর বাজিয়ে শোনান ফাইজুর রহমান। দলীয় যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন মনিরুজ্জামান (বাঁশি), ইউসুফ খান (সরোদ), নুরুজ্জামান বাদশা ( বেহালা), একরাম হোসেন (এসরাজ) ও ইফতেখার আলম ডলার (তবলা)। আজ বুধবার উৎসবের পঞ্চম ও সমাপনীসন্ধ্যা সাজানো হয়েছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত দিয়ে। প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দীর সঞ্চালনায় এদিন দলীয় বাদনের অংশ নেবেন তবলায় সবুজ আহমেদ, বেহালায় শান্ত আহমেদ ও বাঁশিতে কামরুল আহমেদ। ধ্রুপদ পরিবেশন করবেন পরম্পরা শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা। খেয়াল পরিবেশন করবেন পরম্পরা শিক্ষার্থী বর্ষা মজুমদার ও প্রিয়াঙ্কা দাস। সেতারে সুর তুলবেন এবাদুল হক সৈকত। সব শেষে খেয়াল পরিবেশন প্রিয়াংকা গোপ। বিটিভিতে নববর্ষের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা ॥ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে একগুচ্ছ বর্ণিল অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) । এর মধ্যে রয়েছে নববর্ষের দিন সকাল সোয়া ৬টায় ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান রমনা বটমূল থেকে সরাসরি সম্প্রচার। সকাল ৮টা ২০ মিনিটে প্রচার হবে প্রামাণ্য অনুষ্ঠান বৈশাখী উৎসব। সকাল ৯টায় দেখানো হবে প্রীতিলতা শীর্ষক যাত্রানুষ্ঠান। ১০টা ৫ মিনিটে প্রচার হবে বাংলার পটগান। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে দেখানো হবে হুমায়ূন আহমেদের নির্মিত চলচ্চিত্র ঘেঁটুপুত্র কমলা। দুপুর আড়াইটায় প্রচার হবে পালাগান। পরিবেশন করবেন সঙ্গীতশিল্পী মমতাজ ও জুলিয়া সরকার। বিকেল ৪টা ৫ মিনিটে দেখানো হবে শিশুদের অংশগ্রহণে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী’। কবি আসাদ চৌধুরীর উপস্থাপনায় বিকেলে ৫টা ৫ মিনিটে প্রচারিত হবে লোকসঙ্গীতের অনুষ্ঠান। গাইবেন কিরণ চন্দ্র রায়, অনিকা মুক্তি গোমেজ, আবুবকর সিদ্দিক ও চম্পা বণিক। বিকেল ৬টা ১০ মিনিটে প্রচারিত হবে সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিকা।’ ফারজানা ব্রাউনিয়ার উপস্থাপনায় সন্ধ্যা ৭টায় থাকছে ‘বৈশাখী আলাপন।’ অংশ নেবেন সামিনা চৌধুরী, ফেরদৌস, জয়া আহসান, এস আই টুটুল, জাভেদ ওমর বেলিম, সুবর্ণা মুস্তাফা প্রমুখ। রাত সাড়ে আটটায় বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠানে পরিবেশনায় অংশ নেবেন নাদিয়া, লিখন ও তার দল। রাত ৯টায় প্রদর্শিত হবে ইমদাদুল হক মিলনের নাটক ফিরে এসো। রাত ১০টা ২০ মিনিটে অভিনেতা আফজাল হোসেনের পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় প্রচারিত হবে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান বাকবাকুম পায়রা। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সৈয়দ আবদুল হাদী, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সামিনা চৌধুরী, ফাহমিদা নবী, বিপাশা হায়াত ও জলের গান। আধুনিক বাংলা অভিধানের প্রকাশনা উৎসব ॥ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান। মঙ্গলবার একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অভিধানটির প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, এই অভিধান বাংলা ভাষায় প্রচলিত অভিধান-গ্রন্থমালায় এক বিশেষ সংযোজন। বাংলা ভাষার প্রমিতায়নের সঙ্গেও আধুনিক বাংলা অভিধানের রয়েছে নিবিড় যোগসূত্র। বক্তারা আরও বলেন, একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অভিধান কর্মসূচীকে যে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় আলোচ্য অভিধানটি বাংলা ভাষার সংজ্ঞার্থমূলক একটি পূর্ণাঙ্গ অভিধানের ঘাটতি পূরণ করবে। একই সঙ্গে ভাষার গতিময়তা ও পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে সঙ্গতি বিধান করে অভিধানকে হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেবে একাডেমিÑ এই প্রত্যাশা করেন আলোচকরা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অভিধান সম্পাদকের অনুভূতি ব্যক্ত করেন জামিল চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেনÑ অধ্যাপক আহমদ কবির, অধ্যাপক আবদুস সেলিম এবং ড. মোহাম্মদ আজম। সভাপতিত্ব করেন অভিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম। গান ও কথায় নুরুল ইসলাম জাহিদকে স্মরণ ॥ গীতিকার, সুরকার ও ভাওয়াইয়া শিল্পী নুরুল ইসলাম জাহিদের প্রথম প্রয়াণ বার্ষিক উপলক্ষে মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শুধুই নুরুল ইসলাম জাহিদের গান নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমার কথা মনে বুঝি নাই।’ নুরুল ইসলাম জাহিদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে দুই পর্বের এই বিশেষ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী, গবেষক সাইমন জাকারিয়া। প্রকৌশলী ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রাখেন ‘ভাওয়াইয়া’ গানের দল এবং ভাওয়াইয়া স্কুলের পরিচালক সফিউল আলম রাজা। বিশেষ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল শুধুই নুরুল ইসলাম জাহিদের লেখা ও সুরারোপিত প্রাণ ছোঁয় সব গান।
×