ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গত সাত বছরে সাফল্য তেমন নেই

পিপিপি গতিশীল করতে উদ্যোগ সরকারের

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

পিপিপি গতিশীল করতে উদ্যোগ সরকারের

এম শাহজাহান ॥ আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব (পিপিপি) গতিশীল করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পিপিপির জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হতে পারে। গত সাত বছরে এ খাতে নেয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে তেমন কোন সাফল্য নেই। তবে নতুন বাজেটে পিপিপি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। পিপিপি কার্যকর করতে এ খাতে বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার পদক্ষেপ থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, প্রতিবছর বাজেটে পিপিপির জন্য যে বরাদ্দ থাকছে, তা খরচ হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরেও পিপিপির আওতায় নীতিগতভাবে ৪২টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়ে তার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে পরিবহন খাতের রয়েছে ১৬টি প্রকল্প। এছাড়া ৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটন খাতে ৪টি, স্বাস্থ্যখাতে ৮টি, আবাসন খাতে ৫টি এবং শক্তি খাতে একটি প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু এসব প্রকল্পের কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ প্রকল্পই আলোর মুখ দেখেনি বলে জানা গেছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিপিপি বর্তমান সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ। এটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব ব্যবস্থা, যেখানে জনগণকে সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে বেসরকারী খাত বিনিয়োগ করে থাকে। এতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারী খাতের চুক্তি হয় বা সেবা তৈরির জন্য। বেসরকারী খাতকে সরকার নিবন্ধন দিয়ে থাকে। তবে গত সাত বছরে পিপিপি সাফল্য পায়নি। আগামীতে পিপিপি কার্যকর করা গেলে এ থেকে জনগণ সুফল পাবে। পিপিপিতে গত ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রথমবার ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও কোন টাকা খরচ হয়নি ওই বছর। দ্বিতীয়বার ২০১০-১১ অর্থবছরে আবারও বরাদ্দ রাখা হয় ৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ওই অর্থবছরেও কোন টাকা খরচ হয়নি। এর পরের বছরগুলোতেও বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ না করতে না পারায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। চলতি অর্থবছরে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও পিপিপির ব্যর্থতা নিয়ে সরল স্বীকারোক্তি দেন। তিনি জানান, পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে তেমন উল্লেখযোগ্য উদাহরণ নেই। স্বীকার করতেই হবে যে, পদ্ধতিগত প্রস্তুতি দুর্বল ছিল। তবে আশার বিষয় হলো, বিনিয়োগকৃত সম্পদ হতে প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সক্ষমতা বাড়াতে ইতোমধ্যে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব বিল-২০১৫ জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে পিপিপি বাস্তবায়নে যেসব অসুবিধা বা বাধা রয়েছে তা দূর করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, পিপিপির আওতায় ইতোমধ্যে ৪২টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অন্য ২টি প্রকল্পের চুক্তি শীঘ্রই স্বাক্ষর করা হবে। এছাড়া অনুমোদিত ২৪টি প্রকল্পে ট্রানজিকশন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়েছে। তবে পিপিপির আওতায় নেয়া এখন পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল গত ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার হবে এর দৈর্ঘ্য। এছাড়া পিপিপি প্রকল্পে নেয়া গাজীপুরের কালিয়াকৈরে উচ্চ তথ্যপ্রযুক্তি (হাইটেক) পার্কের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে, পিপিপির আওতায় ঢাকা বাইপাস চার লেনে উন্নীতকরণ, শান্তিনগর-মাওয়া ফ্লাইওভার নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু ব্রিজে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পাটুরিয়া-গোয়ালন্দে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ, তৃতীয় সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, হেমায়েতপুর-মানিকগঞ্জ পিপিপি সড়ক নির্মাণ, মংলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহাখালিতে আইটি ভিলেজ নির্মাণ, সিলেটে হাইটেক পার্ক নির্মাণের মতো বড় বড় প্রকল্প রয়েছে। নতুন বাজেটে পিপিপির আওতায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়া হবে।
×