ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শঙ্কামুক্ত চিত্তে নির্মল আনন্দে বৈশাখ উদযাপনের আশ্বাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

শঙ্কামুক্ত চিত্তে নির্মল আনন্দে বৈশাখ উদযাপনের আশ্বাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গতানুগতিক নয়- এবার ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কাল বৃহস্পতিবার রমনা বটমূলসহ আশপাশের এলাকায় অভূতপূর্ব কৌশলে মোতায়েন থাকবে সব বাহিনীর নিরাপত্তা সদস্যরা। র‌্যাব ও পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত করেই বলছে- এমনভাবে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা যেই কিছু ঘটানোর চেষ্টা করবে, সেই ধরা পড়ে যাবে। রমনা এলাকার আশপাশের সব এলাকা সিসিটিভির আওতায় এনে এমনভাবে পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে যাতে অপরাধীরা কিছুতেই তা ফাঁকি দিতে না পারে। যদিও মুখোশ নিয়ে পুলিশ আগের আদেশে কিছুটা শিথিলতা এনেছেন। মুখোশ পরিহিত অপরাধীকেও যাতে সিসিটিভিতে ধরা যায় সে কৌশলও প্রয়োগ করা হবে। দিনভর মাথার ওপর চক্কর দেবে র‌্যাব পরিচালিত হেলিকপ্টার। নিরাপত্তা নিয়ে মঙ্গলবার রাজধানীতে র‌্যাব ও মহানগর পুলিশপ্রধান শুনিয়েছেন নিজস্ব এ্যাকশন পরিকল্পনার কথা। আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানে তারা দুজনেই বলেছেন, নগরবাসীর উদ্বেগের কোন কারণ নেই। নিঃশঙ্ক চিত্তে নির্মল আনন্দে বৈশাখী উদ্যাপনের আশ্বাস দিয়েছেন র‌্যাব মহাপরিচালক ও পুলিশ কমিশনার। সকালে রমনা বটমূলে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ নগরবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন আতঙ্কিত না হয়ে দেশবাসীকে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের। বলেছেন, নববর্ষ বরণে র‌্যাবের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। যে কোন ঝুঁকি মাথার রেখে নিরাপত্তার ব্যবস্থা প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব। মঙ্গলবার রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে র‌্যাবের প্রস্তুতি কাজ পরিদর্শনে এসে বেনজীর আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি জানান, পুরো রমনার বটমূল সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ নিরাপত্তার কাজে হেলিকপ্টার টহল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক মানের পর্যবেক্ষক থাকবেন। এ সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক দেশবাসীকে অতি উৎসাহিত না হয়ে শান্তভাবে উৎসব উদ্যাপন ও প্রকাশ্যস্থানে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করার আহ্বান জানান। এক প্রশ্নের জবাবে জানান, পর্যাপ্ত সংখ্যক র‌্যাব সদস্য সাদা পোশাকে অনুষ্ঠানজুড়ে মোতায়ন থাকবে। তাদের সর্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকবে রমনা বটমূলসহ আশপাশের এলাকা। একই সময়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুুজ্জামান মিয়া জানান, নববর্ষ উদ্যাপনে রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) আওতায় আনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেউ পার পাবে না কিছু ঘটিয়ে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে ১৯টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে মঙ্গলবার দুপুরে পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব তথ্য জানান। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা সংস্থা, সিটি কর্পোরেশন, ঢাবি কর্তৃপক্ষ, আয়োজক ও চারুকলা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বিত পরিকল্পনা করা হয়েছে। এবারের পহেলা বৈশাখে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামর্থ্যরে সর্বোচ্চটুকুই দেবে পুলিশ। জননিরাপত্তায় জনগণকে আমাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। নিরাপত্তার স্বার্থে ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে ১৪ এপ্রিল রাত ৯টা পর্যন্ত স্টিকার ছাড়া কোন গাড়ি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। পুুলিশ কমিশনার বলেন, ওয়াচ টাওয়ার থেকে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পুরো পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হবে। রমনা পার্ক, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান ও টিএসসিতে ডিএমপির কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। ডিএমপির ফুড প্যাট্রোল রাখা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শাহবাগ থেকে শুরু করে দোয়েল চত্বর-শহীদ মিনার পর্যন্ত হকার বসতে দেয়া হবে না। প্রতিটি গেটে ডিএমপির পক্ষ থেকে মিষ্টি, বাতাসা ও ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হবে। ডিএমপির পক্ষ থেকে সুপেয় পানি, মিনারেল ওয়াটার বিতরণ করা হবে। ডিএমপি কমিশনার জানালেন, রমনা পার্ক, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান ও টিএসসি এলাকা পুরো মাইকিংয়ের আওতায় থাকবে। যাতে আমরা একে অপরের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারি। ডিএমপির পাশাপাশি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), গার্লস গাইড ও চারুকলার নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। এছাড়াও বিভিন্ন বাহিনী, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সমন্বিতভাবে সব নিরাপত্তা রক্ষীরা একসঙ্গে কাজ করবে। মঙ্গল শোভাযাত্রার ডিএমপির বিশেষায়িত টিম সোয়াট মোতায়েন করা হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ না পরার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মূল শোভাযাত্রায় চারুকলার শিক্ষার্থীদের হাতে রাখা মুখোশ বহন করতে কোন বাধা নেই। এদিকে পহেলা বৈশাখে ঢাবির নেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে উপ-উপাচার্য শহীদ আক্তার হোসেন জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ এবং চার শতাধিক বিএনসিসি ও গার্লস গাইড থাকবে। জরুরী প্রয়োজনের কথা ভেবে কয়েকটি হেল্পলাইন খোলা হয়েছে। হেল্পলাইনের ফোন নম্বরগুলো ঢাবি ক্যাম্পাসে লাগিয়ে দেয়া হবে। গত বছর পহেলা বৈশাখের সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসংলগ্ন সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে ভিড়ের মধ্যে নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনার কথা স্মরণ রেখেই পুলিশ এবার আরও কৌশলী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যাতে কোন ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে। বিশেষ করে উত্ত্যক্তকারীদের ঠেকাতে এবার পুলিশের বিশেষ দল মাঠে থাকবে। উত্ত্যক্তকারীদের ধরতে কাজ করবে বিশেষ ব্যবস্থা। সোয়াট টিম থাকবে মঙ্গল শোভাযাত্রার নিরাপত্তায়। গড়ে তোলা হবে নিñিদ্র নিরাপত্তাবলয়। রমনা ও সোহ্রাওয়ার্দীতে ঢোকার ও বের হওয়ার জন্য আলাদা ফটক ব্যবহার করতে হবে। বিকেল সাড়ে ৪টার পর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের সব ফটক বন্ধ করে দেয়া হবে। এ সম্পর্কে পুলিশ জানায়, বিগত সময়ে মূল মঙ্গল শোভাযাত্রার পেছনে কিছু বহিরাগত লোককেও মুখোশ পরে অংশ নিতে দেখা গেছে। এ ধরনের চেষ্টা এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এর বাইরেও বিভিন্ন পণ্যের বিপণনের জন্যে বিভিন্ন ধরনের টি-শার্ট পরিধান করে বিভিন্ন কোম্পানি চলে আসে, যারা মূল মঙ্গল শোভাযাত্রার পার্ট নয়। যারা চারুকলা কর্তৃক স্বীকৃত নয়, তারা যেন বিপণন বা বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল উদ্দেশ্য বিঘিœত করতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। উল্লেখ্য, পুলিশ আগেই ঘোষণা করেছে, এবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। তবে সন্ধ্যার পরে রাস্তায় হাঁটতে, রেস্তরাঁয় বসে গল্প করতে কোন নিষেধ নেই। ইনডোরে সব অনুষ্ঠান করা যাবে, শুধু উন্মুক্ত স্থানে বড় ধরনের গানের কনসার্ট বা অনুষ্ঠান করা যাবে না। সন্ধ্যার পরে বাড়ির ছাদে এবং রেস্তরাঁয় উৎসব উদ্যাপন করা যাবে।
×