ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডেঙ্গু জ্বর

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১২ এপ্রিল ২০১৬

ডেঙ্গু জ্বর

পর পর কয়েক বছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব কম থাকার পর এ বছরের ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি। ডেঙ্গু জ্বর আপনা-আপনিই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এটা এক রকমের ভাইরাস জ্বর। সাধারণত ৪ রকমের স্ট্রেন ডেঙ্গু জ্বর (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ডেন-৪)। স্ত্রী প্রজাতির এডিস মশা- এই জীবাণু বহন করে। এডিস মশাকে বলা যায় শহুরে মশা। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন আচরণের সঙ্গে যেন মিশে আছে এডিস মশার জীবনাচরণ ও বংশ বিস্তার। এডিস মশা সাধারণত বর্ষায় জমে থাকা ফুলের টবের পরিষ্কার পানি, গাড়ির গ্যারেজের পরিত্যক্ত টায়ারের মধ্যে, এসির জমে থাকা পানিতে জন্মে থাকে, ময়লা নর্দমাতে এডিস মশা বিস্তার লাভ করে না। দিনের বেলায় সাধারণত দংশন করে থাকে এবং ডেঙ্গু ভাইরাস এক শরীর থেকে আরেক শরীরে ছড়ায়। শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণু প্রবেশ করলে কি হয়? সাধারণত ২ থেকে ৭ দিন শরীরে এর বিস্তারকাল। রক্তের মনোসাইটকে আক্রমণ করে থাকে, শরীরের আক্রান্ত মনোসাইট ও লিম্ফোসাইটের মধ্যে এক যুদ্ধ চলে। নিঃসরণ হয় অনেক রকমের কেমিক্যাল মেডিয়েটর ও সাইটোকাইন। তারা কিনা রক্তের উপশিরা সুক্ষ্ম জালিকা শিরাকে ছিদ্রময় করে তুলে। ফলে উপশিরা জালিকা শিরা দিয়ে পানি বেড়িয়ে আসে। পেটে ও অন্যান্য শিরা বহির্ভূত স্থানে এসে জমে। জলীয় অংশ কমাতে রক্ত হয়ে পড়ে ঘন এবং শ্লথ। ডেঙ্গুর এই জীবাণু আবার আক্রমণ করে হাড়ের ভেতরের মর্জার অনুচক্রিকা (প্লাটিলেট) উৎপাদক ম্যাগাকারিওসাইট সেলগুলোকে। যত বেশি মনোসাইট ও লিম্ফোসাইটের যুদ্ধ, শরীরে তত এন্টি বডি, উৎপাদন, আর তত ডেঙ্গু হেমোরজিক জ্বর ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের প্রকোপ। ডেঙ্গু হেমোরজিক জ্বরে শরীরের যকৃত আক্রান্ত হয় ৯০% ক্ষেত্রে। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ০ নিরন্তর জ্বর, ব্যথা, সারা শরীরেই ব্যথা, চোখের ওপরে ব্যথা, পেছনে পিঠে ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, পায়ে ব্যথা, ডেঙ্গুর আর এক নাম হাড়ভাঙ্গা জ্বর (ইৎবধশ নড়হব ভবাবৎ) ০ র‌্যাশ : সারা শরীরে লাল লাল ছোপ ছোপ র‌্যাশ। সঙ্গে চুলকানি। সাধারণত র‌্যাশ বের হয় ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে। জ্বর কমার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত র‌্যাশগুলো বের হয়। ০ চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হতে পারে। হতে পারে ইনজেকশনের জায়গা থেকে। রক্তক্ষরণ হতে পারে নাক-মুখ দিয়ে। কালো রক্ত রঞ্জিত মল ত্যাগ করতে পারে রোগী। মূত্রের সঙ্গেও কিন্তু রক্তক্ষরণ হতে পারে। ০ কাশি-শ্বাসকষ্ট হতে পারে। হতে পারে পাতলা পায়খানা, বমি এবং পেটের ব্যথা। পেটে পানিও জমে যেতে পারে। ০ কখনও কখনও রোগীর জ্ঞানও লোপ পেতে পারে। ০ ডেঙ্গু জ্বর কোন লক্ষণ ছাড়াও হতে পারে। শুধুমাত্র জ্বর। ০ রক্তক্ষরণসহ হতে পারে। ডেঙ্গু রক্তক্ষরণের জ্বর শক বা শক ছাড়াই নিতে আসতে পারে। ডেঙ্গুতে কমে যেতে পারে ব্লাড প্রেসার। শরীর হয়ে যেতে পারে ঠা-া বরফের মতো যেটা কিনা খারাপ লক্ষণ। ০ কখনও কখনও ডেঙ্গুতে বুকে ও পেটে পানি জমে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কি পরীক্ষা করবেন। না পরীক্ষা-নিরীক্ষা তেমনটি নেই। ০ রক্তের সম্পূর্ণ গণনা যা কিনা রক্তের শ্বেতকণিকা ও অনুচক্রিকা কমে যেতে পারে। আর এই অনুচক্রিকা কমাতে রক্তক্ষরণের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কমে যায় রক্তের জলীয় অংশ। ফলে রক্ত লোহিত কণিকার ঘনত্ব বাড়তে থাকে। ০ আর তাছাড়া ডেঙ্গু এন্টিবডি করি সাধারণত রোগের ৫ দিন পর থেকে। ডেঙ্গু এন্টিবডি আইজিএম পজিটিভ হলে (৫ দিন থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত) ধরে নেব সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ইনফেকশন। আর যদি আইজিজি বেড়ে যায় তবে ধরে নেব পূর্বতন ইনফেকশন। ০ যকৃতের ইনজাইম এসজিপিটি ও এসজিওটিও বেড়ে যায় অল্প পরিমাণে। ০ অনেক সময় বুক ও পেটের এক্সরে ও আলট্রাসনোগ্রাম করে থাকি বুক ও পেটের পানির পরিমাণ দেখার জন্য। চিকিৎসা ০ সাধারণত চিকিৎসা তেমনটি লাগে না। কোন অসুবিধা না হলে বাসায় চিকিৎসা দিলেই চলে। ০ পর্যাপ্ত বিশ্রাম ০ সিরাপ/বড়ি প্যারাসিটামল ০ অধিকতর পানীয় খাদ্য যেমনÑ পানি, খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি ইত্যাদি বেশি বেশি খাওয়া উচিত। ০ যদি অনুচক্রিকা ব্যাপকভাবে কমে এবং রক্তক্ষরণ হয় অথবা রোগী শকে যায় তবে হাসপাতালে ভর্তি করে শিরায় স্যালাইন দেয়া হয়। ০ বেশি রক্তক্ষরণ হলে এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে আমরা রোগীর শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে থাকি। ০ না, অনুচক্রিকা (প্লাটিলেট) দেয়া লাগে না স্বভাবত। আর অনুচক্রিকার আয়ুষ্কাল খুবই কম (৬ থেকে ৭ ঘণ্টা)। তাই অনুচক্রিকার সঞ্চালন আজকাল হয় না বলতে গেলে। তবে একেবারেই যদি অনুচক্রিকা ১০,০০০ এর নিচে কমে যায় (১,৫০,০০০ থেকে ৩,৫০,০০০ নর্মাল) তবে রক্তক্ষরণ তাৎক্ষণিক রোধ করতে আমরা অনুচক্রিকা দিয়ে থাকি। এসিড মশার বংশবিস্তার রোধ করা এবং মশারি ব্যবহার করে ডেঙ্গু দমন করা যেতে পারে। ডা. রফিক উজ্জ্বল হলি ফ্যামেলি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল
×