ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ একনেকে অনুমোদন

বাংলাদেশ-ভারতের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে জামালপুরে

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১২ এপ্রিল ২০১৬

বাংলাদেশ-ভারতের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে জামালপুরে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য জামালপুরে তৈরি হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল। ৪৮৮ একর জমির ওপর এটি তৈরি করা হবে। ফলে ভারতীয় ও স্থানীয় কোম্পানিসমূহের জন্য শিল্প ইউনিট স্থাপন ও পরিচালনায় আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৩০২ কোটি ৫৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে প্রক্রিয়াকরণ শেষে আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। অর্থনৈতিক অঞ্চল বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। এখন বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিতভাবেই বিনিয়োগ করতে পারেন। ইকোনমিক জোন সব সময়ই লাভজনক। আমরা চাই সবাই লাভবান হোক। জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য আহাম্মদ হোসেন খান পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভারতীয় ও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প অঞ্চল স্থাপন করা সম্ভব হবে। এতে স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংযোগস্থলে অবস্থিত। বে অব বেঙ্গল গ্রোথ ট্রায়াঙ্গেলের শীর্ষ সমুদ্র বন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে দক্ষিণ-পঞ্চিমে কলকাতা, মাদ্রাজ ও কলম্বো এবং দক্ষিণ-পূর্বে ইয়াংগুন থেকে থাইল্যান্ড ও প্যানাং পর্যন্ত যোগাযোগ বিস্তৃত। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর নেপাল, ভুটান, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্য এবং মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনাময় সমুদ্র প্রবেশ দ্বার। এ কারণে বাংলাদেশ এ্যাসেমব্লিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, ট্রেডিং এবং সার্ভিস সংক্রান্ত ব্যবসার আঞ্চলিক হাব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতে চারটি রাজ্য ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম এবং অসমের সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৮৮০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যার মেঘালয় রাজ্যের সঙ্গে ৪৪৩ কিলোমিটার সীমাপ্ত বিদ্যমান। ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। জামালপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, রেডিমেট গার্মেন্টস, ভোগ্যপণ্য ও খাদ্য সামগ্রী তৈরি করে রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের রাজ্যগুলোর শিল্প হাব হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রকল্পে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে বহুমুখী শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গবর্নিং বোর্ডের দ্বিতীয় সভায় জমি অধিগ্রহণের অর্থ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের মাধ্যমে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) হতে সংস্থান করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন নামের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব প্রধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে সেগুলো হচ্ছে, ৪৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ, ৫৯ লাখ ২৪ হাজার ৬০৩ ঘন মিটার ভূমি উন্নয়ন, এক হাজার ৬৮০ বর্গমিটার অফিস ভবন, ডরমেটরি ভবন ও কাস্টমস অফিস নির্মাণ করা হবে।
×