আহমেদ হুমায়ুন, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জাটকা সরবরাহ ও বেচাকেনায় নিষেধাঙ্গা থাকার পরও চট্টগ্রামে অবাধে চলছে জাটকা আহরণ ও বিপণন। দিনের পাশাপাশি গভীর রাতে সমুদ্রে পাহারা, গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা- এত কিছুর পরও কিছুতে কিছু হচ্ছে না। জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদফতরের অভিযানেও থামছে না জাটকা নিধন। নগরীর বিভিন্ন মাছের বাজারে প্রকাশ্যে চলছে বেচাকেনা। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে এটি দিন দিন বাড়ছে। ইলিশ খাওয়ার ভ্রান্ত সংস্কৃতি থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানানো হলেও বিশেষজ্ঞদের এই আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ। তারা আইন অমান্য করে প্রকাশ্যে জাটকা কিনছেন।
সরকারী নিয়ম অনুয়ায়ী ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চির ছোট ইলিশ ধরা কিংবা বেচাকেনা করা দ-নীয় অপরাধ। কিন্তু এই আইন কিংবা শাস্তির কোন তোয়াক্কাই করছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বেশি লাভের আশায় বিক্রেতারা আইন অমান্য করে বাজারে বিক্রি করছেন। অন্যদিকে বড় ইলিশের তুলনায় দাম কম থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ জাটকা দিয়ে বৈশাখে পান্তা ইলিশের স্বাদ নিতে চান।
কয়েকজন ক্রেতাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা জানান, বিক্রেতারা যদি জাটকা ইলিশ বাজারে না আনেন তবে কেউই জাটকা পাবেন না, কিনতেও চাইবেন না। ফলে আগে বিক্রেতাদের সামলাতে হবে। নাহলে ইলিশ নিধন বন্ধ হবে না। এদিকে খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, যারা নদী থেকে মাছ ধরে বাজারে নিয়ে আসছেন, তারাই মূলত অপরাধী।
মৎস্য অধিদফতরের জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্পের জাটকা নিধন প্রতিরোধ কার্যক্রম ২০১৫-১৬ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২৩টি জেলা থেকে ১৮ দশমিক ৬৮১৫ মেট্রিক টন জাটকা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী মাস ফেব্রুয়ারিতে এ আটকের হার ৬৬ দশমিক ৩৫৩ মেট্রিক টন। সর্বশেষ মার্চ মাসে তা উন্নীত হয় ৮৯ দশমিক ৪২৪ মেট্রিক টনে।
সর্বশেষ সোমবার র্যাব-৭ অভিযান চালিয়ে নগরীর পাথরঘাটা থেকে তিন ট্রাক জাটকা ইলিশ আটক করেছে। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব ও জেলা মৎস্য অফিস যৌথভাবে ফিশারিঘাট এলাকায় অভিযান চালায়। ট্রাকে করে জাটকা ইলিশগুলো ফিশারিঘাট থেকে নেয়ার সময় তারা সেগুলো জব্ধ করে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রহুল আমিন অভিযান চালিয়ে প্রায় ২টন জাটকা জব্ধ করে।
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামে সরকারীভাবে অনুমোদন রয়েছে এমন ২৪৩টি ফিশিং ট্রলারের (বড় আকারের) বেশির ভাগই এখন ইলিশের আড়ালে জাটকা শিকার করছে। তবে এসব ফিশিং ট্রলারের বেশির ভাগের মালিকানায় রয়েছে বিভিন্ন প্রভাবশালী লোকজন। ফলে চাইলেও অনেক সময় নানামুখী চাপের কারণে সংশ্লিষ্ট ফিশিং ট্রলারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এমন পরিস্থিতিতে বেড়েই চলেছে জাটকা নিধন। যা ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনাকে হুমকিতে ফেলছে।
গত ১ নবেম্বর থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যরে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। যদিও এখন বাজারে ৯ থেকে ১১ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যরে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে পদ্মা নদীর নিচু অংশকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করায় এখানে মার্চ এপ্রিল মাসে সম্পূর্ণভাবে ইলিশ ধরা নিষেধ। তবে ওখানেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেক ফিশিং বোট ইলিশ ধরছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সামুদ্রিক মৎস্য অধিদফতরের পরিচালক নাসিরুদ্দিন মোঃ হুমায়ুন জানান, আমাদের চেকপোস্টগুলোতেও শক্ত নজরদারি রয়েছে। জাটকাপ্রবণ এলাকায় অভিযান চলছে। প্রতিদিন জরিমানাও করা হচ্ছে। তবু কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত চোখ এড়িয়ে জাটকা শিকার করা হচ্ছে। তবে জাটকা নিধন বন্ধে মৎস্য অধিদফতর তৎপরতা বৃদ্ধি করছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রভাতী দেব জানান, চট্টগ্রাম বেল্ট থেকে জাটকা বেশি ধরা পড়ছে না। বাজারে এখন যেসব জাটকা ধরা পড়ছে সেগুলো বরিশাল-ভোলাসহ অন্যান্য এলাকাগুলো থেকে আসছে। আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে জাটকা যাতে বিক্রি না হয় সেদিকে নজর রাখছি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: