ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিটিআরসি গাইডলাইন ও নির্দেশনার মাধ্যমে তরঙ্গ বরাদ্দ দিচ্ছে

রেডিও স্পেকট্রাম বরাদ্দে নীতিমালা না থাকায় ফোরজি সেবা মিলছে না

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১২ এপ্রিল ২০১৬

রেডিও স্পেকট্রাম বরাদ্দে নীতিমালা না থাকায় ফোরজি সেবা মিলছে না

ফিরোজ মান্না ॥ হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ রেডিও স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে গাইডলাইন ও নির্দেশনার মাধ্যমে রেডিও স্পেকট্রাম বরাদ্দ দিচ্ছে বিটিআরসি। রেডিও স্পেকট্রামের জন্য স্থায়ী কোন নীতিমালা এখন পর্যন্ত করা হয়নি। এ কারণে ফোরজি সেবাসহ অন্যান্য সেবা দিতে পারছে না অপারেটররা। নীতিমালা না থাকায় বিটিআরসি ফোরজি স্পেকট্রাম নিলাম এক বছরেও করতে পারেনি। গত বছরের এপ্রিলে রেডিও স্পেকট্রাম নিলামের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল। এখন বিটিআরসি বলছে, নানা জটিলতায় যথাসময়ে স্পেকট্রাম নিলাম করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী জুন জুলাইয়ে স্পেকট্রাম নিলামের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) সূত্র জানিয়েছে, বরাদ্দপ্রাপ্ত স্পেকট্রামের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। রেডিও স্পেকট্রাম অপরিকল্পিতভাবে বরাদ্দ দেয়ায় এখন বিটিআরসির হাতে স্পেকট্রামের ঘাটতি পড়েছে। স্পেকট্রাম ব্যবহারে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা না করায় সুযোগ থাকা পরেও ফোরজি প্রযুক্তি চালুও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিটিআরসি’র গাইডলাইনে ১৮০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম ব্যবহার করে ফোরজি চালুর বাস্তবতা উপেক্ষা করে শুধুমাত্র টুজির জন্য এই ব্যান্ড ব্যবহারের শর্ত দেয়া হয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে ১৮০০ ও ২১০০ মেগাহার্টজে স্পেকট্রাম নিলাম হওয়ার কথা ছিল। তখন বলা হয়েছিল, ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ২০ মেগাহার্টজের বেশি বরাদ্দ থাকার কারণে নিলামের গাইডলাইনের শর্ত অনুযায়ী গ্রামীণফোন প্রথম ধাপে নিলাম থেকে বাদ পড়েছে। সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর নিলাম থেকে বাদ পড়ায় বিষয়টি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এই জটিলতা এখনও নিরসন হয়নি। স্পেকট্রাম ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রযুক্তিবিদরা বলেন, বিটিআরসিকে মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেতে বাধ্য করার পর থেকে বিটিআরসির ভেতরে এক ধরনের অরাজকতা চলছে। যা প্রতিষ্ঠানের জন্য শুভকর কোন কিছু বয়ে আনবে না। স্পেকট্রাম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও টেলিকম শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এমন কাউকেও কোন সভায় ডাকা হয় না। নিজেরাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ফলে তাদের স্বচ্ছতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। মহামূল্যবান স্পেকট্রামের সুষ্ঠু ব্যবহার না করায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে টেলিকম শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিদেশী বিনিয়োগও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। বিটিআরসি জানিয়েছে, বিটিআরসি সর্বশেষ স্পেকট্রাম বরাদ্দের চিত্র অনুযায়ী বর্তমানে পাঁচটি জিএসএম মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে গ্রামীণফোনের জন্য ৯০০, ১৮০০ এবং ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে মোট ৩২ মেগাহার্টজ, বাংলালিংক ২০ মেগাহাটর্জ, রবির ১৯ দশমিক ৮ মেগাহার্টজ, এয়ারটেলের ২০ মেগাহার্টজ এবং টেলিটকের ২৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম বরাদ্দ রয়েছে। এই পাঁচটি মোবাইল ফোন অপারেটরের জন্য মোট বরাদ্দের বিবেচনায় গ্রামীণফোনের স্পেকট্রাম শেয়ার ২৭ শতাংশ, বাংলালিংকের ১৭ শতাংশ, রবির ১৭ শতাংশ, এয়ারটেলের ১৭ শতাংশ এবং টেলিটকের ২২ শতাংশ। গ্রামীণ ফোনের পরই সবচেয়ে বেশি স্পেকট্রাম শেয়ার টেলিটকের। মোট গ্রাহক সংখ্যা ধরেই স্পেকট্রাম বরাদ্দের হিসাব হয়। গ্রামীণফোন গ্রাহক সেবায় জন্য ব্যবহার করছে ১ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম, বাংলালিংকের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ৫ মেগাহার্টজ, রবির ১ দশমিক ৩ মেগাহার্টজ, এয়ারটেলের শূন্য দশমিক ৩৭ সেগাহার্টজ এবং টেলিটকের শুন্য দশমিক ১৫ মেগাহার্টজ। উল্লেখিত হিসাব অনুযায়ী টেলিটক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্পেকট্রাম বরাদ্দ নিয়েছে। যদিও টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা ১০ লাখের কিছু বেশি। গ্রাহক বিচারে ১ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম ব্যবহারের গড় সক্ষমতাও অর্জন করতে পারেনি টেলিটক। একইভাবে এয়ারটেলও বরাদ্দকৃত স্পেকট্রাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১ মেগাহার্টজের নিচে রয়েছে। স্পেকট্রাম বরাদ্দের ক্ষেত্রে এমন বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে ফোরজি নিলাম। যদিও বিশ্বজুড়ে স্পেকট্রাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রযুক্তি নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। একটি ব্যান্ডে স্পেকট্রাম বাস্তবতা ও চাহিদা অনুযায়ী টুজি, থ্রিজি কিংবা ফেরজি’র জ্যন ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশে নির্দিষ্ট ব্যান্ডের স্পেকট্রাম নির্দিষ্ট সেবার জন্য নির্ধারিত করা হচ্ছে। সর্বশেষ নিলামের ক্ষেত্রেও ১৮০০ মেগাহার্টজের স্পেকট্রাম শুধুমাত্র টুজির জন্য রাখা হয়েছে। যদিও ২০১৩ সালে ২১০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নিলামের সময় এই ব্যান্ডে ফোরজি চালুর সুবিধাও উš§ুক্ত রাখা হয়েছিল। বর্তমানে বাজারে হ্যান্ডসেট সব গ্রাহক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য পাওয়া ডিভাইসগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশই ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের জন্য উপযোগী। হ্যান্ডসেটসহ অন্যান্য ডিভাইসের দামও কম হওয়ার কারণে এই ব্যান্ডে ফোরজি এলটিই সেবা উম্মুক্ত রয়েছে বিশ্বের অনেক দেশে। অন্যদিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি মোবাইল ফোন অপারেটরের এক প্রযুক্তি কর্মকর্তা বলেন, ১৮০০ মেগাহার্টজে নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতিও সুলভে পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই ব্যান্ডর যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে পারবে অপারেটররা। ১৮০০ মেগাহার্টজে ফোরজি সেবা সেবা দেয়াও সম্ভব। কিন্তু আগামী কয়েক বছরেও ২১০০ কিংবা ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ফোরজি এলটিই দেয়া সম্ভব হবে না। কারণ এ দু’টি ব্যান্ডের জন্য প্রয়োজনীয় ‘ইকোসিস্টেম’ এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। ফলে বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্কে ফোরজি সেবা চালুর জন্য বর্তমানে ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের বিকল্প নেই। বিটিআরসি তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে অপারেটরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
×