ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগে মায়া দিগুইতোকে তলব

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১২ এপ্রিল ২০১৬

ফিলিপিন্সের বিচার বিভাগে মায়া দিগুইতোকে তলব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাল এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংকের জুপিটার শাখায় কিভাবে হিসাব খোলা হয়েছিল- সে বিষয়ে জবাব দিতে ওই শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মায়া দিগুইতোকে তলব করেছে দেশটির সর্বোচ্চ বিচার বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাচারের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্ত শুরু হবে। শুনানিতে সহকারী প্রসিকিউটর গিলিম্যারি প্যাকামেরা জিজ্ঞাসাবাদ করবেন মায়াকে। ফিলিপিন্সের মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষকেও (এএমএলসি) শুনানিতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে আজ দেশটির ব্লু-রিবন সিনেট কমিটির পঞ্চম শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। শুনানিতে চীন এবং ফিলিপিন্সের বড় বড় কোম্পানি এবং রাঘববোয়ালদের নামও বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া রিজার্ভ জালিয়াতির ঘটনায় চীনের অস্বীকৃতির বিষয়ে শুনানিতে আলোচনা হবে। এতে ফিলিপিন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পাশাপাশি সিআইডি’র ৩ সদস্য এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ২ কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে ফিলিপিন্সের আরসিবিসির জুপিটার শাখার চারটি এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাচার হয়। চার জনের জাল এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের জুপিটার শাখায় কিভাবে হিসাব খোলা হয়েছিল- সে বিষয়ে জবাব দিতে ওই শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতোকে তলব করেছে দেশটির সর্বোচ্চ বিচার বিভাগ। এর আগে দেগুইতোর বিরুদ্ধে মামলা করে আরসিবিসি ও দেশটির এ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল। ফিলিপিন্সের আরসিবিসির জুপিটার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাচারের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্ত শুরু করবে দেশটির বিচার বিভাগ। এ জন্য বিচার বিভাগের প্রাথমিক শুনানিতে মায়া দেগুইতোকে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুনানিতে সহকারী প্রসিকিউটর গিলিম্যারি প্যাকামেরা জিজ্ঞাসাবাদ করবেন মায়াকে। এছাড়াও মাইকেল ক্রুজ, জেসি ল্যাগরোসাস, এ্যালফ্রেড সান্তোস ও এনরিকো ভাসকুইজ- এই চারজনের জাল এ্যাকাউন্ট জুপিটার শাখায় কিভাবে খোলা হয়েছিল- সে বিষয়েও জবাব দিতে বলা হয়েছে মায়াকে। এছাড়া আজ মঙ্গলবার ফিলিপিন্সের সিনেট ব্লু রিবন কমিটির পঞ্চম শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এই শুনানিতে রিজার্ভ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকে তলব করেছে সিনেট কমিটি। এরা হচ্ছেন রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) জুপিটার শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দিগুইতো, রেমিটেন্স লেনদেন কোম্পানি ফিলরিমের প্রেসিডেন্ট সøুইড বাতিস্তা, ক্যাসিনো মালিক কিম অং, ব্যবসায়ী উইক্যাং জু, চীনা দুই ব্যবসায়ী সুহুয়া গাও এবং ডিং জিজ। এর আগেও প্রথম চারজন শুনানিতে অংশ নেন। ওই শুনানিতে ক্যাসিনো মালিক কিম অংয়ের স্বীকারোক্তিতে শেষোক্ত দুই ব্যক্তির নাম উঠে আসে। পরে সিনেট কমিটি তাদেরও শুনানিতে ডাকে। ফিলিপিন্স থেকে হংকংয়ে পাচার হওয়ার পরও ৩৪ মিলিয়ন ডলার সেদেশে রয়ে গেছে বলে জানান কিম অং। আজ মঙ্গলবার ফিলিপিন্সের সিনেট ব্লু রিবন কমিটির পঞ্চম শুনানিতে এ বিষয়ে আরও তথ্য দিবেন চীনা বংশোদ্ভূত ফিলিপিনো ব্যবসায়ী কিম অংয়ের। দেশটির নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, তার জবানবন্দীতে দেশটির ‘রাঘববোয়াল’দের নাম বেরিয়ে আসতে পারে। এতে ফিলিপিন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের ২ কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। তারা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যুগ্ম পরিচালক আবদুর রব ও বাজেটিং বিভাগের সহকারী পরিচালক জাকের হোসেন। এছাড়া দেশটিতে অবস্থানরত সিআইডি’র ৩ কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। সিআইডি দলে রয়েছেন উপ-মহাপরিদর্শক সাইফুল আলম, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) মির্জা আবদুল্লাহ হেল বাকী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হানুল কবীর। টাকা উদ্ধার নিয়ে সংশয় ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৪৬ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে ফিলিপিনো ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অং। বর্তমানে সেই অর্থের গন্তব্য ফিলিপিন্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে। এ অর্থ এখন ফেরত আনা অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। কবে ফেরত আসবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। ফিলিপিনো ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অংয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, আইনী জটিলতার পর এই অর্থ ছাড় করা হবে। ইনকোয়ারারের এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, আইনী জটিলতা পার করে টাকা ফেরত আনা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনের বেড়াজালে পড়েছে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি)। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরি হয়ে ফিলিপাইনের ওই ব্যাংকে গেছে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ওই অর্থ তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। তারা ওই অর্থ লেনদেন করার ক্ষেত্রে কোন নিয়মকানুনই মানেনি। ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যাংকটি এখন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।
×