ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিকাল পাঁচটার পর বর্ষবরণের কনসার্টে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১২ এপ্রিল ২০১৬

বিকাল পাঁচটার পর বর্ষবরণের কনসার্টে নিষেধাজ্ঞা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পহেলা বৈশাখে বিকেল পাঁচটার পর উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের কনসার্ট বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। সেই সঙ্গে নববর্ষের সকালে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখে মুখোশ পরিধান করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখের আগের দিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৪ এপ্রিল রাত নয়টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা ও শাহবাগ এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারবিহীন যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে এমন বিধি নিষেধ জারি করা হলেও পহেলা বৈশাখকে ঘিরে কোন নাশকতার আশঙ্কা নেই। পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাবের হেলিকপ্টার আকাশে টহল দেবে। এ ছাড়াও যে কোন ধরনের নাশকতা এড়াতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি আরও বলেন, নগরবাসীর জননিরাপত্তার স্বার্থে বিকেল পাঁচটার পর উন্মুক্ত স্থানে কোন কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা নৃত্যানুষ্ঠান করা যাবে না। এ ধরনের অনুষ্ঠান বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করতে হবে। তবে ইনডোরে বা সুরক্ষিত স্থানে রাতে বা সন্ধ্যার পরও বৈশাখী অনুষ্ঠান করা যাবে। রাজধানীতে বর্ষবরণ আয়োজনের মূল কেন্দ্র সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের সব ফটক বিকেল সাড়ে চারটার পর বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে শহরের রাস্তায় বেড়াতে বা আনন্দ উদযাপনে কোন বাধা নেই। এবার নিরাপত্তার স্বার্থে ১৩ এপ্রিল ভোর ছয়টা থেকে ১৪ এপ্রিল রাত নয়টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি ছাড়া শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টিকারযুক্ত গাড়ি রমনা-শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলাচল করতে পারবে না। টিএসসিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরের অন্যান্য জায়গায়, সন্ধ্যার পরে হেঁটে বেড়াতে, গল্প করতে, বৈশাখের রঙ-বেরঙের পোশাক পরে আনন্দ উৎসব করা যাবে। তাতে পুলিশ পরিপূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তবে মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখে মুখোশ পরা যাবে না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার তৈরি ঐতিহ্যবাহী মুখোশ হাতে রাখা যাবে। পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য বিশেষ টি-শার্ট পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দেয়া যাবে না। উত্ত্যক্তকারীদের ঠেকাতে এবার পুলিশের বিশেষ দল মাঠে থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রমনা এলাকায় বর্ষবরণের উৎসব পর্যবেক্ষণ করা হবে। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি, রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থাকবে সিসিটিভির আওতায়। রমনা পার্কে তিনটি, সোহরাওয়ার্দী ও শাহবাগে একটি করে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ হবে। পকেটমার, ছিনতাইকারী ঠেকাতে থাকবে পোশাকধারী পুলিশের বিশেষ দল ও গোয়েন্দা পুলিশ। সোয়াট টিম থাকবে মঙ্গল শোভাযাত্রার নিরাপত্তায়। রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য আলাদা আলাদা ফটক ব্যবহার করতে হবে। শাহবাগ, রমনা, সোহরাওয়ার্দীর পুরো এলাকা পুলিশের ‘সেন্ট্রাল মাইকিং সিস্টেমে’ থাকবে। সেখান থেকে উৎসবে আসা মানুষকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা দেয়া হবে। পাশাপাশি ওই এলাকার ফুটপাথ এবং রাস্তা হকারমুক্ত রাখা হবে। থাকবে পুলিশের ‘লস্ট এ্যান্ড ফাউন্ড’ সেন্টার। কেউ হারিয়ে গেলে সেখানে অভিযোগ জানানো যাবে। বিকট শব্দের ভুভুজেলা বাঁশিও নিষিদ্ধ থাকবে। শাহবাগ, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী, রমনা এলাকায় বিনামূল্যে মিনারেল ওয়াটার সরবরাহ করবে ডিএমপি। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আটটি স্থানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। এবার নগরবাসীর বিনোদনের জন্য প্রথমবারের মতো হাতিরঝিলে নৌকা বাইচের আয়োজন থাকছে। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আকাশে টহল দেবে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টার থেকে শক্তিশালী বাইনুক্যুলার দিয়ে নিচের এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হবে। যে কোন ধরনের সন্দেহভাজন কিছুর অস্তিত্ব জানামাত্র তা নিচে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হবে। সেখানে পুলিশ ও র‌্যাবসহ অন্যান্য ইউনিট তাৎক্ষণিক সাঁড়াশি অভিযান চালাবে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে অসংখ্য সিসিটিভি। নিরাপত্তায় থাকছে সোয়াট, পুলিশ ও র‌্যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, রাবের ডগ স্কোয়াডসহ অসংখ্য সাদা পোশাকের গোয়েন্দা দল। ওয়াচ টাওয়ার থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী বাইনুক্যুলারযুক্ত অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল নিয়ে নজরদারি করবে র‌্যাব। এসব রাইফেলের বাইনুক্যুলার দিয়ে বহুদূরের জিনিস দেখা যাবে। সন্দেহজনক বস্তুতে আঘাত করাও যাবে। পুরো এলাকায় থাকবে অসংখ্য ব্যারিকেড আর চেকপোস্ট। সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও বস্তুতে তল্লাশি চালানো হবে। শিশু কিশোরদের জামার পকেটে প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন নম্বর বা যোগাযোগের ঠিকানা লিখে দিয়ে রাখতে অনুষ্ঠানস্থলে গমনকারীদের অনুরোধ করা হয়েছে। যাতে কেউ হারিয়ে গেলে তাকে পাওয়া সহজ হয়। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে ইলিশ কিংবা যে কোন ধরনের খাবার গ্রহণের পূর্বে খাবারের মান পরীক্ষার পাশাপাশি মূল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে সবাইকে। অনুষ্ঠানস্থলে সন্দেহজনক কোন সরঞ্জাম, বস্তু, ব্যাগ, অস্ত্র, ছুরি, কাচি, পটকা, দাহ্য পদার্থ, ক্ষয়কারক তরল, ব্লেড, নেল কাটার, দিয়াশলাই, গ্যাসলাইটার বহন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যানবাহন ডাইভারশন ॥ সানারগাঁওয়ের উত্তর দিক হতে আগত সকল প্রকার যাত্রীবাহী বাস গুলিস্তান কিংবা সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী যাবে সে সব যাত্রীবাহী বাস হোটেল সোনারগাঁও ক্রসিং থেকে বামে মোড় নিয়ে রেইনবো ক্রসিং হয়ে মগবাজার দিয়ে সোজা মালিবাগ মোড় হয়ে গন্তব্যে যাবে অথবা অন্যান্য পরিবহন হোটেল সোনারগাঁও থেকে সোজা এসে বাংলামটর ক্রসিং-এ বামে মোড় নিয়ে মগবাজার সোজা গিয়ে মৌচাক-মালিবাগ হয়ে গন্তব্যে যাবে এবং আসবে। মিরপুর রোডের উত্তর দিক হতে যে সব গাড়ি মতিঝিল-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-শ্যামপুর যাবে সে সকল রুটের গাড়ি মোহাম্মদপুর-সাইন্সল্যাব-নিউমার্কেট-নীলক্ষেত-বেবী আইসক্রীম মোড়-ঢাকেশ্বরী মন্দির-বক্শীবাজার-চাঁনখারপুল দিয়ে গুলিস্তান হয়ে গন্তব্যে যাবে এবং আসবে। টঙ্গী-এয়ারপোর্ট হতে যে সব রুটের গাড়ি গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ যাতায়াত করে সে সব রুটের গাড়ি টঙ্গী-বিমানবন্দর-প্রগতি সরণি বামে মোড় বিশ্বরোড ধরে মালিবাগ রেলক্রসিং বামে মোড় খিলগাঁও ফ্লাইওভার ধরে গন্তব্যে যাবে এবং আসবে। ধামরাই, মানিকগঞ্জ, গাবতলী হতে যে সব রুটের গাড়ি গুলিস্তান, ফুলবাড়ীয়া যাতায়াত করে সে সব রুটের গাড়ি মানিকগঞ্জ-ধামরাই-গাবতলী-মিরপুর রোড ধরে সাইন্সল্যাব সোজা নিউমার্কেট-নীলক্ষেত ক্রসিং সোজা আজিমপুর বেবী আইসক্রীম মোড় সোজা গোরশাহ্ মাজার বামে মোড়-ঢাকেশ্বরী মন্দির-বক্শীবাজার-চাঁনখারপুল হয়ে গন্তব্যে যাবে এবং আসবে। যে সব রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ থাকবে ॥ বাংলামটর-পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড ও টেলিযোগাযোগ ভবন ক্রসিং-রূপসীবাংলা ক্রসিং; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্রসিং-মৎস্য ভবন-কদমফুল ক্রসিং-হাইকোর্ট ক্রসিং পর্যন্ত; রূপসীবাংলা ক্রসিং-মিন্টো রোড-বেইলী রোড-হেয়ার রোড-কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং বামে মোড়-চার্চ ক্রসিং মৎস্য ভবন ক্রসিং পর্যন্ত; নীলক্ষেত ক্রসিং হতে টিএসসি ক্রসিং; পলাশী মোড় হতে শহীদ মিনার হয়ে দোয়েল চত্বর ক্রসিং; বক্শীবাজার হতে জগন্নাথ হল হয়ে টিএসসি ক্রসিং। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আগত যানসমূহ যে সকল জায়গায় পার্কিং করবে ॥ নেভী গ্যাপ হতে পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড (উত্তর দিক হতে আগত গাড়িসমূহ); * জিরো পয়েন্ট হতে আব্দুল গনি রোড (পূর্ব দিক হতে আগত গাড়িসমূহ); মৎস্য ভবন হতে সেগুনবাগিচা/ কার্পেট গলি (পূর্ব দিক হতে আগত গাড়িসমূহ); জগন্নাথ হল হতে পলাশী (দক্ষিণ/পশ্চিম দিক হতে আগত গাড়িসমূহ); কার্জন হল থেকে আব্দুল গনি রোড (দক্ষিণ দিক হতে আগত গাড়িসমূহ); কার্জন হল থেকে ফুলবাড়ীয়া (দক্ষিণ দিক হতে আগত গাড়িসমূহ); বেইলী রোড (ভিআইপি গাড়ি পার্কিং); কাঁটাবন থেকে পলাশী (পশ্চিম দিক হতে আগত গাড়িসমূহ); মিন্টো রোড (মিডিয়া গাড়ি পার্কিং)। ডিএমপির সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি এ্যান্ড প্রসিকিউশন) দিদার আহমেদ, শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান (ক্রাইম এ্যান্ড অপস), মনিরুল ইসলাম (কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমস ইউনিট), যুগ্ম কমিশনার মীর রেজাউল আলম (অপস্) ও কৃষ্ণপদ রায় (ক্রাইম ডিভিশন)। প্রসঙ্গত, পাঁচশ’ বছর আগে আকবরী আমলে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য এই বৈশাখে বর্ষ গণনা পদ্ধতির প্রবর্তন করা হয়েছিল। কালক্রমে ওই বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ বাঙালীর সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। গত চার দশক ধরে রাজধানীতে বর্ষবরণের মূল আয়োজন হয়ে উঠেছে রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী অনুষ্ঠান। আর চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা এই উৎসবের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ।
×