ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত কেন্দ্রের পক্ষে চট্টগ্রামে মানববন্ধন

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বাঁশখালীতে স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১২ এপ্রিল ২০১৬

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বাঁশখালীতে স্বস্তি

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির ॥ বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে এবং এখনও নির্মাণ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের দিনাজপুরেও রয়েছে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র। সেখানে পরিবেশ দূষণের কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু প্রথমবারের মতো বেসরকারী পর্যায়ে এ ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই বিরোধী একটি রাজনৈতিক দল ও স্বার্থান্বেষী একাধিক চক্রের বিরোধিতা ও নানা বক্তব্য রেখে হৈচৈয়ের বিষয়টি উন্নয়নের পক্ষের সকল মহলকে ব্যাপকভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। বেসরকারী পর্যায়ে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে সরকারের উন্নয়নকে যেখানে এগিয়ে নিচ্ছে, সেখানে স্বার্থান্বেষী মহলগুলোর এ ধরনের কথিত আন্দোলন ও বিরোধিতা প্রকারান্তরে দেশের জন্যই বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনবে বলে বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সূত্রের অভিমত। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় বেসরকারী পর্যায়ে দেশী-বিদেশী জয়েন্ট ভেঞ্চারের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগে পরিবেশবান্ধব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের শুরুতেই উদ্যোক্তারা যেভাবে হোঁচট খেয়েছে তা সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগকারীদের মনে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। আর এ কারণেই খোদ সরকারপ্রধান অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন, উদ্ভট কথা বলে বাঁশখালীতে মানুষের জীবন নেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে গত সোমবার এলাকার দুই গ্রুপ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে চারজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, যা ছিল সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। এ ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি তাঁর জ্বালানি ও বিদ্যুত উপদেষ্টা এবং বিদ্যুত সচিব এ বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য দিয়েছেন গত রবিবার। এর পর থেকে এলাকায় নব্য গজিয়ে ওঠা আন্দোলনকারীসহ স্বার্থান্বেষী মহলগুলোর কার্যক্রমে পিছপা হওয়ার পরিস্থিতি লক্ষণীয়। অপরদিকে, দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে মহানগরীতে মানববন্ধন হয়েছে। এ মানববন্ধনে বক্তব্য রেখেছেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ। এছাড়া বাঁশখালীর পরিবেশ এখন শান্ত বলা চলে। তবে গন্ডামারা বাঁচাও আন্দোলনের নামে ২০১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে রবিবার রাতে। ধারণা করা হচ্ছে, এ প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে পিছু হটার রাস্তা পরিষ্কার করা। এদিকে বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের বিরোধিতা এবং এ নিয়ে রাজনীতির নেপথ্যে স্বার্থান্বেষী একটি চক্রের আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপির কর্তৃত্ব ফিরে পাওয়া ও জামায়াতের ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইটিও জড়িয়ে আছে। বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জমি সংগ্রহের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপকে কয়েক বছর ধরে সহযোগিতা দিয়েছিল সকলেই। কিন্তু প্রকল্পের কাজ এমন সময়েই শুরু হয় যখন এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন একেবারেই সন্নিকটে। নির্বাচনে জেতার কৌশল হিসেবে পরিবেশ বিনষ্টের গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে এক ধরনের সেন্টিমেন্ট সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে চেয়েছে দুই পক্ষই। কিন্তু এ আন্দোলনে বিএনপি নেতা লেয়াকত আলী এসে পড়েন সামনে। আর অবস্থা বুঝে শেষ সময়ে এসে কেটে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। এই দলটি এখন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নয়, বরং প্রকল্পটিকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে বাস্তবায়িত করার দাবি তুলেছে। পরিস্থিতি মূল্যায়নে এখন বিষয়টি পরিষ্কার যে, ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াতের ভোটের সমীকরণের কারণেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ঝরে পড়েছে চারটি তাজা প্রাণ। প্রকল্প এলাকায় তাদের কোন জমিও নেই, তারা ছিলেন অত্যন্ত নিরীহ বর্গাচাষী। এদিকে, কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এলাকার জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। বিশেষ করে পরিবেশের বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে উল্লেখ করায় আশ্বস্ত হয়েছেন এলাকার মানুষ। তাছাড়া কর্মসূচী স্থগিত করায় আন্দোলনের নেতাদের ঘিরেও এক ধরনের সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। ‘বসতভিটা রক্ষা কমিটি’র আহ্বায়ক বিএনপি নেতা লেয়াকত আলী বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি দু’বার নির্বাচিত হয়েছিলেন এই পদে। বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফউল্লাহ উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির। এই ইউনিয়নে বিএনপি ও জামায়াত পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী। জামায়াতে ইসলামী ধরে রাখতে চায় তাদের বর্তমান চেয়ারম্যান পদ। অপরদিকে লেয়াকত আলী ফিরে পেতে চান তার হারানো ক্ষমতা। আর ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার কৌশলে তিনি পরিবেশের প্রসঙ্গ তুলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের বিরোধিতায় নেমেছেন। মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি ও সেই ক্ষোভকে পুঁজি করে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হতে চান চেয়ারম্যান পদে। যেহেতু জামায়াতই এ আসনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী সেহেতু এ দলটিও রয়েছে জটিল হিসাব-নিকাশে। কথিত আন্দোলন-সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক বিএনপি নেতা লেয়াকত আলী যদি কুপোকাত হয়ে যায় তাহলে জামায়াতের সুবিধাই। সবকিছু বুঝেশুনে জামায়াতের অবস্থান যে এখন আর কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নয়, তা খুবই পরিষ্কার হয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামীর একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল গত রবিবার বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা পরিদর্শন এবং পরিবেশ রক্ষা কমিটির ব্যানারে আয়োজিত একটি সমাবেশে অংশ নিয়েছে। ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম, কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মুমিনুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির জাফর সাদেক, বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা বদরুল হক, গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ আরিফউল্লাহ, জামায়াত নেতা ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল মুস্তফা প্রমুখ। সেখানে সমাবেশে জামায়াত নেতারা বলেন, ‘আমরা দেশে যে কোন ধরনের উন্নয়নের পক্ষে। একই ভাবে বাঁশখালীর গন্ডামারায় প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনেরও বিপক্ষে নই। আমরা পরিবেশবান্ধব ও ক্ষতিমুক্ত উন্নয়ন প্রকল্প চাই। এলাকাবাসীর স্বার্থহানিকর কোনকিছু না হওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে হবে।’ জামায়াত নেতা এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা জহিরুল ইসলাম বলেন, দেশের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আমরা উন্নয়নের পক্ষে। তবে আমাদের দাবি, সে উন্নয়ন প্রকল্প পরিবেশবান্ধব হতে হবে। জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দের এহেন বক্তব্যেই পরিষ্কার ধারণা করা যায় যে, গন্ডামারায় যা ঘটেছিল তা মূলত এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নানা ধরনের সমীকরণ ও ল্যাঙ মারামারির জের। বিস্ফোরণের মতো একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ায় মধ্য দিয়ে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের বিরোধিতাকারীদের নেতা হিসেবে সামনে এসেছেন লেয়াকত। তিনি চান জামায়াতকে হটিয়ে পুনরায় চেয়ারম্যান হতে। অবস্থার প্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামীও ব্যস্ত ভোটের সমীকরণে। লেয়াকতকে ছেঁটে ফেলতে পারলে জামায়াতের পথ পরিষ্কার হয়। সেই হিসাব থেকেই জামায়াত এখন সরকারের এই উন্নয়নমূলক প্রকল্পের পক্ষে দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, জামায়াতে ইসলামী স্থানীয়ভাবে তলে তলে সরকারদলীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন এবং বোঝাপড়ায় উপনীত হওয়ার চেষ্টা করছে বলেও চাউর রয়েছে। বাঁশখালী থেকে জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা জোবাইর চৌধুরী জানান, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর এলাকার সাধারণ জনগণের মধ্যে দ্রুত স্বস্তি লক্ষণীয়ভাবে ফিরে এসেছে। পাশাপাশি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এই বিদ্যুত প্রকল্প পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে কতটুকু ক্ষতিকারক তা পরীক্ষায় পরিবেশ বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ টিম এলাকায় পাঠানোর দাবি উঠেছে। অপরদিকে সংঘর্ষের অনেকটাই ইন্ধন যুগিয়েছে সরকারবিরোধী সংগঠন নিয়ন্ত্রিত অনলাইন ও ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি। এই অনলাইন ও ফেসবুকগুলো এখনও বিভ্রান্তিকর স্ট্যাটাস অব্যাহত রেখেছে। সব মিলিয়ে এলাকায় এখন শান্ত পরিবেশই বিরাজ করছে। অন্যদিকে সোমবারের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের হলেও এখনও পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে নয়জন ছাড়া অন্য কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে গ্রেফতার অভিযান চলছে দাবি করে সোমবার থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার জনকণ্ঠকে জানান, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পুলিশ কৌশলে এগোচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ পার পাবে না। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লেয়াকতের লালসার শিকার নিরীহ লোক ॥ চলতি বছরের জুনে অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনকে টার্গেট করে বিএনপি নেতা লেয়াকত সাধারণ জনগণকে তার পক্ষে আনার অপচেষ্টার খেলা খেলেছে মাত্র। আগামীতে এলাকার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে অত্যন্ত কৌশলে বিএনপির এই লেয়াকত পরিবেশের ধুয়া তুলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের বিপক্ষে ভুল বুঝিয়ে তাদের মাঠে নামিয়েছিল। জনগণকে ভুল বোঝাতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দফায় দফায় ভিডিওচিত্রও দেখানো হয়, যে ভিডিওচিত্র ছিল পরিকল্পিতভাবে পরিবেশবিরোধী হিসেবে তৈরি। এটা দেখে সাধারণ মানুষের মনে বিদ্যুত কেন্দ্রবিরোধী ক্ষোভের জন্ম হয়। আর এতে দ্রুত ইন্ধন যোগায় জামায়াত-বিএনপির সমর্থকগোষ্ঠী। নেতারা ছিলেন নেপথ্যে। আর কর্মী-সমর্থকরা ছিলেন প্রকাশ্যে। এভাবে বাঁশখালীতে এ বিদ্যুত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দু’দফার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অন্য কয়েকটি সূত্রের মতে, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের উর্ধতন নেতৃবৃন্দের পরামর্শে বাঁশখালীতে এ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে বাধাদান বিষয়টি গতি পায়। সব মিলিয়ে বিএনপি নেতা লেয়াকতের হীনস্বার্থের কাজে ব্যবহৃত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে চারটি নিরীহ প্রাণ। এলাকাবাসী আরও জানান, আগামী নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবে জেনে সে ভিন্ন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে বাঁশখালীর গন্ডামারায় বসতভিটা রক্ষা কমিটির নামে জনগণকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করার চেষ্টা করে। এস আলমের কর্ণধার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এলে লেয়াকত আলী তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ইতোপূর্বে আক্রমণের চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ কিছু সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যকে গ্রেফতার করলে গত ৪ এপ্রিল প্রতিবাদ সভার নামে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য গুলি করলে পুলিশও আত্মরক্ষার্থে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা, লেয়াকত আলীর সন্ত্রাসী চক্র ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। স্থানীয় এই বিএনপি নেতার আন্দোলন-সংগ্রামের নামে মূল উদ্দেশ্য ছিল আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজেকে জয়ী করা। গন্ডামারা ইউনিয়নটি নয় ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে ৩নং ওয়ার্ড গন্ডামারা এলাকায় সীমাবদ্ধ। ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড অবস্থিত বড়ঘোনা এলাকায়। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্পটি মূলত বড়ঘোনার ৪নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। এখান থেকেই কাজ শুরু। এখনও পর্যন্ত গন্ডামারার ওই তিনটি ওয়ার্ডে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুই হয়নি। বড়ঘোনাবাসীর অধিকাংশের প্রশ্নÑ আমাদের এলাকায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, এতে গন্ডামারাবাসীর পক্ষে এত হৈচৈ কেন? উল্লেখ্য, এত বিপুল অর্থ ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার চিত্রই পাল্টে যাবে। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহে যেখানে এ জাতীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেখানে আমাদের মতো গরিব দেশে পরিবেশ রক্ষার নামে এত হৈচৈ যারা করছে তাদের আসল স্বার্থ ভিন্ন এবং গোপনে এরা তাদের স্বার্থ হাসিলে তৎপর। বাঁশখালীর এ ঘটনার পর বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের পক্ষে যারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন এবং নানা ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, ভবিষ্যতে তারা এলাকাবাসীর দরদি হয়ে আদৌ আর যান কি-না, গেলেও তা লোভ দেখানো কি-না তা নিয়ে এলাকার মানুষের মুখে নানা কথা আলোচিত হচ্ছে। সোমবার প্রকল্প সহকারী বাহাদুর আলম হিরণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, এলাকাবাসীর মতামত গ্রহণ করে এস আলম গ্রুপ বাঁশখালীতে কয়লা বিদ্যুত নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল। লেয়াকত আলী জনগণকে ভুল বুঝিয়ে তার স্বার্থ হাসিলের জন্য আন্দোলনে নামিয়েছিল। সাধারণ জনগণ এখন বুঝতে শুরু করেছে। এই নেতাকে প্রতিহত করার ঘোষণাও দিয়েছে এলাকাবাসী। এ ঘটনার অন্যতম উস্কানিদাতা হিসেবে তাকে অচিরেই আইনের আওতায় আনা উচিত বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন তারা। উল্লেখ্য, ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জয়েন্ট ভেঞ্চারে ১৩২০ মেগাওয়াটসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক দুটি বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ হাতে নিয়েছে দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ও চায়নার দুটি কোম্পানি। মহানগরীতে মানববন্ধন ॥ এদিকে বাঁশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের দাবিতে সোমবার নগরীর প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোক্তার হোসেন, মনসুর আলম, আসিফ বক্তব্য রাখেন। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার। এই সরকার উন্নয়নের রোল মডেল। সরকার চায় বিদ্যুত সঙ্কট নিরসন করতে। আর এজন্য বিভিন্ন ধরনের প্রদক্ষেপ নিতে হয়। আমরা মনে করেছিলাম বাঁশখালীতে বিদ্যুত কেন্দ্র প্রকল্পটি হলে বিদ্যুত সঙ্কট নিরসন হবে। কিন্তু কিছু মানুষকে ভুল বুঝিয়ে প্রকল্পের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে। আমরা চাই বাঁশখালীতে প্রকল্পটি হোক। তাহলে আমরা অন্ধকার থেকে আলোতে আসতে পারব। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা প্রকল্প এলাকার আশপাশের লোকজনকে বুঝিয়ে সংঘর্ষে যে ক্ষতি হয়েছে আপোসের মাধ্যমে তা সুরাহা করবেন। আমরা চট্টগ্রামে বিদ্যুত প্রকল্প হোক সেটি চাই।
×