ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে টানাটানি

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ১২ এপ্রিল ২০১৬

৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে টানাটানি

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আড়াই মাসে ৫৯ শতাংশ বাস্তবায়নের ঝুঁকি থাকলেও শেষ সময়ে তিন হাজার কোটি টাকার বিপরীতে পাঁচগুণ বেশি চাহিদা দিয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (আরএডিপি) অনুমোদনের সময় এনইসি বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া অঙ্কের চেয়ে তিন হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে সেই টাকার ভাগ নিতে উঠেপড়ে লেগেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এর চাহিদা ও বরাদ্দের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব তারিক-উল-ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু চাহিদা দিলে তো হবে না, অর্থবছরের বাকি আছে মাত্র আড়াই মাস। এর মধ্যে ব্যয় করার সামর্থ্যও তো থাকতে হবে। তাই আমরা যেটা দেখছি সেটা হলো- যেগুলোর মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত চাহিদা দিয়েছে সেগুলোর গত অর্থবছরের অর্থ ব্যয়ের অবস্থা কী ছিল এবং চলতি অর্থবছরের গত কয়েক মাসে তাদের এডিপি বাস্তবায়ন হার কেমন সেটি দেখে তার পরই বরাদ্দ দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন কাজ চলছে শীঘ্রই বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে মূল (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দের বাইরে) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) ছিল ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নয় হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার ৮৮ হাজার কোটি টাকা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনকে। সে অনুযায়ী বরাদ্দের খসড়া চূড়ান্ত করে গত ৫ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় উপস্থাপন করা হয়েছিল। সেখানে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অতিরিক্ত চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা অতিরিক্ত তিন হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে দেন। ফলে মোট ৯১ হাজার কোটি টাকার মূল সংশোধিত এডিপি অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে পরিকল্পনা কমিশন থেকে এই তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে গিয়ে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ হিসাবে চলতি অর্থবছরের নয় মাসে অর্থাৎ (জুলাই-মার্চ) এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৪১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের এই সময়ে ব্যয় হয়েছে মোট ৪১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ৩৬ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার অনেক বড়, তাই বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শতাংশ কম মনে হচ্ছে। কিন্তু অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে। এডিপি বাস্তবায়নের এ অবস্থা থাকলেও তিন হাজার কোটি টাকা থেকে ভাগ পেতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো অতিরিক্ত চাহিদা দিয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সাত হাজার ১২৪ কোটি টাকা, এর পরই রয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তিন হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, ধর্ম মন্ত্রণালয় ৮৪ কোটি, মক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪৯ কোটি, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ২০০ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ৪৬০ কোটি, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ ১৮২ কোটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ ৪৭৬ কোটি, স্বাস্থ্য ৩০৩ কোটি, যুব ও ক্রীড়া ১০০ কোটি, বস্ত্র ও পাট তিন কোটি ৭২ লাখ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১২৫ কোটি, পানিসম্পদ ৪০০ কোটি, তথ্য পাঁচ কোটি, সড়ক দুই কোটি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ২০০ কোটি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৮১ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি জানায়, চলতি অর্থবছরের নয় মাস (জুলাই-মার্চ) পর্যন্ত যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে সেগুলোর এডিপি বাস্তবায়ন হার হচ্ছে- ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ৭১ শতাংশ, জ্বালানি ৩১ শতাংশ, পানিসম্পদ ৩২ শতাংশ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত ৫৮ শতাংশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ ৭৭ শতাংশ, নৌ-পরিবহন ৪৫ শতাংশ, তথ্য ৫২ শতাংশ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ৫২ শতাংশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪৯ শতাংশ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪৫ শতাংশ, যুব ও ক্রীড়া ৩৪ শতাংশ, বস্ত্র ও পাট ৪৩ শতাংশ, রেলপথ ৩২ শতাংশ, সড়ক ৫২ শতাংশ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৪৫ শতাংশ।
×