ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংশোধন আলয়

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১২ এপ্রিল ২০১৬

সংশোধন আলয়

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এখন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে। ১৭৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারটি এখন ইতিহাসের পাতায়। রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্থানান্তরিত হলো ২২৮ বছরের ঐতিহ্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। ৪ হাজার ৫৯০ বন্দী ধারণক্ষমতার এই কারাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৯৪ দশমিক ৪১ একর জমির ওপর। প্রধান সড়ক থেকে কারাগারের প্রধান ফটক প্রায় দু’শ’ গজ ভেতরে স্থাপিত হয়েছে। ফটকের বাম পাশে রিজার্ভ গার্ড হাউস। এর বামে বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাত ভবন। পাশে রয়েছে জেলারের অফিস কক্ষ। প্রধান ফটকের ডান দিকে পদ্মা, দক্ষিণে যমুনা ও তারপর মেঘনা। এই ভবনগুলোয় হাজতিদের রাখা হবে। ভবনগুলোর প্রতি তলায় রয়েছে ৪০টি করে কক্ষ। প্রতিকক্ষে রাখা হবে ১৩ জন করে বন্দী। প্রতিকক্ষে ৪টি ফ্যান থাকছে। পাশেই বাথরুম। চার শ’ দুর্ধর্ষ আসামির জন্য চারটি চারতলা ভবন বনফুল, বকুল, শাপলা ও সূর্যমুখী ডেঞ্জার সেল। ১৬ জন ডিভিশনপ্রাপ্ত ভিআইপি বন্দীর জন্য ১৬টি বিশেষ কারাকক্ষ রয়েছে। উত্তরে সুরমাতে ঠাঁই হবে কিশোর অপরাধীদের। হাজতিদের রাখা হবে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, করতোয়া ও মণিহারে। কারাগারের দক্ষিণ অংশের সীমানা প্রাচীরের কাছে স্থাপিত হয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। কারাভবন ঘিরে আছে ১৮ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর। তার ওপরে দুই ফুট বৈদ্যুতিক তারের সেন্সর। কারাভ্যন্তরে থাকছে কারাস্কুল ও লাইব্রেরী। কারাগারের চারপাশে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু চারটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। ৪০০ কারারক্ষীর থাকার জন্য রয়েছে ৯৬ কক্ষের কারা ব্যারাক দুর্জয়। সবমিলিয়ে এটি একটি আন্তর্জাতিকমানের কারাগার। এখানে মানবাধিকারের সব ধরনের সহযোগিতা ও সেবা বিদ্যমান রয়েছে। বলা হচ্ছে এটি কেবল দেশের সবচেয়ে আধুনিক নয়, এশিয়ার মধ্যেও এ কারাগারটি অন্যতম আধুনিক কারাগার। কারাগারটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে। কারাগারটি নির্মাণ এবং স্থানান্তর সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হিসাবেই বিবেচিত হলো। কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরের সংবাদটি সবার জন্য একটি সুখবর তাতে কোন সন্দেহ নেই। এতদিন এটি পুরান ঢাকার একটি ঘিঞ্জি এলাকায় ছিল। ফলে এ কারাগারকে ঘিরে নিরাপত্তাসহ বিবিধ সমস্যা ছিল। এখানে বন্দী ধারণক্ষমতাও ছিল খুবই কম। ছিল সুযোগ-সুবিধার অভাব। কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারটি সেদিক থেকে ভিন্নতর। দেশের কারাগারগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, সেগুলোতে বিরাজ করছে সুযোগ-সুবিধাহীন এক ধরনের মধ্যযুগীয় পরিবেশ। বন্দীদের এক ধরনের মানবেতর জীবনযাপন করতে হতো। ছিল মানবাধিকারবঞ্চিতও। একথা সত্য যে, দেশের কারাগারগুলো বন্দীকে সংশোধন না করে তাকে আরও অপরাধপ্রবণ করে তোলে। এই বিষয়টি কারাগারটি উদ্বোধন করতে এসে প্রধানমন্ত্রীও উল্লেখ করেছেন। তিনি কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সংশোধনের মাধ্যমে কারাবন্দীদের অপরাধ প্রবণতা থেকে বের করে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এই লক্ষ্যে বহুমুখী কর্মসূচী হাতে নেয়ার কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য যথার্থ। সবাই চায় কারাগার হোক অপরাধীদের সংশোধন আলয়। আমাদের দেশে মনে করা হয়, বন্দী মানেই সে অপরাধী। কিন্তু বিচারের অপেক্ষায় থাকা বন্দীদের একটি বড় অংশ যে নির্দোষ সেই সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় দোষী-নির্দোষ সব বন্দীর সঙ্গেই সমান আচরণ করা হয়। নতুন কারাগার হবে সকল সমালোচনা উর্ধে। কারাগারগুলোর অবকাঠামোগত সংস্কার এখনও যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন দেখা দিয়েছে কারাবিধি সংশোধনের। দেখা যায় ব্রিটিশ আমলে প্রণীত জেল কোডে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, তবে এখনও কিছু নিয়ম চালু রয়েছে যা একটি স্বাধীন দেশের জন্য উপযোগী নয়। কেরানীগঞ্জের নতুন অবকাঠামোর কেন্দ্রীয় কারাগারটির স্বাধীন দেশের উপযোগী হোক সেটা সবার প্রত্যাশা।
×