ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে দাবি

আবাসন খাতে প্রশ্নহীন কালো টাকা বিনিয়োগ চায় রিহ্যাব

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১১ এপ্রিল ২০১৬

আবাসন খাতে প্রশ্নহীন কালো টাকা বিনিয়োগ চায় রিহ্যাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থ পাচার রোধে কোন শর্ত ছাড়াই আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। এই সুবিধা অন্তত ১০ বছরের জন্য দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করে সংগঠনটি। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিভিন্ন দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আবাসন ব্যবসায়ীদের এই সংগঠন। সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো তুলে ধরেন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আমদানি-রফতানির সময় পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন করার মাধ্যমেই সব থেকে বেশি অর্থ পাচার করা হয়। বাংলাদেশ থেকে ২০১৩ সালে ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাচার হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পাচার হওয়া এই অর্থ আগের বছরের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি। এই অর্থ পাচার রোধে কোন শর্ত ছাড়াই আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। এ সুযোগ আগামী ১০ বছরের জন্য দিতে হবে। এই সুযোগ দিলে দেশের বিশাল উন্নয়ন সম্ভব বলে রিহ্যাব সভাপতি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠবে সেখানে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হবে না। বাংলাদেশে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ না দেয়া হলে অর্থ পাচার হয়ে মালয়েশিয়ার মতো দেশে চলে যাবে। এ সময় তিনি রেজিস্ট্রেশন ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে অপ্রদর্শিত টাকার পরিমাণ বাড়ছে উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ব্যয় ১৪ শতাংশ। অন্যান্য সার্কভুক্ত দেশগুলোতে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় ৪ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে। তাই দেশে অপ্রদর্শিত টাকার পরিমাণ কমাতে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমিয়ে ৪ শতাংশ করা জরুরী। লেপারদের আয়কর কমানোর দাবি জানিয়ে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, বর্তমানে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও মতিঝিল অঞ্চলে আবাসিকে প্রতিবর্গমিটারে আয়কর দিতে হয় ১ হাজার ৬শ’ টাকা। যা অনাবাসিকে ৬ হাজার ৫শ’ টাকা। আর ধানম-ি, লালমাটিয়া, উত্তরা, ডিওএইচএস, কাওরান বাজার, খুলশী, পাঁচলাইশ আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদ অঞ্চলে আবাসিকে আয়কর দিতে হয় দেড় হাজার টাকা এবং অনাবাসিকে ৫ হাজার টাকা। এছাড়া বাকি অঞ্চলে আবাসিকে ৬শ’ টাকা এবং অনাবাসিকে ১ হাজার ৬শ’ টাকা আয়কর দিতে হয়। আগে এই ব্যয় ছিল মাত্র ৩শ’ টাকা করে। এভাবে ব্যয় বাড়ার কারণে আবাসন খাত নতুন করে সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই রিহ্যাব মনে করে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও মতিঝিল অঞ্চলে আবাসিকে প্রতিবর্গমিটারে আয়কার ৫শ’ টাকা এবং অনাবাসিকে ১ হাজার টাকা করা উচিত। আর ধানম-ি, লালমাটিয়া, উত্তরা, ডিওএইচএস, কাওরান বাজার, খুলশী, পাঁচলাইশ আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদ অঞ্চলে আবাসিকে আয়কর সাড়ে চার শ’ টাকা এবং অনাবাসিকে ৮ টাকা করা উচিত। এছাড়া বাকি অঞ্চলে আবাসিকে ৩শ’ টাকা এবং অনাবাসিকে ৫শ’ টাকা নির্ধারণ করা উচিত, বলেন রিহ্যাব সভাপতি। আগামী অর্থবছরের বাজেটের জন্য রিহ্যাবের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে, গেইন ট্যাক্স ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করা, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ৩০-৩৫ বছর মেয়াদে দীর্ঘমেয়াদী রি-ফিন্যান্সিং চালু করা এবং স্বল্প আয়ের ও মধ্যবিত্তদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা, মূল্য সংযোজন কর কমানো, শহর এলাকায় ৫ বছর এবং শহরের বাইরে ১০ বছর কর অবকাশ দেয়া, আবাসন শিল্পে অন্যান্য দেশের মতো শিল্প ঋণসহ শিল্প সুবিধা চালু করা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, রিহ্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রবিউল হক, প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূইয়া, দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ আনোয়ারুজ্জামান, ভাইস প্রেসিডেন্ট (এ্যাডমিন) মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান, ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) প্রকৌশলী সরদার মোঃ আমিন, ডিরেক্টর ড. এন জোহা প্রমুখ।
×