ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজালে ভেজাল

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১১ এপ্রিল ২০১৬

ভেজালে ভেজাল

সর্বত্র ভেজালে ভেজাল। এই ভেজাল যে শুধু রাজধানীতেই পরিব্যাপ্ত তা নয়। বরং ভেজাল ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে নানা উপায়ে। আগে প্রধানত খাদ্যে ভেজালের কথা শোনা যেত। এখন ভেজাল দেয়া হচ্ছে ইট-কাঠ-বালু-সিমেন্ট-সুরকি, এমনকি লোহার রডে। প্রথমত খাদ্যপণ্যে ভেজালের কথা বলা যেতে পারে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত ৫১টি খাদ্যপণ্যের ৬৪০টি নমুনা সম্প্রতি প্রেরণ করা হয় জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য। সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন অনুসরণ করে পরীক্ষার পর ৩০টি পণ্যের ২৮৩টি নমুনার মধ্যে প্রমাণ মিলেছে ভেজালের। এক্ষেত্রে সয়াবিন তেলের ২৮টি নমুনার মধ্যে ভেজাল পাওয়া যায় ২১টিতে। খাঁটি পাওয়া যায় সাতটি। সরষের তেলের ৫৫টি নমুনার মধ্যে ২৭টিতে ভেজাল এবং ২৬টি খাঁটি পাওয়া গেছে। অনুরূপ ভেজালের প্রমাণ মিলেছে গুঁড়া হলুদ-মরিচ, গুড়-চিনি, মধু, বিস্কুট, ডাল, সেমাই, ডালডা-ঘি, জেলি ও অন্যবিধ পণ্যে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, পরীক্ষার জন্য ল্যাবে আসা মিষ্টির ৩২টি নমুনার মধ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে সবক’টিতেই, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে অনেক নামীদামী ব্র্যান্ডের মিষ্টি। অপরদিকে সরকারী ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের খবর মিলেছে চুয়াডাঙ্গায়। দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ৫ তলা ভবনে রডের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে বাঁশ, খোয়ার বদলে সুরকি। ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এহেন কীর্তি প্রথমে নজরে আসে এলাকাবাসীর। এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে নির্মাণ কাজ স্থগিত রেখে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কৃষি অধিদফতর। ভেজালের ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি কোনভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। আসন্ন পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে ঢাকাসহ সারাদেশে মিষ্টির দোকানগুলোতে সাজ সাজ রব। বছরের শেষ ও শুরুতে আবহমানকাল ধরে চলে আসা হালখাতা উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ মিষ্টি। আর সেই মিষ্টিতেই কিনা শতভাগ ভেজালÑ এমনটি কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে। আর মিষ্টির ভেজাল তো শুধু দুধ, ছানাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মিষ্টি তৈরির নানা উপাদান ঘি, তেল, ডালডা, আটা, ময়দা, সুজি, রংÑসবকিছুতেই ভেজাল। মিষ্টিতে যে রং ব্যবহার করা হয় তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ভেজাল খাদ্য ও পণ্যদ্রব্যের বিরুদ্ধে বারবার সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা। মাঝে-মধ্যে র‌্যাব-পুলিশের সহায়তায় ভেজালবিরোধী অভিযানও পরিচালিত হচ্ছে। হাতেনাতে ধরাও পড়েছে ভেজালকারীরা। জেল-জরিমানাও হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে। এরপরও বলতেই হয় যে, ভেজালের দৌরাত্ম্য কমছে না কিছুতেই, বরং বাড়ছে। অথচ দেশে ভেজালবিরোধী আইন আছে। ভোক্তা বা ক্রেতাস্বার্থ সংরক্ষণেও আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো, প্রায় ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় না। এর একটি অন্যতম কারণ দুর্নীতি। দ্বিতীয়ত, দেশে জনসংখ্যা অনুপাতে অনেক পণ্যের উৎপাদন কম। যেমন, দুধের উৎপাদন কম হলে এত বিপুল পরিমাণ মিষ্টি তৈরির ছানা আসবে কোত্থেকে? অনুরূপ রডের দাম বেশি বিধায় ঠিকাদার এর পরিবর্তে লাভ ও লোভের বশবর্তী হয়ে বাঁশ ব্যবহার করছে। এর পাশাপাশি সর্বত্র দেখভাল ও নজরদারির অভাব এবং গাফিলতি কোন অংশেই কম দায়ী নয়। অতঃপর ভেজালের জগদ্দল বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ।
×