ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাইভেসির দাম কত ?

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১১ এপ্রিল ২০১৬

প্রাইভেসির দাম কত ?

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির গল্প এখন যথারীতি থিতিয়ে এসেছে। আমাদের অনেক রকমের জল্পনা-কল্পনা। কিন্তু ঠিক কিভাবে এই ঘটনাটি ঘটল আমরা এখনও কেউ জানি না। অন্তত তেমন কোন রিপোর্ট আমার চোখে পড়েনি। এই বিষয়ে যতটুকু আমরা জানতে পারি, তার পুরোটাই বিদেশী মিডিয়া থেকে। বাংলাদেশের নিজস্ব মিডিয়া এই বিষয়ে একদমই ব্যর্থ হয়েছে বলা চলে। আমি যতগুলো বিদেশী রিপোর্ট পড়েছি, কোথাও বাংলাদেশের কোন স্থানীয় মিডিয়ার রেফারেন্স তারা ব্যবহার করেননি। ঘটনাটি ঘটেছে যেই দেশে, সেই দেশের কোন সূত্র নেইÑ বিষয়টি খুবই অবাক করার মতো। আমি জানি না, বাংলাদেশের মিডিয়ার অবস্থা আগেও এমনটি ছিল কি না? তবে এটা ঠিক যে, মিডিয়াকে শক্তিশালী হতে হলে সমাজকেও সামগ্রিকভাবে এগোতে হয়। একজন মিডিয়াকর্মী একা একা খুব কিছু একটা করে ফেলবেন, সেটা হবার নয়। তাকে ধরে রাখবার মতো পরিবেশটাও লাগে। যে কারণে আমরা একজন-দু’জন স্ফুলিঙ্গের মতো কিছু সাংবাদিক দেখি বটে; কিন্তু তারা সমাজের অবস্থা পরিবর্তনে খুব বেশি ভূমিকা পালন করতে পারেন না। তাদের সংখ্যা কম এবং তাদের টিকে থাকাটাই বিপদ হয়ে দাঁড়ায়Ñ বিশেষ করে এই উপমহাদেশের মতো জায়গাগুলোতে। সত্য প্রকাশ করে সেই চাপ সহ্য করার মতো ক্ষমতা কি বাংলাদেশী কোন মিডিয়ার আছে? কিংবা থাকার কথা? যে কারণে সামাজিক মাধ্যমগুলো দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শুধু জনপ্রিয় বললে ভুল হবে, বেশ এফেকটিভ মাধ্যম হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। প্রথাগত সাংবাদিকতার চেয়ে গণমানুষের ভাব প্রকাশের জায়গা করে নিয়েছে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসএ্যাপ ইত্যাদি মাধ্যমগুলো। বর্তমান সময়ের মানুষ এগুলোর সঙ্গেই বেড়ে উঠছে। না, আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরি নিয়ে লিখতে বসিনি। ভাবছিলাম মানুষের কথা বলার অধিকার, তার প্রাইভেসি এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে। গত কয়েকদিন ধরে পড়ছিলাম এ্যাপল আর আমেরিকার প্রশাসনের দ্বন্দ্ব নিয়ে; আর ভাবছিলাম আমাদের দেশে এমনটা হলে কী হতো? রিজার্ভের টাকা চুরি নিয়ে আমাদের ভেতর গসিপের শেষ নেই। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে যে যার মতো বলে যাচ্ছেন। আমাদের কাছে এখন আর কোন কিছুই সত্য নয়। সত্যটা খুবই আপেক্ষিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দেশে। আমাদের সবকিছুতেই চরম সন্দেহ। আমরা গসিপ খুব পছন্দ করি। এর কারণও নিশ্চয়ই আছে। একটি দেশে এই চরম সন্দেহজনক পরিস্থিতি যখন তৈরি হয়, সেখানে কি তথ্যপ্রযুক্তিও মুক্তভাবে বিকশিত হতে পারে? তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ মানেই কিন্তু অবাধ সুষ্ঠু তথ্য প্রবাহ। কিংবা উল্টো করে বলতে পারেন, স্বচ্ছতা তৈরি করা। সেই স্বচ্ছতা আনতে গেলেই আপনি টার্গেট হবেন অসংখ্য ক্ষমতাশালী মানুষের এবং রাষ্ট্রের। সেটা ধরে রাখার মতো অবস্থা কি বাংলাদেশের আছে, যেমনটা পারছেন এ্যাপলের টিম কুক, কিংবা ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ? ভাবছিলাম, এ্যাপলের কথা। আমেরিকার প্রশাসন তার পেছনে লেগেছে এবং কতটা সাহসের সঙ্গে তিনি বলতে পারছেন, না আমরা এটা করব না। এই ক্ষমতা কি তার টাকার ক্ষমতা? নাকি আমেরিকার আইনই তাকে এই সাহস জুগিয়েছে? এবং তার প্রতিষ্ঠান জানে, সরকার চাইলেই যা ইচ্ছে করতে পারবে না। আমেরিকার অন্যান্য সিস্টেমগুলো তার সঙ্গে আছে। বর্তমান সময়ের ইন্টারনেটভিত্তিক সবচেয়ে বড় বড় গণমাধ্যমগুলো তাই হয়তো আমেরিকাতেই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। আমাদের মতো দেশগুলোতে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানকে এতটা শক্ত হয়ে গড়ে ওঠার সুযোগ আমরা দিতে পারিনি। তাই আমাদের মতো দেশগুলোতে ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্ম হবে না; হতে পারে না। ॥ দুই ॥ কোর্ট থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কয়েকটি এ্যাপল আইফোনের এনক্রিপশন ভেঙ্গে দেয়ার জন্য। এফবিআই বলছে, এই ফোনগুলোতে ক্রিমিনালদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা। মামলার আলামত। সেই ফোনে এমন কিছু তথ্য আছে যেগুলো জানতে পারলে ক্রিমিনালকে আইনের আওতায় আনা যায়। বিচার সুষ্ঠু হতে পারে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, বাংলাদেশের যে কাউকে এই বিষয়টি বললে, তিনি বলবেনÑ ‘এটা কোন ব্যাপার নাকি? এ্যাপল বেশি বাড়াবাড়ি করছে। ক্রিমিনালদের ফোন আনলক করে দেয়াটাই শ্রেয়।’ খুব কম মানুষ পাওয়া যাবে, যারা এটা নিয়ে দ্বিতীয় চিন্তা করতে পারবে। ঝামেলা যেটা হয়েছে, এ্যাপলকে এফবিআই একটি আইফোন আনলক করে দিতে বলেছিল। কিন্তু এ্যাপল সেটা করে দেয়নি। তখন এফবিআই নিজ থেকেই অন্যান্য প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সেই আইফোনটি (মডেল আইফোন ফাইভ-সি) আনলক করতে সমর্থ হয়। এই ঘটনাটি সারাবিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। এতদিন ধারণা করা হতো, এ্যাপলের আইফোনের এনক্রিপশন ভাঙ্গা যায় না। কিন্তু এই ঘটনার পর সবাই একটু নড়েচড়ে বসেন। এটা নিয়ে পুরো বিশ্বের মিডিয়ায় তোলপাড় হয়। এই ঘটনার আগে এ্যাপল কিছু কিছু ক্ষেত্রে এফবিআইকে সহায়তা দিত। প্রয়োজনে তারা বিভিন্ন ফোনের এনক্রিপশন ভেঙ্গে দিয়েছে। কিন্তু এফবিআই বলছে, তাদের একটি ইউনিভার্সেল কী (মাস্টার কী-এর মতো যা দিয়ে সব তালা খোলা যায়) দিয়ে দিতে যেন এফবিআই নিজ থেকেই যে কোন আইফোন আনলক করতে পারে। এ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক এই প্রস্তাবে রাজি হননি। আর এদিকে এফবিআইও ঝামেলায় পড়েছে। তারা একটি মাত্র মডেলের আইফোন ভাঙ্গতে পেরেছে। আইফোনের অন্যান্য মডেলগুলো (আইফোন আইওএস ৭.০-এর পরের ভার্সনগুলো) আর ভাঙ্গা যাচ্ছে না। পাশাপাশি এ্যাপল তার কয়েকজন কর্মীকে কোর্টের সামনে হাজির করিয়েছে। তারা এ্যাপল ছেড়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু চাকরি ছাড়ার আগে তারা তাদের নিজস্ব তৈরি সফটওয়্যারের নিরাপত্তায় একটি ব্যাকডোর (যা দিয়ে মূল নিরাপত্তাকে বাইপাস করা যায়) তৈরি করে রেখে গিয়েছিলেন। এখন তারাও আইনের মুখোমুখি হচ্ছেন। এ্যাপল দেখতে পাচ্ছে, কোর্ট থেকে একটার পর একটা অনুরোধ আসতে শুরু করেছে। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর কোন সহযোগিতা করা হবে না। এ্যাপল চাইছে না, এমন কোন উদাহরণ তৈরি হোক যা পরবর্তীতে ব্যবহার করা হতে পারে। কিন্তু গতকাল (৮ এপ্রিল ২০১৬) আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের ফেডারেল জাজ আবার নতুন করে এ্যাপলকে নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন এফবিআইকে আরেকটি আইফোন আনলক করতে সহায়তা করে। এর ফলে পুরো বিতর্ক আবার নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। এর ফলে সরকারের সঙ্গে প্রযুক্তি কোম্পানি এ্যাপলের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হলো। এর উত্তরে এ্যাপল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে যে, তারা ওই ফোনটি আনলক করতে পারবে না কারণ ওই ফোনটি আইওএস ৯ ইনস্টল করা। অর্থাৎ এ্যাপল বলার চেষ্টা করছে যে, তাদের নতুন আইওএস ৯-এ এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যে তারা নিজেরাও সেটা আনলক করতে পারে না। একটি ঠা-া মাথায় চিন্তা করুন তো? কোর্ট বলছে সহযোগিতা করতে। আর কোম্পানিটি বলছে তারা পারবে না। তাও আবার যে কোন মানুষের ফোন না। একজন সাজাপ্রাপ্ত ক্রিমিনালের ফোন, যেখানে পুলিশ মনে করছে ওই ফোনে আরও তথ্য থাকতে পারে। আবার এ্যাপল এটাও বলছে যে, তাদের কাছে ব্রেক করার মতো প্রযুক্তিও নেই। এই জন্য কনগ্রেস মনে করছে, নতুন একটি আইন থাকা প্রয়োজন যেখানে বলা থাকবে যে, প্রতিটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের কাছে একটি ‘চাবি’ রাখতে হবে যার মাধ্যমে তাদের যে কোন এনক্রিপশন ভাঙ্গা যাবে। কিন্তু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এই দাবির বিপক্ষে বলছে। তারা মনে করছে, এটা অপব্যবহার হবে। এর ফলে ব্যাংক, ই-কমার্স ইত্যাদি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হ্যাকারদের ঝুঁকিতে পড়বে। পাশাপাশি কোন কোন সরকার চাইলেই এটাকে অপব্যবহার করবে। তাই এমন সিস্টেম তারা তৈরি করছেন যা তারা নিজেরাও ভাঙ্গতে পারবেন না। এই ধরনের একটি বিল বর্তমানে ড্রাফট করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারকে সহায়তা দিতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু এ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুকের মতো আরও অনেকই এর বিরোধিতা করছেন। বর্তমান আমেরিকার কংগ্রেস যেভাবে বিভক্ত, তাতে করে এই বিলটি পাস না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। একটি দেশের সরকার এবং আইন কতটা শক্তিশালী হলে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে ভাবতে পারে? আমরা যখন তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে গলা ফাটাই, আমাদের এসব বিষয়ে আরও লেখাপড়া এবং উপলদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে বৈকি! ॥ তিন ॥ গত বছর পর্যন্ত এ্যাপল অনেকগুলো ক্ষেত্রে এফবিআইকে আইফোন আনলক করতে সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে এসে, এ্যাপল তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। তারা মনে করে, এর ফলে এ্যাপলের ব্র্যান্ডের মান কমে যাচ্ছে। তাদের রেপুটেশন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ্যাপলের আইনজীবীরা বলছেন, পুলিশ এবং তাদের আইনজীবীরা এমন একটি উদাহরণ তৈরি করার চেষ্টা করছেন যার ফলে ভবিষ্যতে যে কারও ফোন আনলক করা যাবে। সেটা আমরা হতে দিতে পারি না। এ্যাপল আইফোন ৫-এস এবং ৬-এর পরের সকল ফোনে ‘সিকিউর এনক্ল্যাভ’ নামের এন্টি হ্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছে যার ফলে এখন পর্যন্ত কেউ এটাকে আনলক করতে পারেনি। কিন্তু এর ফলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা খুবই কঠিন হয়ে গেছে। একটা সময় ছিল যখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ল্যান্ডফোন ট্যাপ করতে পারত। তারপর এখন যেমন মোবাইল ফোনের কথা রেকর্ড করা যাচ্ছে। কিন্তু দিনকে দিন ডিজিটাল চ্যানেলগুলো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, যেখানে তথ্যকে গোপন রাখা যাচ্ছে এবং এটা এখন নতুন আরেক ধরনের সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে তাতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি এবং আইনের হাতের একটা টানাপোড়েন বেশ ভালই চলবে এবং এই সঙ্কট খুব দ্রুতই বাড়ছে। আমরা সবাই হোয়াটসএ্যাপের কথা জানি, যা কিছুদিন আগেই ফেসবুক অধিগ্রহণ করেছে। হোয়াটসএ্যাপের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রায় ১০০ কোটির বেশি মানুষ যোগাযোগ করে থাকে যেখানে তারা ম্যাসেজ পাঠায়, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে, ফোন কল করে কথা বলে। এই সপ্তাহেই হোয়াটসএ্যাপ এমন একটি নিরাপত্তা প্রযুক্তি চালু করেছে যে, তাদের মাধ্যমে পাঠানো যোগাযোগ কেউই ভাঙ্গতে পারবে না। দুজন ব্যবহারকারীর মধ্যে যাবতীয় যোগাযোগ নিরাপদ। (ভবিষ্যতে হয়তো এটাও ভাঙ্গা যাবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে ভাঙ্গা যাবে না।) এই প্রতিষ্ঠানগুলো এমন এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে যেখানে দুজন ব্যবহারকারীর বাইরে (যা দিয়ে এনক্রিপশন করা হয়েছে) আর দ্বিতীয় কেউ পাবে না। অর্থাৎ আপনি যার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন সেই মানুষটির ডিভাইসটি এবং আপনার ডিভাইসটি কেবল নিরাপদে যোগাযোগ করতে পারবে। এর বাইরের আর কেউ সেই যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারবে না। এর ফলে যা দাঁড়াল তা হলো- কোন টেররিস্ট কিংবা ক্রিমিনালগোষ্ঠী যদি হোয়াটসএ্যাপ ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে এবং কোর্ট থেকে যদি নির্দেশ দেয়া হয় যে, হোয়াটসএ্যাপ ওই যোগাযোগের বিষয়বস্তু বের করে দেবে, তখন হোয়াটসএ্যাপের পক্ষে কিছুই করার থাকবে না। কারণ, ওটা ভাঙ্গার মতো প্রযুক্তি তাদের নিজেদের কাছেও নেই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং হোয়াইট হাউসকেও বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। তবে সাধারণ মানুষ তাতে স্বস্তির দিন গুনছে। তারা মনে করছে, তাদের প্রাইভেসি সংরক্ষিত হচ্ছে। অপরদিকে প্রশাসন মনে করছে, এভাবে কি একটি দেশকে টিকিয়ে রাখা যাবে? দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমকে সমুন্নত রাখতে অপরাধীদের কার্যক্রমকে দেখভালের মধ্যে রাখাটা জরুরী। কিন্তু সরকার এর অপব্যবহার করে। মানুষের প্রাইভেসি ভেঙ্গে ফেলে। তাই সাধারণ মানুষ এই ধরনের নতুন প্রযুক্তিকে সমর্থন করে সারাবিশ্বেই। প্রযুক্তির এই দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে সমাজ এবং দেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই এখন দেখার বিষয়। ॥ চার ॥ লেখাটি যখন প্রায় শেষ করে এনেছিলাম ঠিক তখুনি একটি ম্যাসেজ এলো। হোয়াটসএ্যাপ তাদের নতুন এনক্রিপশন প্রযুক্তি সকল ডিভাইসের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এখন আইফোন, এন্ড্রয়েড, ব্ল্যাকবেরি যে কোন ডিভাইসেই এটা নিরাপদ। পৃথিবীর যে মানুষ নিজেদের প্রাইভেসিকে সম্মান করে, তারা সবাই চিৎকার করে আনন্দ প্রকাশ করছে। অসংখ্য সাংবাদিক এটাকে স্বাগত জানিয়েছে এই জন্য যে, এখন তাদের জীবন অনেকটা নিরাপদ। তারা তাদের কাজের জন্য বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন যেগুলোর প্রাইভেসি খুব জরুরী। জীবনের জন্য, কাজের জন্য। এখন সেই প্রাইভেসি নিশ্চিত হলো। কিন্তু অপরদিকে বিভিন্ন দেশের সরকার এটার প্রতিবাদ করছে। তারা বলছে, এর মাধ্যমে এই গ্রহ আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠবে। বিষয়টা যেন এমন যে, তারাই কেবল এই গ্রহকে নিরাপদ করে রেখেছে। একটি প্রযুক্তি মানুষকে কতটা সামনে নিয়ে যেতে পারে, হোয়াটসএ্যাপের এই পদক্ষেপই তার প্রমাণ। হোয়াটসএ্যাপের কো-ফাউন্ডার জ্যান কুম এবং ব্রায়ান এ্যাকটন তাদের একটি ব্লগে লিখেছেন, আইডিয়াটা খুবই সরল। আপনি যখন কাউকে কিংবা কোন গ্রুপকে কোন ম্যাসেজ পাঠাবেন কেবল তারাই ওই ম্যাসেজ পড়তে পারবে। এর বাইরে আর কেউ ওই ম্যাজেস দেখতে পারবে না। সাইবার ক্রিমিনালরা না; হ্যাকার না; কোন শোষিত সরকার না; এমনকি আমরাও না। আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাজের গুরুত্বকে অনুধাবন করছি। তারা মানুষের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করছেন। কিন্তু এনক্রিপশন প্রযুক্তিকে দুর্বল করে দিলে মানুষের তথ্যের প্রাইভেসি কমে যায় যা সাইবার ক্রিমিনাল, হ্যাকার এবং আক্রান্ত দেশগুলো ব্যবহার করে থাকে। হোয়াটসএ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কুম আরও বলেন যে, আমি নিজেই প্রাইভেসির সবচেয়ে বড় সাক্ষী। আমি বড় হয়েছি সোভিয়েত রাশিয়ার কমিউনিজমের সময়, যখন মানুষ মুক্তভাবে কথা বলতে পারত না। এই কারণেই আমার পরিবার রাশিয়া ছেড়ে আমেরিকায় চলে আসে। হোয়াটসএ্যাপের এই নতুন পদক্ষেপ যখন পুরো বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলেছে, তখন তার সেই বাতাস বাংলাদেশ ভারতেও লাগবে বৈকি! এই দেশগুলোর সাইবার নিরাপত্তা এমনিতেও খুব দুর্বল। এখন দেখার পালা, তারা কিভাবে এটাকে মোকাবেলা করেন। লেখক : তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ুং@ঢ়ৎরুড়.পড়স
×