ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক, ইফাদ ও ইউএসএআইডি

এবার কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনায় তিন দাতা সংস্থা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১০ এপ্রিল ২০১৬

এবার কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনায় তিন দাতা সংস্থা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ কৃষি উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্ত হচ্ছে তিন উন্নয়নসহযোগী সংস্থা। এগুলো হচ্ছে বিশ্বব্যাংক, ইফাদ এবং ইউএসএআইডি। টেকসই কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কৃষকদের জীবন মান উন্নয়নে ১৫ বছর মেয়াদী এ পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম-দ্বিতীয় পর্যায় (এনএটিপি-২) নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের মধ্যে এটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট। এর আগে সাত বছর (২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত) মেয়াদী প্রথম পর্যায় বাস্তবায়িত হয়েছে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়। সাত বছর মেয়াদী এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৭১ কোটি ৪ লাখ এবং তিন উন্নয়নসহযোগী সংস্থার ঋণ ও অনুদান থেকে ১ হাজার ৬০৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এএন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কৃষি চাহিদাভিত্তিক সম্প্রসারণ সেবা প্রদান এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের কৃষি পণ্যের (ফসল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। বাজার সংযোগ জোরদার করার মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সহায়ক হবে। কৃষি গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণের মাধ্যমে প্রতিকূল পরিবেশ ও প্রতিবেশ সহিষ্ণু যেমন বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, বালাই ইত্যাদি সহিষ্ণু ও অধিক উৎপাদনক্ষম প্রযুক্তি উদ্ভাবন সম্ভব হবে। তাছাড়া প্রকল্পের আওতায় উচ্চশিক্ষা, কৃষক প্রশিক্ষণ, আইসিটি যন্ত্রপাতি সরবরাহ, ল্যাবরেটরি আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা অবকাঠামো উন্নয়ন করা সম্ভব হবে, যা গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমকে শক্তিশালী করবে। তিনি জানান, প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হলে কৃষকের উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধি পাবে, যা খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষির সমৃদ্ধি অর্জন নিশ্চিত করবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের জন্য বিবেচনাযোগ্য। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রস্তাব ২০১৫ সালের ৫ জুন সংস্থাটির বোর্ড সভায় অনুমোদন লাভ করেছে। এখন চুক্তি স্বাক্ষরসহ পরবর্তী বিষয়ে কার্যক্রম চলছে। ইউএসএআইডি ও ইফাদের অনুদান প্রাপ্তির বিষয়ে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খাদ্যনিরাপত্তা, পশু খাদ্য ও গ্রামীণ জ্বালানি সরবরাহ, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান এবং শিল্প কারখানার কাঁচামাল সরবরাহে বাংলাদেশের কৃষি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। সেই সঙ্গে দারিদ্র্য নিরসনে কৃষির ভূমিকা ব্যাপক। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ অত্যন্ত কৃষিপ্রবণ দেশ। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন মূলত ছোট আকারের মিশ্র খামার প্রকৃতির। ধান ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদনশীলতা এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। কৃষকের উৎপাদন ও গবেষণা পর্যায়ের উৎপাদন হারের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। উচ্চমূল্যের কৃষিপণ্যের উৎপাদন বহুমুখীকরণের আশানুরূপ নয়। এসব সমস্যা হতে পরিত্রাণ পেতে দুর্যোগ সহিষ্ণু কৃষিপ্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সামগ্রিক কষির উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষিজ আয় বহুমুখীকরণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষি খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি, গবেষণা সম্প্রসারণ, সেবা কার্যকর ও স্থায়িত্বশীলকরণ ও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন করার লক্ষ্যে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পে প্রযুক্তি সম্প্রসারণ এবং কৃষিপণ্য সরবরাহ ও বাজার ব্যবস্থা উন্নয়নে বেসরকারী খাতের সম্পৃক্ততাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, একশ’টি কম্পিটেটিভ রিসার্স গ্রান্ট (সিআরজি) প্রপ্রোজাল বাস্তবায়ন, ৩৩ প্রোগ্রাম বেজ রিসার্স গ্রান্ট (পিবিআরজি) প্রপ্রোজাল বাস্তবায়ন, ৪০ উন্নত প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে প্রদর্শন করা, উচ্চশিক্ষা বাস্তবায়নে দেশের অভ্যন্তরে ৮০ জনকে এবং দেশের বাইরে ৬০ জনকে পিএইচডি বৃত্তি প্রদান, জাতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাত উন্নয়ন, কৃষকদের সংগঠন সিআইজি গঠন, ১ হাজার ৬২১ ফারমার ইনফরমেশন এ্যান্ড এ্যাডভাইস সেন্টার স্থাপন, নির্বাচিত কৃষিপণ্যের উৎপাদন ৮ থেকে ১০০ ভাগ বৃদ্ধি, পণ্য বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষিপ্রযুক্তি হস্তান্তর এবং প্রায় ২৮ লাখ ৪১ হাজার কৃষক পরিবারের উন্নয়নসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়া শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
×