ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এসএমএস চার্জ বাড়াচ্ছে বিটিআরসি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১০ এপ্রিল ২০১৬

এসএমএস চার্জ বাড়াচ্ছে বিটিআরসি

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল ফোনের এসএমএস খরচ বাড়ছে। অপারেটরদের আপত্তির মধ্যেও বিটিআরসি প্রতি এসএমএস এক পয়সা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের সর্বশেষ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাড়তি টাকা পাবে আইসিএক্স অপারেটররা (ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ)। বিটিআরসি বলছে, ২০১২ সালের গাইডলাইন অনুযায়ী আইসিএক্সের মাধ্যমে এসএমএস পাঠাতে হবে। বিটিআরসি নতুন করে কোন কিছু করছে না। শুধু ২০১২ সালের গাইডলাইন বাস্তবায়ন করছে। টেলিকম বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে গ্রাহকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, এসএমএস পাঠানোয় নতুন একটি স্তর যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ফলে এসএমএসের খরচ বাড়তে যাচ্ছে। বাড়তি ব্যয় গ্রাহকদেরই টানতে হবে। যদিও শুরু থেকে মোবাইল অপারেটররা বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু সেই আপত্তি বিটিআরসি কোন আমলে না নিয়ে আইসিএক্সকে এখানে স্থান করে দিয়েছে। আইসিএক্স এই টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়ে যাবে। মোবাইল অপারেটরদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক বা অন্য অপারেটরের নেটওয়ার্কে এসএমএস (শর্ট মেসেজ সার্ভিস) পাঠাতে এতদিন অন্য কোন পক্ষ ছিল না। তখন এক অপারেটর থেকে আরেক অপারেটরের গ্রাহকের কাছে সরাসরি চলে যেত এসএমএস। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অন্য অপারেটরে এসএমএস পাঠাতে হলে তা ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) অপারেটর হয়ে যেতে হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে মোবাইল ফোন- অপারেটরা সরাসরি তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক দিয়ে এসএমএস পাঠাতে পারবে না। এখন তারা নীতিমালা অনুযায়ী এসএমএস চার্জ নিতে চাচ্ছে। এখানে বিটিআরসির কোন কিছু করার নেই। জানা গেছে, এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে (অফ নেট) এখন প্রতিদিন গড়ে চার কোটি এসএমএস আদান প্রদান হচ্ছে। অনলাইন এসএমএস হচ্ছে আরও প্রায় চার কোটি। সব মিলে ৮ থেকে সাড়ে ৮ কোটি এসএমএস প্রতিদিন আদান প্রদান হচ্ছে। বিদেশে গড়ে ১২ থেকে ১৩ লাখ এসএমএস আদান প্রদান হয়। দেশের ভেতরে এসএমএস পাঠাতে বর্তমান খরচ ৫০ পয়সা। এখন তা বেড়ে ৫১ পয়সায় দাঁড়াবে। বিদেশে এসএমএস খরচ ২ টাকা। এখানেও খরচ বাড়বে। বিদেশে এসএমএস পাঠাতে তখন আইসিএক্স হয়ে আইজিডাব্লিউর (ইন্টারনেট গেটওয়ে) মাধ্যমে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইজিডাব্লিউও টাকা পাবে। গ্রাহকের ওপর এই বাড়তি খরচ চাপানোর বিষয়ে বিটিআরসি কোন ব্যাখ্যা দেয়নি। সর্বশেষ কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় আইসিএক্স ও আইজিডাব্লিউর এর পক্ষে। এখানে গ্রাহকের কোন স্বার্থ দেখা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক এসএমএসের জন্যও আইসিএক্স হয়ে বার্তা পাঠানোর নিয়মটি আগে থেকেই প্রযোজ্য আছে। ২০১২ সালের টেলিকম পলেসি অনুযায়ী আইসিএক্সের মাধ্যম ব্যবহার করে এসএমএস পাঠাতে হবে। এসএমএসের নানা প্রকার রয়েছে। এর মধ্যে ব্যান্ড্রোল এসএমএস হলে হয় এক হাজার এসএমএস পাঠাতে হয়ত ১০ টাকা লাগবে। আবার এককভাবে হলে ৫০ পয়সা প্রতি এসএমএসে খরচ হবে। এভাবে বিটিআরসির অনুমতি নিয়ে অপারেটররা এসএমএস অফার তৈরি করে। এতে গ্রাহকরা অনেক সময় অনেক কম খরচেও এসএমএস পাঠাতে পারছেন। টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিন দিন মোবাইল ব্যবহার ব্যয়বহুল হচ্ছে। গত বছর মোবাইল কলের ওপর বসানো হয়েছে সার্চাজ। শুরু থেকে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট ট্যাক্স রয়েছে। এখন একজন গ্রাহক এক শ’ টাকার রিচার্জ করলে ২০ টাকার ওপরে সরকারকে দিতে হচ্ছে। মোবাইল অপারেটদের লাভ তো আরও বেশি। ঘন ঘন কল ড্রপ, নানা অফারের মাধ্যমেও গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দেশে প্রায় ১৩ কোটি মোবাইল রয়েছে। দিনে প্রতি কল থেকে এক পয়সা চলে গেলেও তো ১৩ কোটি পয়সা চলে যাচ্ছে। তাহলে মাসে কত কোটি আর বছরে কত কোটি পয়সা গ্রাহকের পকেট থেকে নিয়ে যাচ্ছে অপারেটররা। এ হিসাব অনেক বড়। এখানে বিটিআরসির নজর দেয়া উচিত। এসএমএস চার্জ এক পয়সা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছেন তারা। এতে গ্রাহকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিটিআরসির এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, আইসিএক্স অপারেটরদের মাধ্যমে ফোনকলের পাশাপাশি এসএমএস যেতে পারার বিষয়টি গাইডলাইনে বলা আছে। তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এটা এখন কার্যকর করা হচ্ছে। তাহলে চার বছর কেন মোবাইল অপারেটররা তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারল। তিনি বলেন, এতদিন আইসিএক্স ও আইজিডাব্লিউ অপারেটরগুলো এসএমএস চার্জ নেয়নি। রবি আজিয়াটার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবীর বলেন, বিভিন্ন দেশে ফোনকল ও এসএমএস পাঠাতে আইসিএক্সের মতো মধ্যবর্তী স্তরগুলো যেখানে কমিয়ে আনা হচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে উল্টো তা বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে গ্রাহকের খরচ যেমন বাড়বে, একই সঙ্গে সরকারের প্রচারণামূলক বার্তা পাঠানোর খরচও বাড়বে। বিটিআরসি জানিয়েছে, এসএমএসের কোন খরচ বাড়বে না। আগেও যে খরচ ছিল-সেই খরচই থাকবে। শুধু এখানে এসএমএস পাঠানোর সামান্য খরচের অংশ আইসিএক্স পাবে। সরকার আইসিএক্স থেকেও রাজস্ব পাবেন। শুধু যে আইসিএক্স অপারেটররা লাভবান হবেন তা না। এখানে সরকারও লাভবান হবে। ব্যাপক হারে গ্রাহকরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হবেন না। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রাহকদের বাড়তি টাকা গুনতে হবে। বিটিআরসি সব দিক বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
×