স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় কাউন্সিলের ২১ দিন পর তৃতীয় দফায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া ১৫ নেতার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ২ পদে এ ১৫ নেতার মধ্যে ১২ জনই নতুন। শনিবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মনোনীত ৭ জন যুগ্ম মহাসচিব ও ৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন।
বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া ৭ জন যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে আগের কমিটির ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনই শুধু রয়েছেন। বাকি সবাই নতুন। নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া অন্য যুগ্ম মহাসচিবরা হলেন আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সারোয়ার, আগের কমিটির যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আগের কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, আগের কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ ও আগের কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী।
আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, বরকতউল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদকে নতুন কমিটিতে কোন পদ দেয়া হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তকে কেউ কেউ বলছেন তাদের ভাইস চেয়ারম্যান পদ দেয়া হবে। আর আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে আগেই পদোন্নতি দিয়ে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে।
বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া ৮ সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে ২ জন আগের কমিটির ফজলুল হক মিলন (ঢাকা বিভাগ) ও আসাদুল হাবিব দুলু (রংপুর বিভাগ) রয়েছেন। বাকি ৬ জন নতুন। নতুন যুগ্ম মহাসচিবরা হলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন (চট্টগ্রাম বিভাগ), আগের কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু (খুলনা বিভাগ), আগের কমিটির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু (রাজশাহী বিভাগ), আগের কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক ইমরান সাহেল পিন্স (ময়মনসিংহ বিভাগ), আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য শ্যামা ওবায়েদ (প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগ) ও আগের কমিটির নির্বাহী সদস্য বিলকিস জাহান শিরিন (বরিশাল বিভাগ)।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এবারই প্রথম ২ জন নারীকে স্থান দেয়া হয়। বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শ্যামা ওবায়েদের এই পদে আসাটা চমক হিসেবে দেখছেন বিএনপিকর্মীরা। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে সক্রিয় ছিলেন তিনি। তবে গুম হওয়া বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর জায়গায় (সিলেট বিভাগে) সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা নিখোঁজ রয়েছেন। সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার ও মসিউর রহমানকে নতুন কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদ দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
এর আগে ১৯ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের দিন কর্মঅধিবেশনে প্রথম দফায় খালেদা জিয়াকে চেয়ারপার্সন ও তাঁর লন্ডন প্রবাসী ছেলে তারেক রহমানকে পুনরায় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেয়া হলেও আর কোন পদের দায়িত্ব কাউকে না দেয়ায় যখন নানান জল্পনা-কল্পনা চলতে থাকে তখন ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব, রুহুল কবির রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মিজানুর রহমান সিনহাকে দলের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। তৃতীয় দফায় কমিটি ঘোষণার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখন পদ পাওয়া নেতার সংখ্যা মাত্র ২০ জন। অন্য নেতাদের নাম আরও কয়েক ধাপে ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলররা দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে স্থায়ী কমিটিসহ সব কমিটি গঠনের ক্ষমতা দেন। সেই ক্ষমতা বলেই তিনি যুগ্ম মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে তাদের মনোনীত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা কাজী আসাদ, এ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, হাবিবুর রহমান, আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ।
ইউপি নির্বাচনের নামে হত্যার হলি খেলা চলছে- মাহবুব ॥ চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নামে সারাদেশে মানুষ হত্যার হলি খেলা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, এমন নির্বাচন কখনও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুবুর রহমান বলেন, গণতন্ত্রের শেষ পর্যায় হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। অথচ রক্তের সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে হত্যাযজ্ঞ, লাশের পর লাশ মিছিলের মধ্য দিয়ে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এ নির্বাচন দেশের জন্য মঙ্গল হয়ে আনবে না। তাই মানুষ হত্যার নির্বাচন বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বেশি থাকে। প্রশাসন থাকে তাদের হাতে। সেজন্য তারা চাইলেই নির্বাচন অবাধ করতে পারে। কমিশনের সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে পরবর্তী ধাপগুলোর নির্বাচন করা উচিত।
আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ব্যাপারীর সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ ন্যাপের যুগ্ম মহাসচিব স্বপন কুমার সাহা, জাসাসের সহ-সভাপতি বাবুল আহমেদ প্রমুখ।
সরকারের উদ্দেশ্য গণতান্ত্রিক দল ধ্বংস করা- নজরুল ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে না পারলে গণতন্ত্র আরেকবার নিহত হবে। তবে বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য একটাই তা হচ্ছে গণতান্ত্রিক দলকে ধ্বংস করা। শনিবার বাদ আসর রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি শহীদুল ইসলাম চৌধুরী দুলালের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম প্রমুখ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: