স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ অমাবস্যার তিথির জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে উপকূলীয় অঞ্চল মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের অধিকাংশ এলাকা। জেলার উপকূলীয় এলাকার ২০ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসত ভিটায় গত তিনদিন ধরে জোয়ার-ভাটা চলছে। শুক্রবার মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুত প্রকল্পের আওতায় টিয়াকাটি, রোস্তমদোনা ও রাঙ্গাখালির প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে অমাবস্যার জোয়ারের পানি ঢুকে ১০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে জোয়ারের পানিতে তালিয়ে গেছে প্রায় আট শ’ একরের লবণ মাঠ ও চার শ’ একরের বোরো ধান। ভেঙ্গে গেছে দক্ষিণ মগডেইল, সাইরার ডেইল, মাইজপাড়া, বিলপাড়া, ফুলজানমোরা, দক্ষিণরাজঘাটের অন্তত একশ কাঁচা ঘরবাড়ি। দু’টি উপজেলায় জোয়ারে ভাসছে ২০ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ। শাহপরীর দ্বীপের জোয়ারের পানি রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাগরের পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। যদিও উপকূলের বেড়িবাঁধের ভাঙনদশা বহু বছরের। গত বছরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে জোয়ারের পানি আর বন্যায়। ঘর-সম্পদ হারিয়েছে বহু মানুষ। হারিয়েছে ভিটে-বাড়ি ও আপনজনদের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গা অংশের কিছুটা জোড়াতালি দিলেও স্থানীয়দের সম্পদ রক্ষার মতো বাঁধের পুনর্নির্মাণ কাজ হয়নি মোটেও। ফলে বর্ষা শুরুর আগেই আতঙ্ক বাড়ছে উপকূল জুড়ে।
ভাঙ্গা বেড়িবাঁধের কারণে আতঙ্কে দিন কাটছে পেকুয়া চকরিয়া, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী উপজেলার ৬৪ গ্রামের মানুষের। কক্সবাজার উপকূলে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, জেলায় বেড়িবাঁধ রয়েছে ৫৯৫ কিলোমিটার। গত বছর ৩১ জুলাই ঘূর্ণিঝড় কোমেন ও পূর্ণিমার জোয়ারের ধাক্কায় জেলার টেকনাফ, পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী উপজেলায় প্রায় ৮২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যায়। আংশিক ভেঙ্গে যায় আরও ১৫৮ কিলোমিটার। এখন জোয়ারের ধাক্কায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলোও ভেঙ্গে গেছে। ফলে ঝুঁকির মুখে পড়ছে উপকূলের প্রায় ১১ লাখ মানুষ।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোছাইন বলেন, ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় শাহপরীর দ্বীপের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ উদ্বিগ্ন। ঘর-বাড়ি হারিয়ে অনেকে টেকনাফ সদরে আশ্রয় নিচ্ছে। পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ও পূর্ণিমার জোয়ারে জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য ১৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে ভাঙ্গা বাঁধের সংস্কার শুরু হবে। তবে জোয়ার ঠেকাতে জরুরী ভিত্তিতে ৮২টি পয়েন্টে ভাঙ্গা বেড়িবাঁধের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।
সিলেটে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস থেকে জানান, শুক্রবার রাতে সিলেটের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাত ১২টার পর থেকে কয়েকদফা ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুত ব্যবস্থা ল--ভ- হয়ে যায়। রাত ১২টা থেকে শনিবার বেলা ২টা পর্যন্ত নগরীর অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিল। শহর শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে শতাধিক কাঁচা ঘর, বাড়ির চাল, দেয়াল, গাছ উপড়ে পড়ে ক্ষতি সাধন হয়। সিলেট সদর উপজেলার বহর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের চাল উড়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সরকারী নথি। ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সীমানা প্রাচীরের অন্তত ১০০ ফুট অংশ ভেঙ্গে পড়েছে। হাওড় এলাকায় শিলাবৃষ্টির কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে ক্ষেতের ফসল। সদর উপজেলার খাদিমনগর ইউনিয়নের বাইশটিলা গ্রামের কৃষক রাজা মিয়া জানান, গত কদিনের বর্ষণে হাওড়ের ফসল পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। অল্প সময়ের মধ্যে পানি নেমে গিয়ে ফসল রক্ষা হয়। কিন্তু গত রাতের শিলাবৃষ্টিতে অনেক স্থানে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।