ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত;###;অভিযোগ গবর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের

কর্মকর্তাদের টাইম স্কেল নিশ্চিতে আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১০ এপ্রিল ২০১৬

কর্মকর্তাদের টাইম স্কেল নিশ্চিতে আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকল্পের চাকরিকাল গণনা করে টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেড নিশ্চিতে আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে না। উল্টো আইন করে আদালতের রায় অকার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তুলেছে গবর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ। এতে সংগঠনের সভাপতি আফসার আলী ও মহাসচিব মোঃ নজরুল ইসলাম বক্তব্য দেন। সংগঠনের সভাপতি বলেন, ‘১৯৭২ সালের ৯ এপ্রিল থেকে ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সরকার যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করেছে। রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সময় সমাপ্ত প্রকল্পের বেতনের ক্রমধারা ও চাকরির ধারাবাহিকতা অক্ষুণœ আছে। প্রকল্পে যোগদানের তারিখ থেকে চাকরিকাল গণনা করে অধিকাংশ কর্মচারী বেতন, ছুটি, পেনশন ও উচ্চতর স্কেল সুবিধা ভোগ করে আসছে।’ ২০০৫ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরিত পদের পদধারীদের নিয়মিতকরণ ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ বিধিমালা’ করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিধিমালা অনুসরণ করেনি বলেও জানান তিনি। আফসার আলী বলেন, ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ ও ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দুটি আদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত পদধারীদের প্রকল্পের চাকরিকাল গণনা করে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেয়ার অবকাশ নেই। অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিতর্কিত মতামত এখনও বহাল রেখে কর্মচারীদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। কর্মচারীরা আদালতে গেলে আদালত অর্থ বিভাগের আদেশ দুটিকে বেআইনী ও অকার্যকর ঘোষণা করে জানিয়ে সভাপতি আরও বলেন, ‘হাইকোর্ট বিভাগ, আপীল বিভাগের রায়, রিভিউ আদেশ ও রিভিউয়ের বিরুদ্ধে পুনরায় রিভিউ খারিজ হলেও অর্থ বিভাগ রায় বাস্তবায়ন করছে না।’ নতুন একটি আইন করে অর্থ মন্ত্রণালয় উল্টো আদালতের রায় অকার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে মহাসচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব বাজেটে নিয়োগ, নিয়মিতকরণ ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ আইন-২০১৬ এর খসড়া করা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে- আইনের অধীনে নিয়োগ করা কর্মচারীদের জন্য আদালতের রায়, আদেশ বা নির্দেশে উল্লেখিত বা প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা কার্যকর হবে না। এটা কোনভাবেই বলবতযোগ্য হবে না। এ ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৮০ ভাগই অবসরে গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাকি ২০ ভাগের অনেকে উচ্চতর স্কেল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন স্কেলে বেতন নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। পেনশনগামী অনেক কর্মচারীর আগের নেয়া সুবিধা কর্তন করা হচ্ছে। বিষয়টির মীমাংসা না হওয়ায় এ কর্মচারীদের মধ্যে বেতনবৈষম্য বিরাজ করছে। প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার জানিয়ে সংগঠনের মহাসচিব বলেন, রায় বাস্তবায়ন করতে জনপ্রতি গড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা হারে টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেড বাবদ বকেয়া পরিশোধে সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হতে পারে। অথচ সরকারের কিছু কর্মকর্তা সরকারের উচ্চপর্যায়ে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এ রায় বাস্তবায়ন করলে প্রায় দুই লক্ষাধিক জনবলের জনপ্রতি ৩ লাখ টাকা হারে সুযোগ-সুবিধা দিতে সরকারের ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি লাগবে। এ তথ্য মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর। আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আদালতের রায় অকার্যকর করার তৎপরতা বন্ধ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ দুটি বাতিলসহ ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের নেতারা।
×