ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যাট ম্যাকফারল্যান্ড

পরিবারের একজন হতে চলেছে রোবট

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ৯ এপ্রিল ২০১৬

পরিবারের একজন হতে চলেছে রোবট

স্টার ওয়ার্স ছায়াছবির আরটুডিটু হোক আর ‘দি জেটসন্স’এর রোজি হোক রোবটরা গত কয়েক দশক ধরে পপ কালচারে মানুষের স্নেহ মমতা অর্জন করেছে। তবে সিনেমার পর্দায় এই মেশিনগুলো যতই জনপ্রিয়তা পাক এই শ্রেণীর রোবট আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এতদিন প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। কিন্তু রোবটিক্সের পেছনে বিনিয়োগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধির পরিণতিতে সে অবস্থাটা বদলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রাইভেট রোবটিক্স কোম্পানিগুলোকে অর্থায়ন ২০১৫ সালে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ড ৫৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। প্রযুক্তির উষ্ণতম ক্ষেত্রগুলোতে অনুপ্রেরণাদান ও সৃজনশীলতা উৎসাহিত করার জন্য সম্প্রতি এ্যামাজন ডটকম আয়োজিত এক সম্মেলনে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল রোবট। একটি প্রদর্শনীতে এ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী পি, বেজোস্কে মঞ্চে নীল রঙের একটি রোবটিক স্যুট পরিদানে সাহায্য করা হয়। স্যুটটি আয়রন ম্যানের কথাই কতকটা স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে একই সঙ্গে তা বুড়ো বয়সের শারীরিক সমস্যা ও অসুবিধাগুলো অনুকরণ করে দেখিয়েছিল। এ্যাপ্লাইন্ড মাইন্ডসের যুগ্ম চেয়ারম্যান ব্রান ফেরেন এই প্রদর্শনীটি পরিচালনা করেছিলেন। বেজোসের পরিধান করা হাত ও পায়ের বন্ধনী ও হেডসেট ঠিকমতো খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। ঐ পোশাকে দৃষ্টি ক্ষীণতা ও শ্রবণশক্তির বৈকল্য থেকে শুরু করে আঘাতপ্রাপ্ত নিতম্ব নিয়ে চলাফেরার সমস্যা অনুকরণ করে দেখানোর সময় দর্শকদের মধ্যে হাস্যরোলের সৃষ্টি হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার পাম স্প্রিংসয়ে ৪ দিনের এই সমাবেশে বৃদ্ধদের সেবাযতœ করা, সকল বয়সের মানুষকে শিক্ষা প্রদান করা এবং সমাজকে আরও দক্ষতার সঙ্গে সাহায্য করার কাজে রোবটের সম্ভাবনাময় ক্ষমতার উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করা হয়। বেজোস পরে উপস্থিত সুধীম-লীকে বলেন, ‘মেশিনের বুদ্ধিবৃত্তি ও রোবটিক্সের মতো বিষয়গুলো সবকিছুকেই প্রভাবিত করতে চলেছে। ৫০ বছর কি তারও বেশি সময় ধরে এটা ছিল কল্পবিজ্ঞানের বিষয়। আজ তা বাস্তবে রূপায়িত হবার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।’ ‘দি দ্য ভিঞ্চি কোডের’ লেখক ড্যান ব্রাউন সম্মেলনে প্রযুক্তি ও ধর্মের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, মানুষের বিকাশের সময়সীমা ছোট হয়ে আসছে কারণ রোবটিক্সের মতো ক্ষেত্রগুলোতে প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটে চলেছে। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে ধর্মের চেয়েও প্রযুক্তি মানুষের আধ্যাত্মিকতার উপর অধিকতর প্রভাব ফেলবে। এই নতুন হাতিয়ারকে সামলানোর মতো পরিপক্বতা মানুষের হবে কিনা সে ব্যাপারে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন। এ্যামাজন কোম্পানিটি অনলাইন রিটেইল ব্যবসার জন্য সর্বাধিক পরিচিত হলেও এই সম্মেলনে মূল আলোচিত বিষয়ের মধ্যে ছিল মেশিনের সাহায্য শিক্ষার্জন, হোম অটোমেশন ও স্পেস। এ থেকে রোবটিক্সের সম্ভাবনাময় ক্ষমতা নিয়ে প্রযুক্তি বিশ্বে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আগ্রহই ফুটে উঠে। ‘এ্যামাজন একটা ইন্টারনেট কোম্পানি। আবার একই সঙ্গে এটা এমন এক কোম্পানি যা তার পণ্যাগারে ও হোম ডেলিভারি ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে রোবটের আশু ব্যবহার কামনা করে। তাই আমি অবাক হব না যদি অচিরেই ‘ইকোর’ হাত পা গজিয়ে উঠে এবং ওটা এক হোম রোবটে রূপান্তরিত হয়ে যায়।’ এমন মন্তব্য করেছেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রেড্রো ডোমিঙ্গো। এ্যামাজন ইকো হলো একটা বক্তা রোবট যা ঘরের একপাশে একাকী দাঁড়ানো। ঘরের আরেকদিক থেকে কোন ব্যক্তি প্রশ্ন করলে ইকো সেই প্রশ্ন বড় প্রশ্নাবলীর জবাব দিতে সক্ষম। ইকো অডিও প্রযুক্তি দ্বারা চালিত। ইকোর ক্ষমতা ও সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য এ্যামাজন একটা প্লাটফর্ম তৈরি করছে এবং সেই বিষয়গুলোই ছিল সুধীম-লীর নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের একটা অভিন্ন বিষয়। মার্স নামক এই সম্মেলনে ড্রোন থেকে শুরু করে চারপেয়ে রোবট, সাঁতার কাটতে সক্ষম মেশিন এবং থ্রিডি’র প্রিন্ট করা জিনিসসহ আরও অনেক কিছু প্রদর্শন করা হয়। যে হোটেলে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল সেটি এবং এর চারপাশের ময়দান প্রযুক্তিবিদদের খেলার ময়দানের মতো রূপ ধারণ করেছিল। সেখানে কিছু কিছু টেবিল ছিল যেগুলো বিভিন্ন কেন্দ্রে পণ্যসামগ্রী বহনের কাজে এ্যামাজনের ব্যবহৃত রোবটের ভিতের ওপর নির্মিত হয়েছিল। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
×