ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্লগার হত্যাকারীদের পক্ষে সাফাই গাইলেন এরশাদ!

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৯ এপ্রিল ২০১৬

ব্লগার হত্যাকারীদের  পক্ষে সাফাই  গাইলেন এরশাদ!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্লগার হত্যাকারীদের পক্ষে সাফাই গাইলেন সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। উগ্র মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হাতে একের পর এক হত্যাকা-ের শিকার হওয়া প্রজন্ম সেনাদের বিরুদ্ধে না জেনেই ঢালাওভাবে কথা বলেছেন তিনি। ব্লগার হত্যা প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ বলেছেন, ধর্ম এবং আমাদের নবীজীকে নিয়ে কটাক্ষ করার অধিকার কারও নেই। অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে কেন আঘাত হানবেন। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কারও ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা যাবে না। কিন্তু যেসব ব্লগার হত্যা হয়েছে তারা কি ইসলামের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করেনি? শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা ও ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সব মিলিয়ে হত্যাকা- ও মৌলবাদীদের পক্ষে সাফাই গাইলেন সাবেক এই সেনাপ্রধান। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কারও কারও অভিযোগ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্য নিয়েই হয়ত জাপা চেয়ারম্যান এসব কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে এইচ এম এরশাদ বলেন, আমি কোন হত্যার পক্ষে নই। যেকোন হত্যাই নিন্দনীয়। ব্লগার হত্যার বিচার চাই। একই সঙ্গে যারা ব্লগে ধর্ম নিয়ে বিদ্রƒপ করে তাদেরও শাস্তির দাবি জানাই। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি আক্ষেপ করে বলেন, ব্লগার হত্যা সারা পৃথিবীর মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করছে; অথচ আমাদের মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, মদ্রাসার ছাত্র প্রতিনিয়ত খুন-গুম হলেও এ নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। কারণ তারা মুসলমান, মানুষ না। দেশে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, আমাদের দেশে নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে? আপনাদের দেশে কি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে না? আমাদের দেশ আমরা চালাব, আপনাদের কথা না শুনলেই আমরা জঙ্গী। এটা হতে পারে না। আমরা স্বাধীন দেশ। স্বাধীনভাবে বাঁচব। কারও দয়া ও করুণা নিয়ে আমরা টিকে থাকতে চাই না। জঙ্গীবাদ প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, জঙ্গী বলতেই আজ মুসলমানদের বুঝানো হয়। আমরা কেন আজ জঙ্গী হলাম। তিনি আফগানিস্তানের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে শিশুসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষ হত্যা করলেন এটা কী জঙ্গীবাদ নয়? তেলের কারণে ইরাককে ধ্বংস করে দিলেন, সাদ্দামকে হত্যা করলেন, কী দোষ ছিল সাদ্দামের? তেলের কারণে লিবিয়াকে ধ্বংস করলেন, গাদ্দাফিকে হত্যা করলেন। সিরিয়ার মানুষ জীবন বাঁচাতে আশ্রয় চেয়েছিল, আশ্রয় দেননি। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? মুসলমানরা এর প্রতিবাদ প্রতিরোধ করলেই এটাকে জঙ্গীবাদ বলে প্রচার করা হয়। এরশাদ বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রভূমিকে ইহুদীদের কাছে দিয়ে দিলেন, সেখানেও হাজার হাজার নারী-শিশুকে হত্যা করা হলোÑ এটা কি জঙ্গীবাদ নয়? তিনি বলেন, আমরা শান্তিতে বাস করতে চাই। মুসলমানদের মধ্যে আজ ঐক্য নেই। দেশের সকল মুসলিম সংগঠনগুলোকে একত্রিত করতে পারলেই ইউনাইটেড ইসলামী পার্টির উদ্দেশ্য সফল হবে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, একটি সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। আমরা সকলে মিলে পারি এ দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, এ নির্বাচনে আমরা ভাল ভোট পাইনি। কিন্তু দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে চায়। তার মানে নিরপেক্ষ ভোট হয়নি। নিরপেক্ষ ভোট হলে আমাদের ভোটের বাক্স ফাঁকা হতো না। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এরশাদ বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের দাবি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এতে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান মাওলানা ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, ইউনাইটেড পার্টির মহাসচিব মাওলানা তাজুল ইসলাম ফারুকী, কামাল উদ্দীন জাহানপুরী প্রমুখ।
×