ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাংস্কৃতিক আমেজে চৈতালি মেলার প্রস্তুতিতে সারা দেশ উৎসবমুখর

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৯ এপ্রিল ২০১৬

সাংস্কৃতিক আমেজে চৈতালি মেলার প্রস্তুতিতে সারা দেশ উৎসবমুখর

এমদাদুল হক তুহিন ॥ গ্রাম বাংলায় এখন উৎসবের আমেজ। আনন্দ আর উৎসবের এই আয়োজন চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে। বছরের শেষ সময়ে কোন কোন গ্রামে বসেছে চৈতালি মেলা। দেশজুড়ে চৈত্রের শেষ দিনে সংক্রান্তির বড় আয়োজন। সংক্রান্তি শেষেই পুরো দেশ মেতে উঠবে বর্ষবরণে। চৈত্র মাসের শেষ দিনকে চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়। লৌকিক আচার অনুযায়ী ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এ দিনে বিশেষ করে বিদায় উৎসব পালন করে। দোকানপাট ধুয়ে মুছে বিগত বছরের সব জঞ্জাল-অসূচী দূর করে পহেলা বৈশাখের দিন খোলা হবে ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাষের নতুন খাতা। আর সে উৎসবের নামই ‘হালখাতা’। এছাড়া চৈত্র সংক্রান্তিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবে মেলা। শেষ দিনটি ছাড়াও কোথাও কোথাও শেষ শুক্রবারও ছিল মেলার আয়োজন, থাকছে অন্যান্য দিনেও। বাংলাপিডিয়া থেকে জানা যায়, অতীতে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থরা নাতি-নাতনিসহ মেয়ে জামাইকে সমাদর করে বাড়ি নিয়ে আসত। গৃহস্থরা সবাইকে নতুন জামাকাপড় উপহার দিত। শুধু তাই নয়, আয়োজন করা হতো উন্নতমানের খাওয়া-দাওয়ার। টানা কয়েকদিন এভাবেই চলত আনন্দ-উপভোগ। আধুনিকতা ও শহুরে সভ্যতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার সেই আনন্দমুখর পরিবেশ আর নেই। তবে উৎসব কিংবা মেলার আয়োজন থেমে নেইÑ সে হোক শহর কিংবা গ্রাম। গ্রামের মতো শহরেও গ্রাম বাংলার সাংস্কৃতিক আমেজে বসবে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা। গতকাল ছিল চৈত্র মাসের শেষ শুক্রবার। প্রতিবছরের মতো এবারও ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মাইজবাড়ি গ্রামেও মেলা বসে। শুধু ওই গ্রামেই নয়, মেলা উপলক্ষে পার্শ¦বর্তী আট দশটা গ্রামেও চলে উৎসবের আমেজ। তা গ্রামবাসীর কাছে ঈদ পরবর্তী তৃতীয় বৃহত্তম উৎসব। শুধু মাইজবাড়ি গ্রামেই নয়, চৈত্রের শেষ এই সময়ে মেলা বসছে অজস্র গ্রামে। প্রতিটি গ্রাম যেন চিরায়ত অসাম্প্রদায়িকতার মূর্ত প্রতিচ্ছবি। কী নেই সেইসব মেলায়। পেছনে ফেলে আসা বৃদ্ধের শৈশব, তরুণের উত্তাল প্রেম ও আগামীর হাতছানিÑ যেন মিলেমিশে একাকার। মেলায় গ্রামের অবাল-বৃদ্ধ-বণিতারা দলবেঁধে ছুটে যায়। মেলার প্রতিটি মুহূর্ত যেন দীর্ঘদিন না দেখা একান্ত আপন মানুষটির জলজ্যান্ত সাক্ষাতÑ আত্মীয়তার প্রতিচ্ছবি। গ্রামের মেলাগুলোর অন্যতম আকর্ষণ গুড়ের লাল জিলাপি। গ্রামবাসীর কাছে এর কদরই সবচেয়ে বেশি। মেলায় চৈত্রের তাপদাহে কাঠফাটা রোদে তরমুজের কাটতিও বেশ। হরদম বেচাকেনা চলে মাটির হাড়ি পাতিলসহ নানা ধরনের খেলনা। মেলাগুলোতে যেমন আছে শিশুদের খেলার সামগ্রী তদ্রƒপ পরিবারের নিত্য ব্যবহার্য অনুষজ্ঞও। দেশের আনাচে কানাচে এমন মেলা বসবে শনিবারও। চলবে পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত। আর দেশে সবচেয়ে বড় আয়োজন রমনার বটমূলে। দিনটিতে বাংলাদেশের প্রতি বর্গ ইঞ্জিই মেতে উঠবে উৎসবে। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বাঙালী জানাবে ধিক্কার। সবাই অতীতের গ্লানি মুছে গিয়ে গেয়ে উঠবে নতুনের গান। নির্ধারিত হবে সোনালী ভবিষ্যতের কর্মপন্থা। সব বয়সী মানুষের প্রতিটি মুহূর্তই এখন কাটছে চূড়ান্ত উৎসবের অপেক্ষায়। জানা যায়, চৈত্র সংক্রান্তি শুধু উৎসবেই সীমাবদ্ধ নয়। দিনটিতে নিজের ও প্রকৃতির খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব পড়ে নারীর ওপর। যেন কৃষিজীবী মানুষের প্রজ্ঞার দারুণ প্রকাশ। উপমহাদেশের সনাতন প্রথা অনুসারী মানুষরা এই দিনটিকে খুবই পুণ্যের দিন বলে মনে করেন। সনাতন পঞ্জিকা মতে দিনটিকে গণ্য করা হয় মহাবিষুব সংক্রান্তি। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী এই দিনটিকে নানা উৎসবের মাধ্যমে পালন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিজু ও বৈসাবি উৎসব। সাধারণত চৈত্র সংক্রান্তির আলোচনাতে মেলা, গাজন, পূজার কথা বলা হয়। দেশের নানা প্রান্তে সংক্রান্তি উপলক্ষে আয়োজিত হচ্ছে চৈতালী মেলা। এছাড়া হালখাতার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও সাজানো হয় নতুন করে। মেলায় চলে লাঠিখেলা, গান, আবৃত্তি, সঙযাত্রা, রাবেশে নৃত্য আর ভূত তাড়ানোর উৎসব। বিশেষ করে এই উৎসবগুলো হয়ে থাকে নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, দিনাজপুরের ফুলছড়িঘাট এলাকা, কুমিল্লার লাঙ্গলকোট ও ঢাকার সাভার, ধামরাই অঞ্চলের মেলায়।
×