ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

চারুকলার বকুলতলায় দিনভর গান কবিতায় রুদ্রমেলা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৯ এপ্রিল ২০১৬

চারুকলার বকুলতলায় দিনভর গান কবিতায় রুদ্রমেলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাথার ওপর তখন চৈত্রের খরতাপ। তবে এই তাপদাহের পুরোটা আছড়ে পড়ল না জমিনে। বাধা হয়ে দাঁড়াল বিশাল বকুল গাছটি। চারপাশ বেষ্টন করে থাকা বিশাল পুষ্পবৃক্ষটির লতা-পাতা যেন শুষে নিল সকালের গনগনে রোদটুকু। সেই বৃক্ষ ছায়াতলে দিনভর স্মরণ করা হলো তারুণ্যের প্রতীক নামে পরিচিত প্রয়াত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহকে। সকাল থেকে রাত অবধি গান আর কবিতায় কবিকে জানানো হলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শুক্রবার দিনব্যাপী রুদ্র মেলার আয়োজন করে রুদ্র সংসদ। চৈতালী সকালে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় গীতিকবি রুদ্রর তুমুল জনপ্রিয় সেই গানের পরিবেশনার মাধ্যমে। মঞ্চে আসে বাগেরহাটের মিঠাখালীতে গড়া তারই গানের দল অন্তর বাজাও। বাদ্যযন্ত্রসহযোগে গোলাম মোহাম্মদ ইদুর নেতৃত্বে দলটি গেয়ে শোনায়Ñ ভালো আছি, ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো/দিও তোমার মালাখানি বাউলের এই মনটারে/ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয়জুড়ে ..। গান শেষে শুরু হয় রুদ্রকে নিবেদিত উদ্বোধনী আলোচনা। মেলা উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক আবেদ খান। প্রধান অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। রুদ্রর সতীর্থ কবি নিষাদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আহ্্কাম উল্লাহ্্, ডাকসুর সাবেক সাহিত্য সম্পাদক ইসতেকবাল হোসেন, কবি শেখর বরণ, রুদ্রর অনুজ সুবীর ওবায়েদ প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন রুদ্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী। কবি রফিক আজাদ, অভিনয়শিল্পী দিতি, চিত্রশিল্পী ও নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠুসহ সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রয়াত ব্যক্তিত্বদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী ফয়জুল আলম পাপ্পু। উদ্বোধনী বক্তব্যে আবেদ খান বলেন, রুদ্র একটি তারুণ্যের নাম। তার নামের মধ্যেই সে তারুণ্য আছে। রুদ্ররা সব কালেই ছিল এবং থাকবে। তাদের মতো তরুণরাই প্রথা ভাঙ্গে। আর প্রথা না ভাঙলে বিপ্লব হয় না; হয় না নতুন সৃজন। এভাবেই পুরনো প্রথা ভেঙ্গে আবার ফিরে আসে রুদ্ররা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, রুদ্র সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একপরিপূর্ণ মানুষ। অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত ও গণতান্ত্রিক স্বদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছেন ও কাজ করেছেন। এ কারণেই তার গান ও কবিতা শুধু জনপ্রিয়ই নয় অনেকের কাছে ধরা দিয়েছে আদর্শ হিসেবে। স্বপ্নবাজ এই তরুণ সব সময়ই ছিলেন প্রতিবাদী। সেই প্রতিবাদী চেতনায় থেকেই সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ও জাতীয় কবিতা পরিষদ পালন করেছে সংগঠকের ভূমিকা। কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, রুদ্রকে বোঝার জন্য কবিতা বোঝার প্রয়োজন পড়ে না, জীবনকে বোঝাই যথেষ্ট। তিনি শুধু কবি ছিলেন, তা নয়। দেশ ও মানুষের কথা বিবেচনা করে রাজপথে থেকেছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রেখেছেন সোচ্চার ভূমিকা। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। শুরুতেই সম্মেলক গান নিয়ে মঞ্চে আসে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। দলটি পরিবেশন করেÑ আবার জমবে মেলা হাটতলা বটতলা নবান্নের উৎসবে, বৈশাখ মাসে আইসো বন্ধু আম-কাঁঠাল-জাম লইয়া ও জনতার সংগ্রাম চলছেই চলবেই শিরোনামের তিনটি গান। সুরধ্বনি শেষে হলে শুরু হয় কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ। আবৃত্তিশিল্পী তামান্না তিথি পাঠ করেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর প্রেমের কবিতা ‘এ কেমন ভ্রান্তি আমার’। সোনালী সকাল দেব কর্ম ও কবিতায় আবৃত্তি প্রযোজনা উপস্থাপন করে প্রকাশ সাহিত্য সংগঠন। এছাড়াও দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে সংবৃতা আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র এবং চারুকণ্ঠ আবৃত্তি সংসদ। একক আবৃত্তি করেন ফয়জুল আলম পাপ্পু, জি এম মোর্শেদ, জালাল উদ্দিন হীরা ও ঝর্ণা ম-ল। মাঝে দুপুরের বিরতি দিয়ে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলে কবিতা ও গানে সাজানো রুদ্র মেলা। মাহবুবুল হায়দার মোহন স্মরণ ও সম্মাননা প্রদান ॥ বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক সভাপতি মাহবুবুল হায়দার মোহনের চতুর্থ প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে শুক্রবার স্মরণ ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী এই আয়োজন করে। এ বছর মাহবুবুল হায়দার মোহন স্মৃতি পদক পেয়েছেন সমাজসেবক ও সংস্কৃতি অনুরাগী দিলিপ দাস গুপ্ত। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি নীলুফার জাহান চিনুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী ফকির আলমগীর ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি ম-লীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ঝর্ণা আলমগীর। ‘যাবার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যাও’ ॥ প্রকৃতিতে এখন বেজে চলেছে বসন্তের বিদায়ী সুর। আর বিদায়ের আগে নাগরিক জীবনকে বসন্ত যেন আরেকবার রাঙিয়ে দিয়ে যায় তারই আহ্বান জানানো হলো নাচ, গান ও পাঠে। সেই সুবাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাসন্তী রংয়ে সেজেছিল শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চ। ‘আজি দখিনা দুয়ার খোলা’ গানের সঙ্গে ভাবনার শিল্পীদের সমবেত নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বসন্তকে বিদায় জানানোর আয়োজনের সূচনা হয়। ঋতুরাজের বিদায় পর্বে ‘যাবার আগে, রাঙিয়ে দিয়ে যাও’ শিরোনামের এই অনন্য আয়োজনটি করে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখা। সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। উদ্বোধনী নাচ শেষে সম্মেলক কণ্ঠে গীত হয় ‘রঙ লাগলো বনে বনে’। এরপর একক কন্ঠে সেমন্তী মঞ্জুরী গেয়ে শোনান ‘বাসন্তী হে ভূবন মোহিনী’। একক শেষে আবার সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয় ‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে’। নৃত্যন্দনের শিল্পীরা ‘সব দিবি কে’ গানের সঙ্গে পরিবেশন করেন বসন্তের নাচ। গোটা নন্দন মঞ্চের চারপাশে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন বিদায়ী বসন্তের এ আয়োজনকে ঘিরে। নাচে গানে ভরে উঠে দর্শক-শ্রোতার মন-প্রাণ। সমবেত কণ্ঠে আরও গীত হয় ‘বাকি আমি রাখবো না’, ‘বসন্ত তোর শেষ করে দে’ গানগুলো। দ্বৈত কণ্ঠে আশরাফুজ্জামান ও শ্রেয়া পরিবেশন করেন ‘যদি তারে নাই চিনিলে’, সেমন্তী মঞ্জুরী ও সুদীপ সরকার শোনান ‘আমার এই পথ ভোলা এক পথিক’। সুস্মিতা আহমেদ গেয়ে শোনান ‘আমার এই পথ চাওয়াতেই’, মুস্তাফিজুর রহমান তুর্য শোনান ‘চলে যায় মরি হায়’, মহিউজ্জামান ময়না পরিবেশন করেন ‘অনেক পাওয়ার মাঝে মাঝে’। আরও দুইটি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যন্দন’র শিল্পীরা। আবৃত্তি করেন ডালিয়া আহমেদ ও বেলায়েত হোসেন। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বসন্তকে বিদায় জানানোর এই সন্ধ্যাটি। দুই নাট্যজনকে বদরুদ্দীন হোসাইন স্মারক সম্মাননা ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন ও এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে চলছে সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মৃতি নাট্যোৎসব। পদাতিক নাট্য সংসদ (টিএসসি) আয়োজিত উৎসবের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বিকেলে দুই নাট্যজনকে প্রদান করা হয় সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মৃতি স্মারক সম্মাননা। এ বছর এ সম্মাননা পেয়েছেন নাট্যজন ড. ইনামুল হক ও সারা যাকের। তাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এরপর সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে পদাতিক নাট্য সংসদ (টিএসসি) মঞ্চস্থ করেন ‘কালরাত্রি’। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় মঞ্চস্থ করে ‘নীলাখ্যান’। বাকরখানী ও মাখনা প্রদর্শনী ॥ চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাকরখানী ও মাখনা প্রদর্শনী আয়োজন হয়ে গেল। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির সেমিনার হলে প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকাবাসী ও বিশ্ব কলাকেন্দ্র এলিট মেহেদী বাকরখানী ও মাখনা প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের কাজাখস্তান দূতাবাসের কনসাল জেনারেল কাজী শামসুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও বিশ্ব কলাকেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রেজাউর রহমান ও সেসোলিস দেশের অনারী কনসাল আমিরুজ্জামান। প্রদর্শনীতে পনির বাকরখানী, চিনি বাকরখানী, ছানা বাকরখানী, কাবাব বাকরখানী, খাস্তা বাকরখানী, নূন্তা বাকরখানী, মিষ্টি বাকরখানীসহ লাড্ডু, জিলাপি, সূতি কাবাব স্থান পায়।
×