ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বৈশাখে মাসজুড়ে আয়োজন

বিনোদনের অভিনব স্পট কুয়াকাটায় ইলিশপার্ক

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৯ এপ্রিল ২০১৬

বিনোদনের অভিনব স্পট কুয়াকাটায় ইলিশপার্ক

মেজবাহউদ্দিন মাননু ॥ কুয়াকাটায় এবার জমে উঠবে নতুন ধারার এক বিনোদন মাধ্যম ইলিশ পার্ক। পহেলা বৈশাখ থেকে বাংলা নববর্ষের পুরো মাসজুড়ে বিশেষ আয়োজন থাকছে কুয়াকাটার এই ইলিশ পার্কে। প্রকৃতির অন্যতম অপার সৌন্দর্য কুয়াকাটার পর্যটন এলাকায় বিনোদনের ক্ষেত্রে নয়া সংযোজন হচ্ছে এই ইলিশ পার্ক। ইলিশ পার্ক কর্তৃপক্ষ বাংলা নববর্ষকে ঘিরে মাসব্যাপী আয়োজন হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিশেষ বিশেষ মজাদার খাবার। পর্যটক-দর্শনার্থীর কাছে ইতোমধ্যে পার্কটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর বৈশাখজুড়ে বিশেষ আয়োজনে আরও একদফা আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে অভিনব এই পার্ক। বাইরে থেকে হঠাৎ পার্কটিতে প্রবেশ করলেই পুবকোণে বিশালকায় একটি ইলিশ যেন কাত করে রাখা হয়েছে। আসলে এটি ইলিশের প্রতিকৃতি। কাঠের স্ট্রাকচারের চারদিকে স্টিল দিয়ে খচিত ইলিশের আদলে গড়া একটি রেস্তরাঁ। একসঙ্গে ৫০ জন ইলিশের পেটের মধ্যে ঢুকে বসে খেতে পারবেন। প্রায় ৭২ ফুট দীর্ঘ এই ইলিশের পেটের প্রস্থ ১৬ ফুট। কুয়াকাটা শূন্য পয়েন্ট থেকে একটু পেছনে মাত্র ১০ টাকা ভ্যান ভাড়ায় পৌঁছানো যায় পার্কটিতে। ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারি এর যাত্রা শুরু হয়। প্রায় ৬৬ শতক জমির ওপরে পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। সংস্কৃতিপ্রেমী ও গণমাধ্যমকর্মী রুমান ইমতিয়াজ কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের সূর্যোদয়-সুর্যাস্ত দেখার পর আর কিছু না থাকায় বিনোদনের জন্য এর পরিকল্পনা করেছেন। পার্কের মধ্যে রয়েছে বিশাল আকৃতির বাঘ, ব্যাঙ, হরিণ, সিংহ, হাতি, ক্যাঙ্গারু, সারস ও বানরের প্রতিকৃতি। রয়েছে জমিয়ে আড্ডা দেয়ার পাঁচটি গোলঘর, যেখানে ইচ্ছা করলে হালকা নাস্তাসহ ভারি খাবার খেতে পারেন। পার্কটিতে রয়েছে কুয়াকাটার সূর্যোদয়-সুর্যাস্তসহ রাখাইন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন কর্মজীবনের স্থিরচিত্র। স্থিরচিত্রের সম্ভারে রয়েছে জেলে জীবনের মাছ ধরার দৃশ্য। ফটোগ্যালারি দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। চারদিকে বাউন্ডারি ঘেরা এ পার্কটির অভ্যন্তরে রয়েছে আঁকাবাঁকা সরু লেক। লেকের স্বচ্ছ পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিচরণ দেখা মেলে। অনুমতি নিয়ে আপনি বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করতে পারবেন। ওই মাছ দিয়ে লাঞ্চ কিংবা ডিনারও সারতে পারবেন। কাঠের বসার আসনগুলোর রয়েছে আলাদা বৈচিত্র্য। কোন্ গাছের তা চেনার উপায় রাখা হয়েছে। বৈচিত্র্যময় এ পার্কটিতে প্রবেশে দর্শনার্থী ফি রয়েছে জনপ্রতি বিশ টাকা। তবে খাবারের জন্য গেলে আবার বিশেষ ছাড় রয়েছে। বিশেষ কনসার্টের জন্য রয়েছে সাম্পান মঞ্চ। এটি ভাড়া নেয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতিদিন এ পার্কটিতে একটু বিনোদনের জন্য শত শত পর্যটক-দর্শনার্থী আসছেন। ক্রমশ বাড়ছে আগতদের সংখ্যা। পর্যটক-দর্শনার্থীর বিশেষ আকর্ষণের জন্য এ বাংলা নববর্ষে বিশেষ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে এবার জমবে মজা ইলিশ পার্কে, এ বৈশাখে। পহেলা বৈশাখ থেকে প্রতিদিন সকালে পান্তা ইলিশসহ থাকছে হরেক রকমের ভর্তা দিয়ে খাবার। দুপুরের খাবারে থাকছে সরষে ইলিশ, ভুনা ইলিশ, ইলিশ কারি, শাক-সবজি, শুঁটকিসহ ৩০ আইটেমের ভর্তা। সঙ্গে থাকছে মজাদার চাটনি। সন্ধ্যার পর পার্কে প্রবেশ করলে তাদের খেতে দেয়া হচ্ছে নকশিপিঠা। রাতের খাবারে থাকছে ইলিশ ভাজা, চিংড়ি ভর্তা, ডাল, শাক-সবজি। এসব খাবার পরিবেশন হবে মাটির থালা-বাসনে। গ্লাস থেকে সবকিছুই থাকছে মাটির বানানো, যেন বাঙালীর প্রিয় এক পরিবেশ। ঢাকাসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইলিশ পার্কের বৈশাখী আয়োজনে অংশ নিতে পার্ক কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর ব্যবস্থা করেছে প্যাকেজ ট্যুরের। কম বাজেটে কুয়াকাটায় তিন রাত ও দুই দিনের ভ্রমণ করে আসতে পারবেন আগ্রহীরা। ইলিশ পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে তারা শুধু পহেলা বৈশাখকে ঘিরেই সবকিছু করছেন। ইলিশ পার্ক এই আনন্দ উৎসবকে মাসজুড়ে ধরে রাখতে এই আয়োজন করছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অসংখ্য পর্যটক-দর্শনার্থী তার পার্কের মাসব্যাপী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। আপনিও আসুন এই ইলিশ পার্কে।
×