ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পররাষ্ট্র দফতরের ব্রিফিং ॥ জঙ্গী ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরকারকে অব্যাহত সমর্থন

আতঙ্কিত ব্লগারদের আশ্রয় দেয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৯ এপ্রিল ২০১৬

আতঙ্কিত ব্লগারদের আশ্রয় দেয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ চরম ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশী ব্লগারদের আশ্রয় দেয়ার কথা বিবেচনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ও এ ধরনের নৃশংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে দেশটি। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে উপ মুখপাত্র মার্ক টোনার এ তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়া শুক্রবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকেও ব্লগার নাজিমুদ্দিন হত্যার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অনলাইন এক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশের কিছু ব্লগারকে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি তাদের বিবেচনায় রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপ মুখপাত্র মার্ক টোনার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, চরম ঝুঁকির মধ্যে থাকা নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্লগারের জন্য এটি একটি বিকল্প হতে পারে, এ বিষয়টি বিবেচনায় আছে। বিভিন্ন সময়ে জঙ্গী হামলা ও হুমকির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মুক্তমনা ব্লগার, লেখকদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দিতে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির কাছে সুপারিশ করে ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম- ইউএসসিআইআরএফ। ওই চিঠির প্রসঙ্গ তুলে এক সাংবাদিক টোনারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন- ব্লগারদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়টি নিয়ে কোন অগ্রগতি হয়েছে কি না। টোনার বলেন, বিষয়টি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতরের আওতাধীন। এ বিষয়ে তার হাতে খুব বেশি তথ্য নেই। পররাষ্ট্র দফতরের উপ মুখপাত্র ব্রিফিংয়ের শুরুতেই নাজিম হত্যার প্রসঙ্গ তোলেন। এই হত্যাকা-কে একটি গুরুতর ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করে টোনার বলেন, সহিংস উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে। আমরা নাজিমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। বাংলাদেশে যারা সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। টোনার বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও মুক্তমতের যে গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারী, তা সহিংসতার কাছে পরাজিত হওয়ার নয়- এটা নাজিমুদ্দিন জানতেন, বাংলাদেশের ইতিহাসও সেই সাক্ষ্য দেয়। বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উগ্র সহিংসতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার কারণে নাজিম উদ্দিন সামাদকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তীব্র নিন্দা জানায়। নাজিম উদ্দিনের পরিবারের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং এ ধরনের নৃশংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যাবে। শুক্রবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে গণমাধ্যমে এই বিবৃতি সরবরাহ করা হয়। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি ইউএসসিআইআরএফের পক্ষ থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, ২০১৫ সালে লেখক-ব্লগার অভিজিত রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্দ বিজয় দাশ ও নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় এবং প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন খুন হয়েছেন তাদের লেখা ও বিশ্বাসের কারণে। আরও অনেককে হুমকি দিয়ে হিট লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশে যে ব্লগাররা ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছেন, তাদের মধ্যে একটি নির্দিষ্টসংখ্যক লেখককে আশ্রয় দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানায় ফেডারেল সরকারের স্বাধীন কমিশন ইউএসসিআইআরএফ। ২৭ বছর বয়সী ব্লগার নাজিমকে বুধবার রাতে ঢাকার সূত্রাপুরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সিলেটে গণজাগরণ আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে কাজ করা নাজিম ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনলাইনে লেখালেখিতেও সক্রিয় ছিলেন। এর আগে ব্লগার-লেখক-প্রকাশক হত্যার ঘটনাগুলোর মতো একই কায়দায় খুন করা হয়েছে নাজিমকে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সাল থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে ছয় জন অনলাইন এ্যাকটিভিস্ট, ব্লগার, লেখক ও প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ নাজিমুদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যেই তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মানবাধিকার সংগঠন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) ও লেখকদের সংগঠন পেন ইন্টারন্যাশনাল।
×