ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামবাসীর সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনায় চলমান সঙ্কট দূর ॥ জানাল এস আলম গ্রুপ

জটিলতার অবসান- বাঁশখালীতেই বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৯ এপ্রিল ২০১৬

জটিলতার অবসান- বাঁশখালীতেই বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাঁশখালীতেই হচ্ছে এস আলম গ্রুপের বিদ্যুত কেন্দ্র। শুক্রবার গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনায় বিদ্যুত কেন্দ্রটি নিয়ে চলমান সঙ্কট দূর হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি এস আলম গ্রুপের এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পুলিশ গ্রামবাসীর সংঘর্ষে নিহত হন চারজন। এরপর বৃহস্পতিবার রাজধানীতে আয়োজিত একটি কর্মশালায় উদ্যোক্তা চাইলে বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থানান্তরে সরকারের সহায়তার ইঙ্গিত দেয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা শুক্রবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য যাদের কাছ থেকে জমি কিনেছি তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। তারা আমাদের পরিবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পরিবেশের কোন ক্ষতি না হলে তাদের বিদ্যুত কেন্দ্রটি করতে দিতে কোন আপত্তি নেই। তিনি জানান, আমরা তাদের পরিবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। তারা এখন বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে অনাপত্তির জায়গা থেকে সরে এসেছে। তিনি জানান, বাঁশখালীর গ-ামারা ইউনিয়নে আমরা বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য ৯০০ একর জমি কিনেছি। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। দেশের সব থেকে বড় কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারও বিব্রত। পরে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে আলোচনায় বিদ্যুত কেন্দ্রটি সরিয়ে নেয়া যায় কি না তা বিবেচনা করতে বলা হয়। তারা বিকল্প হিসেবে বাঁশখালীর উজানদিয়া এলাকায় তাদের জমি রয়েছে বলে জানায়। গ্রামবাসী বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপনে তীব্র বিরোধিতা করলে তা স্থানান্তরের কথা জানায়। অবশ্য তার আগেই স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করার কথা জানানো হয়। এস আলম গ্রুপ সূত্র জানায়, শুক্রবার জমির মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ সময় অনেকেই কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের পরিবেশ দূষণ নিয়ে নিজেদের শঙ্কার কথা জানায়। তারা বলেন, কেউ কেউ বোঝানোর চেষ্টা করেছে কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র হলে এই এলাকা বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। এজন্যই তারা প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামে। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বলেন, এখানে জমি কোন সমস্যা নয়। আমরা তাদের পরিবেশের বিষয়গুলো দেখিয়ে এনেছি। প্রয়োজন হলে আবার দেখাব। তিনি বলেন, এখন আমরা মনে করছি তা আর কোন সমস্যা হবে না। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পিডিবি’র সঙ্গে বিদ্যুত কেন্দ্রটির চুক্তি হয়। বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি করার এক মাস পার না হতেই মানুষ হত্যার মতো ঘটনা ঘটল। এস আলম গ্রুপের দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলারের এই বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে ৭৫ শতাংশ ঋণ দেবে চীন। যার পরিমাণ এক দশমিক ৭৩৯ বিলিয়ন ডলার। আমদানি করা কয়লায় বিদ্যুত কেন্দ্রটি চলবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দর ধরা হয়েছে ছয় টাকা ৬১ পয়সা। এখানে মার্চ মাস থেকেই অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করার কথা ছিল। দেশের বেসরকারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে এস আলম গ্রুপই প্রথম কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রের অর্থ সংস্থানের সুখবর দিল। এর আগে যেসব কোম্পানি কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি করেছে তাদের কেউ অর্থ সংস্থানের খবর দিতে পারেনি। এস এস পাওয়ার লিমিটেড ১ ও ২ নামে দুই কোম্পানি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ৬১২ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট স্থাপন করবে। দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পটির ৭৫ শতাংশ ঋণ সংস্থান হবে চীন থেকে। যার পরিমাণ এক দশমিক ৭৩৯ বিলিয়ন ডলার। দুটি চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কনস্ট্রাশন কর্পোরেশন ও এইচটিজি ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ এস আলমের সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে কাজ করছে। মোট শেয়ারের ৭০ শতাংশ থাকছে এস আলম গ্রুপের কাছে। সেপকো’র কাছে থাকছে ২০ শতাংশ এবং এইচটিজি ডেভেলপমেন্টের হাতে থাকছে ১০ শতাংশ শেয়ার। সেপকোই প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। গত বছরের ২৯ জুন সেপকোর সঙ্গে চুক্তি হয় তাদের। কেন্দ্রের মূল যন্ত্রাংশও সরবরাহ করবে সেপকো। চুক্তি কার্যকরের দিন থেকে ৪৫ মাসের মধ্যে কেন্দ্রটি থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুত পাওয়া যাবে। এস আলম গ্রুপের তথ্য মতে, ১৬ নবেম্বর ২০১৯ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে পারবে।
×