ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে কর্মী নেয়া বন্ধ দীর্ঘ ৬ বছর;###;মালয়েশিয়া চুক্তি করে একদিনের মাথায়ই স্থগিত রাখল

দুটি শ্রমবাজারে চলছে শুধু আশ্বাসের পালা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৯ এপ্রিল ২০১৬

দুটি শ্রমবাজারে চলছে শুধু আশ্বাসের পালা

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি শ্রমবাজার কেবল আশ্বাস আর আশ্বাসের মধ্যেই চলছে; কর্মী আর নিয়োগ হচ্ছে না। মালয়েশিয়া চুক্তি করে এক দিনের মাথায় সেই চুক্তি স্থগিত করেছে। পরে জানা গেলÑ সৌদি কর্তৃপক্ষ চুক্তি স্থগিত করেনি, তবে কর্মীও নিচ্ছে না। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের চুক্তি হয়। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, প্রতি মাসে ১০ হাজার করে কর্মী নিয়োগ করবে দেশটি। চুক্তির পর কেটে গেছে এক বছর। কিন্তু একজন কর্মীও চুক্তির আওতায় দেশটিতে যেতে পারেননি। এ দুটি দেশই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। বাজার দুটি খোলার জন্য সব চেষ্টাই এখন ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। চুক্তির পর আরও কয়েক দফা সৌদি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। দেশ থেকেও কয়েক দফা প্রতিনিধি দল সৌদি আরব সফর করেছে। প্রতি বৈঠকে বলা হয়েছে, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যে সৌদি বাজার খুলে যাবে। সেই বাজার আর খোলেনি। দীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজারটি বন্ধ রয়েছে। বাজারটি চালু করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি সৌদি আরব সফর করেও এসেছেন। দেশটি সফর শেষ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি শ্রমবাজার অনেকটা তৈরিই আছে। কোথাও একটু সমস্যার কারণে বাজারটি চালু করা যাচ্ছে না। আশা করি বাজারটি কিছু দিনের মধ্যে চালু হবে। মন্ত্রী গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সৌদি সফর করে আসার পরও সৌদি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেছে। বিষয়টি আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কার্যকর কোন কিছু হয়নি। সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ ৬ বছর শ্রমবাজারটি বন্ধ থাকার পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আবারও বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দেয়। সেই সময় সৌদি কর্তৃপক্ষ একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করে। রাজধানীর ইস্কাটনের প্রবাসীকল্যাণ ভবনে তৎকালীন সচিব মোঃ ইফতেখার হায়দার ও সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপমন্ত্রী আহমেদ আল ফাহাদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর আলোচনা করা হয় কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ হবে। এ বিষয়টি চূড়ান্ত করতে জানুয়ারি মাসে ১৯ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধি দল আবার ঢাকা সফর করে গেছে। তারা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করে। বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য সুখবর দেয়। তারা জানায়, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। ব্যয় কমিয়ে প্রতিমাসে ১০ হাজার করে কর্মী নেয়ার ঘোষণা দেয়। দুই দেশের মধ্যে এ চুক্তির মধ্য দিয়ে কর্মী পাঠানোর পথ সুগম হয়েছে বলে জানানো হয়। আলোচনায় ঠিক হয়েছিল রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো হবে। তবে যে কোন অনিয়ম ধরতে সরকারের কড়া নজরদারি রাখার কথা বলেছেন বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী। একজন কর্মী কত বেতন-ভাতা পাবেন তা নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়। সব শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছেÑ ন্যূনতম বেতন ১২শ’ থেকে ১৫শ’ রিয়াল (১ রিয়াল সমান ২১ টাকা)। বৈঠকের একপর্যায়ে বলা হয় এর নিচে হলে কর্মী পাঠানো হবে না। তখন সৌদি প্রতিনিধি দল প্রস্তাবটি মেনে নেয়। সম্প্রতি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ থেকে সরকারী নিয়ন্ত্রণে কর্মী যাবে সৌদি আরবে। বেসরকারী জনশক্তি রফতানিকারকরাই শতভাগ লোক পাঠাবেন। তবে এখানে কোন প্রকার মধ্যস্বত্বভোগী থাকতে পারবেন না। রেজিস্ট্রেশনকৃত কর্মীদের তালিকা অনুযায়ী কর্মী নিয়োগ করতে হবে। কোন দালালের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করা যাবে না। যদি কোন জনশক্তি রফতানিকারকদের বিরুদ্ধে সৌদিতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার লাইসেন্স বাতিলসহ আইনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সৌদি আরব যেতে একজন কর্মীর ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না। এ খরচের বাইরে কোন খরচ কেউ নিতে পারবেন না। সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা অনুযায়ী এ বছর থেকে তারা কর্মী নিয়োগ করবে। তারা দক্ষ ও আদা দক্ষ কর্মী নিয়োগ করবে। সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা সমঝোতা হয়েছে। এ সমঝোতার মাধ্যমেই দেশটিতে কর্মী নিয়োগ করা হবে। তবে নিয়োগের বেলায় কিছু শর্ত মানতে হবে। শর্ত মেনে কর্মী পাঠাতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা না। আমাদের দেশে তো আর আইএস নেই। তাহলে কেন সৌদি কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে কর্মী নেবে না। অবশ্যই বাংলাদেশ থেকে তাদের কর্মী নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশী কর্মীরা পরিশ্রমী। তাদের অল্প বেতন দেয়া হয়। অন্য যে কোন দেশ থেকে কর্মী নিতে হলে অনেক বেশি টাকা বেতন দিতে হবে। তাই আমি মনে করি সৌদি আরব আমাদের কাছ থেকেই কর্মী নেবে। মন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর আরও এক দফা সৌদি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করে। তারা বায়রার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা করে। সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল তখন পর্যন্ত। গত ৪ মাসে সৌদি আরব কর্মী নিয়োগের বেলায় কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। হঠাৎ করে তারা এ বিষয়টি নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমাদের তরফ থেকে বার বার তাগিদ দেয়া হলেও তারা এ বিষয়ে কোন কথা বলছে না। মালয়েশিয়া তবু চুক্তি করে চুক্তি স্থগিত করেছে। উল্লেখ্য, সৌদি সরকার ২০১৩ সালের ১০ মে থেকে ৩ নবেম্বর পর্যন্ত সেখানে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বৈধতা দিয়েছে। একই সঙ্গে ইকামা ও পেশা পরিবর্তনের সুযোগও দেয়া হয়। সেই সময় সাত লাখ ৯৯ হাজার ১৮৬ জন বাংলাদেশী কর্মী সাধারণ ক্ষমার সুবিধা পেয়েছিলেন।
×