ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণিল বৈশাখের আগমনী বার্তা- রাঙিয়ে তুলেছে দেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৯ এপ্রিল ২০১৬

বর্ণিল বৈশাখের আগমনী বার্তা- রাঙিয়ে  তুলেছে দেশ

মনোয়ার হোসেন ॥ ঋতুচক্রে বাজছে বসন্তের বিদায়ঘণ্টা। আসছে নয়া ঋতু গ্রীষ্ম। আর শুধু নতুন ঋতুই নয়, এর মাঝেই লুকিয়ে আছে নতুন বাংলা বছরের আগমনী বার্তা। বিদায় নেবে ১৪২২ বঙ্গাব্দ, নতুন বারতা নিয়ে হাজির হবে বঙ্গাব্দ ১৪২৩। হাতে আছে মাত্র পাঁচটি দিন। তারপর প্রকাশিত হবে বাঙালী জাতিসত্তার আপন সংস্কৃতির স্নিগ্ধতা। তাই তো শহরজুড়ে চোখে পড়ছে বর্ষবরণের আবাহনী রং। বর্ষবরণকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে বইছে সাজ সাজ রব। সেই সূত্রে চৈত্রের খরতাপের ভেতরেও নাগরিকের নগর ঢাকা পেয়েছে সজীবতা। সব মিলিয়ে যেন নববর্ষ উদ্্যাপনের অনাবিল আহ্বানে মেতেছে যান্ত্রিক এই শহর। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগের আশপাশে এখন দৃশ্যমান সুন্দরের হাতছানি। জাদুঘর পেরিয়ে চারুকলা অনুষদে ঢুকলেই খোঁজ মেলে বর্ষবরণের বর্ণাঢ্যতার। লিচুতলার সবুজ প্রান্তরজুড়ে নির্মিত হচ্ছে হাতি-ঘোড়াসহ মঙ্গল শোভাযাত্রার নান্দনিক সব শিল্প-কাঠামো। রঙের ওপর রঙ চাপিয়ে হাতে হাত ধরে মুখোশের গায়ে রঙ লেপছে চারুশিক্ষার্থীরা। আবহমান বাংলার লোকজ অনুষঙ্গকে ধারণ করে চারুকলার করিডরে শোভা পাচ্ছে বিচিত্র বিষয় ও বর্ণের রকমারি সরাচিত্র। এতো গেল চারুকলার কথা। অন্যদিকে রমনার বটমূলে গানে গানে প্রভাতী বর্ষবরণের আয়োজন রাঙাতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ধানম-ির ছায়ানট ভবনে চলছে মহড়া। এসব আনুষ্ঠানিকতার বাইরে নতুন পোশাক ছাড়া যেন পূর্ণতা পায় না বাঙালীর নববর্ষ উদ্্যাপন। সেই চাহিদা মেটানোর দৃশ্য নজরে পড়ে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট থেকে শুরু করে বসুন্ধরা শপিং মলসহ দেশীয় ফ্যাশন হাউসনির্ভর মার্কেটগুলোয়। পাশাপাশি পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত হচ্ছেন চিরায়ত হালখাতার হিসাব হাল নাগাদের তৎপরতায়। এবার আসি চারুকলার বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক বা সাংগঠনিকভাবে নববর্ষ উদ্্যাপনের কথায়। ধাবমান এই নগরে চলছে বিভিন্ন সংগঠনের নববর্ষকে স্বাগত জানানোর নানামুখী প্রস্তুতি। সেই বিপুল কর্মপ্রবাহে এখন রংময় হয়ে উঠেছে রাজধানীর শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গন। তবে অনেক আনন্দের মাঝেও এবার বর্ষবরণে শঙ্কার বার্তা জুড়ে দিয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিধি-নিষেধ। বিশেষ করে বিকেল পাঁচটার মধ্যে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার নির্দেশে হতচকিত হয়েছিল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। নববর্ষের বিকেল রাত অবধি নানা আয়োজনে শামিল আনন্দ উপভোগকারী নাগরিকরাও যেন ভুগছিলেন কিছুটা নিরাশায়। বর্ষবরণে ভুভুজেলার মতো উৎকট শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্র নিষিদ্ধ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও বৈকালিক অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ জানিয়েছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। তাদের প্রতিবাদের জের ধরে অবশেষে কেটে গেছে সেই শঙ্কা। নববর্ষের বৈকালিক আনুষ্ঠানিকতা প্রসঙ্গে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বাংলার আদি রীতি অনুযায়ী বরাবরই নববর্ষের দিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকে নানা আয়োজন। এ বিষয়ে বিধি-নিষেধের প্রেক্ষিতে জোটের ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার বৈঠক করে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সেখানে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিকেলে কোন অনুষ্ঠান না থাকায় রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল ৪টার পর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়া নিয়ম মেনে অন্যান্য স্থানে যথারীতি বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হবে। ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর কিংবা কলাবাগান মাঠে নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকায় এসব জায়গায় রাত ৮টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান হবে। মিলনায়তনের ক্ষেত্রে থাকবে না কোন ধরনের বাধ্যবাধকতা। এছাড়া যে কোন ধরনের বৈশাখী মেলা সন্ধ্যার পরও চলবে। ছায়ানটের প্রভাতী সঙ্গীতায়োজন ॥ প্রতিবছরের মতো এবার রমনা বটমূলে প্রভাতী সঙ্গীতায়োজনের মাধ্যমে বর্ষবরণ করবে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। গানে গানে উচ্চারিত হবে মানবতা ও শান্তির বাণী। বিশাল এ আয়োজন সফলের প্রস্তুতিতে এখন মুখরিত ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে চলছে মহড়া। এবারের ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন প্রসঙ্গে সংগঠনের সঙ্গীত শিক্ষক শারমিন সাথী ইসলাম ময়না জনকণ্ঠকে জানান, বরাবরের মতো সকাল সোয়া ৬টায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। ভোরের রাগ আলাপ দিয়ে দিয়ে আবাহন করা হবে নববর্ষকে। যুগল কণ্ঠে গাইবেন সুস্মিতা দেবনাথ শুচি ও অভিজিত কু-। পুরো আয়োজনজুড়ে থাকবে একক ও সম্মেলক সঙ্গীত, কবিতা আবৃত্তি ও পাঠ। সম্মেলক কণ্ঠে প্রথমে প্রভাতী গান ও পরে গাওয়া হবে মানবতার গান। গীত হবে রবীন্দ্র, নজরুল ও লালনসহ বাংলার বরেণ্য গীতিকবিদের গান। সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত রবীন্দ্র ও নজরুলসঙ্গীতের মধ্যে থাকবেÑ আমি ভয় করবো না, আমি মারের সাগর পাড়ি দেব, ওই মহামানব আসে, আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে, বলো ভাই মাভৈ মাভৈ, টলমল পদভরে, আমরা তো উজ্জ্বল সূর্য, বাংলা ভূমির প্রেমে আমার প্রাণ হইলো পাগল, বাংলা মার দুর্নিবার আমরা তরুণ দল প্রভৃতি। গাওয়া হবে মানবতার বার্তাবহ লালন সাঁইজির গান। গীত হবেÑ সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে ও মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি শিরোনামের সঙ্গীত। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হবে এই প্রভাতী সঙ্গীতানুষ্ঠান। তার আগে সমাপনী কথনে অংশ নেবেন ছায়ানটের সভাপতি সন্্জীদা খাতুন। পুরো অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতার। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি ॥ পহেলা বৈশাখে রাজধানীতে সবচেয়ে রং ছড়ানো আয়োজনটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। নানা রঙে রংময় এ শোভাযাত্রাটি কালক্রমে পরিণত হয়েছে নববর্ষ উদ্্যাপনের অন্যতম জাতীয় অনুষঙ্গে। শুক্রবার সকালে চারুকলার সবুজ-শ্যামল আঙিনায় প্রবেশ করতেই নজরে পড়ে শোভাযাত্রাভিত্তিক তুমুল কর্মচাঞ্চল্য। রবি ঠাকুরের চরণ ধরে এবারের শোভাযাত্রার নির্ধারিত সেøাগান হচ্ছে ‘অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে’। চলমান সময়ের বিবেচনায় এ বছরের শোভাযাত্রার ভাবনায় প্রধান বিষয় হয়েছে মা ও শিশুর মমতাময় সম্পর্ক। ক্রমবর্ধমান অবক্ষয়ের কারণে সামাজিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে মা ও সন্তানের মধুর সম্পর্কের বিষয়টি পেয়েছে শোভাযাত্রার মূল অনুষঙ্গের মর্যাদা। তুমুল গতিতে চলছে শিল্প-কাঠামো নির্মাণ। ইতোমধ্যেই ফালি ফালি করে কাটা বাঁশের কঞ্চি তারের সঙ্গে দিয়ে কাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এরপর নানা রকমের কাগজ জুড়ে দিয়ে পূর্ণ হবে। সব শেষে রঙের ওপর রং চাপিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে মূল অবয়বকে। এ বছরের শোভাযাত্রায় সব মিলিয়ে থাকবে ৯টি শিল্প-কাঠামো। সাম্প্রতিক শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদী প্রকাশে টেপা পুতুলের আকৃতিতে গড়া হচ্ছে মা ও শিশুর কাঠামোটি। সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে থাকবে বিশাল আকৃতির হাতি। তৈরি হচ্ছে সুদৃশ্য ময়ূরপঙ্খী নাও। নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি বিবেচিত হবে সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে। দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদ রুখে দাঁড়ানোর প্রতীকী হিসেবে থাকছে একরোখা ষাঁড়। এছাড়াও পরিবেশ সচেতনতাসহ নানা বিষয়কে ধারণ করে শোভাযাত্রার জন্য নির্মিত হচ্ছে গাছ ও পাখি এবং গরুর শিল্প-কাঠামো। অনুষদের করিডরে শোভা পাচ্ছে চারুশিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থীদের চিত্রকর্মসহ গৃহসজ্জা কিংবা সংগ্রহের রকমারি বিষয়। এ সবের মধ্যে তুহিন পাখি, কাকাতুয়া, মুখোশ ইত্যাদি। আছে পেপার কাটিংয়ে গড়া বাঘ ও পেঁচার মুখোশ। বিশাল আকৃতির পেপার ম্যাশের তৈরি রাজা ও রানীর মুখোশগুলো দারুণ নজরকাড়া। এসব জিনিস কিনতে দিনভর এখন ভিড় জমছে চারুকলায়। এগুলো বিক্রি করেই তুলে আনা হচ্ছে শোভাযাত্রার খরচ। এবারও চারুকলার শিক্ষকদের নির্দেশনায় শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছে মাস্টার্স দ্বিতীয় বর্ষের ১৭তম ব্যাচ। এই ব্যাচের তত্ত্বাবধানের রয়েছেন খালিদ হাসান রবিন। তার নেতৃত্বে অনুষদের বর্তমান ও সাবেক প্রায় তিন শত শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে বিশাল এ কর্মযজ্ঞে। হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ ॥ বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও নববর্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে ‘সানসিল্ক হাজারও কণ্ঠে কোটি বাঙালীর বর্ষবরণÑ১৪২৩’। ভোর সাড়ে ৫টায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহরে এক হাজার শিল্পীর কণ্ঠে বর্ষবরণের গান পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান কার্যক্রম। গোটা আয়োজনে তত্ত্বাবধান করবেন জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করবেন দেশের গুণী ও বরেণ্য শিল্পীরা। পরিবেশনার পাশাপাশি অনুষ্ঠানস্থলে থাকবে বৈশাখী মেলার আয়োজন। পিঠা-পুলি, মাটির তৈরি তৈজস, বেত, কাঁথা, পিতল, পাটজাত পণ্যসহ রকমারি ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ নানা অনুষঙ্গে সুসজ্জিত থাকবে মেলার স্টলগুলো। চ্যানেল আই ও সুরের ধারার যৌথ এ আয়োজনে এবারের উৎসবের পৃষ্ঠপোষক হয়েছে ইউনিলিভারের ব্র্যান্ড সানসিল্ক। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই। এছাড়া একই স্থানে ১৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব। বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ করে নেয়ার এ আয়োজনটি শুরু হবে ওই দিন সন্ধ্যা ৬টায়। চলবে রাত ১২টা ৫ মিনিট পর্যন্ত। এ উৎসবের পরিকল্পনা করেছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। সুরের ধারা ও চ্যানেল আইয়ের যৌথ আয়োজনের অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই। অন্যান্য আয়োজন ॥ পহেলা বৈশাখে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে নাচ-গান ও কবিতায় সাজানো বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। বিকেল পাঁচটায় শুরু হয়ে অনুষ্ঠানটি চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন ও নববর্ষ উদ্্যাপন অনুষ্ঠানমালা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নববর্ষ উদ্্যাপনে পোশাকের বিকিকিনি ॥ নববর্ষ উদ্্যাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে নগরজীবনে যুক্ত হয়েছে নতুন পোশাক। সেই সুবাদে নববর্ষ উদযাপনে এখন সরগরম বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। লাল-সাদার সঙ্গে বিচিত্র রঙে তৈরি হয়েছে নারী-শিশু ও পুরুষের বিভিন্ন নক্সার পোশাক। নারীর শাড়ি থেকে শুরু করে থ্রি-পিস, টু-পিস, পুরুষের পাঞ্জাবি, ফতুয়া কিংবা শিশুদের স্কার্ট, টপস বা পাঞ্জাবিতে বর্ণিলতার সঙ্গে ভর করেছে লোকজ নানা অনুষঙ্গ। শুক্রবার দুপুরে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের দেশীয় পোশাক প্রতিষ্ঠান দেশালে গিয়ে চোখে পড়ে ক্রেতার ভিড়। এখানে কথা হয় ধানম-ির বাসিন্দা ডালিয়া রহমানের সঙ্গে। এই গৃহিণী বলেন, নববর্ষের মতো এত বড় আনন্দময় অনুষ্ঠান আসলে নতুন কাপড় ছাড়া জমে না। তাই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য ঘুরে ঘুরে বৈশাখের পোশাক কিনছি। এখানেই কথা হয় পোশাক প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী রোমিওর সঙ্গে। উৎফুল্ল কণ্ঠে এই তরুণ বলেন, বেচাকেনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে বৈশাখ এসে গেছে। মুসলমানদের ঈদ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার বাইরে আমাদের বিক্রির একটি বড় উৎস হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। সার্বজনীন এই উৎসবকে ঘিরে ক্রেতার কথা বিবেচনায় প্রতিটি ফ্যাশন হাউসই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে পোশাক তৈরি করে। পুরান ঢাকার হালখাতার খবর ॥ নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখে ক্রেতা-বিক্রেতার পুরনো হিসাব-নিকাশ মেটানোর আয়োজন হচ্ছে হালখাতা। পুরনো বছরের লেনদেন চুকিয়ে মিষ্টিমুখ করে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে সম্পর্কের নতুন যাত্রার আয়োজন। যদিও সময়ের বিবর্তনে এখন হালখাতার সেই জৌলস আর নেই। ব্যবসায়ীদের হিসাবের খাতাটি দখল করেছে আধুনিক যুগের কম্পিউটার। এর মাঝেও সীমিত আকারে হালখাতার উৎসব পালন করা হয় রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। শুক্রবার সকালে সরেজমিনে পুরান ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও এলাকা ঘুরে দেখা য়ায়, ব্যবসাকেন্দ্রগুলোকে চলছে ধোয়ামোছার কাজ। বিভিন্ন জায়গায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে কাগজ, বোর্ড, রং-তুলিসহ সাজসজ্জার বিভিন্ন সরঞ্জাম। বিভিন্ন স্বর্ণের দোকানে চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। অনেকেই আবার নববর্ষের জন্য মিষ্টান্ন ভা-ারে গিয়ে মিষ্টির অর্ডার দিচ্ছেন। হালখাতা প্রসঙ্গে ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী সোহেল সামাদ বলেন, আমরা যারা পুরান ঢাকায় থাকি তারা এখনও হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল সাতটায় দোকান খুলে আগরবাতি জ্বালিয়ে গোলাপ পানি ছিটাই। এরপর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে আমন্ত্রিত অতিথিদের মিষ্টি ও নিমকি দিয়ে আপ্যায়ন করি। বছরের সব দেনা-পাওনার হিসাব শেষ করে নতুনভাবে বছর শুরু করি। একই সঙ্গে তাঁতিবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মধুসূদন সাহা বলেন, হালখাতা না করলে আবার পহেলা বৈশাখ হয় নাকি! এখন ডিজিটাল যুগ, কম্পিউটারে হিসাব করা হয়। তারপরও আমরা চলি আমাদের পুরনো নিয়মে। এবারও পহেলা বৈশাখের দিন আমার ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ করেছি। গে-ারিয়ার বিখ্যাত সোনামিয়া দই-মিষ্টি দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করব।
×