ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্টোকসের কণ্ঠে দুঃস্বপ্নের গল্প!

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৯ এপ্রিল ২০১৬

স্টোকসের কণ্ঠে দুঃস্বপ্নের গল্প!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কী দুঃসহ স্মৃতি। বিশ্বজয়ের স্বপ্ন মুহূর্তেই চুরমার হয়ে যাওয়ার সে কী কষ্ট! শেষ ওভারে জিততে ১৯ রান দরকার। বল হাতে এলেন বেন স্টোকস। টানা চার বলে চার ছক্কা খেয়ে গেলেন! এক এক করে চার ছক্কা হাঁকিয়ে কার্লোস ব্রেথওয়েট ‘হিরো’ বনে গেলেন। যেখানে ‘হিরো’ হওয়ার কথা স্টোকসের, সেখানে তিনি ‘ভিলেন’! ৩ এপ্রিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে টি২০ বিশ্বকাপের ষষ্ঠ আসরের ফাইনালে কী দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়েই না যেতে হয়েছে স্টোকসকে। সেই দুঃস্বপ্নের গল্পই ৫ দিন পর ডেইলি টেলিগ্রাফকে শোনালেন এ পেসার। বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, এইমাত্র আমি বিশ্বকাপটা হারিয়ে ফেললাম। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম না কী করব। অনেক সময় লেগেছিল পায়ের নিচের মাটি ফিরে পেতে। মনে হচ্ছিল, বুঝি আর দাঁড়াতে পারব না। ভাল কিছুই মাথায় আসছিল না। একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া যেটাকে বলে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘ম্যাচের পর ৪০ মিনিট পর্যন্ত বুঝতে পারছিলাম না, আমার কী করা উচিত। আমাকে মাঠে ফিরে নিজের পদকটা নিতে হয়েছে। বক্তৃতা শুনতে হয়েছে। আমি জানতাম, সব ক্যামেরা আমার দিকে তাক করা। অবশ্যই আমি ভেঙ্গে পড়েছিলাম। কিন্তু ক্যামেরায় সেটা দেখাতে চাইনি।’ এবার টি২০ বিশ্বকাপে কোনভাবেই সফল বোলার ছিলেন না স্টোকস। ফাইনালের আগে ৫ ম্যাচে ১৬ ওভার বল করেছিলেন। উইকেট নিতে পেরেছিলেন ৪টি। ভাল বোলার থাকা সত্ত্বেও শেষ ওভারে স্টোকসকেই বোলিং করতে পাঠাতে হয়েছে। কারণ, সব বোলারের ওভারই যে শেষ হয়ে গিয়েছিল। স্টোকস বল করতে আসলেন, ৪ বলেই ক্যারিয়ারের সেরা দুঃসময়ের দেখা পেয়ে গেলেন। এরপরও সবাই স্টোকসের পাশেই ছিলেন। মরগান, জর্ডান থেকে শুরু করে সব ইংলিশ ক্রিকেটারই স্টোকসকে সান্ত¡না দিয়েছেন। এরপরও কী একের পর এক এ রকম ছক্কা খেলে কারও মন ভাল হয়! এ নিয়ে স্টোকস বললেন, ‘সবাই আমাকে বলছিল, এটা কিছু না। সব ঠিক হয়ে যাবে। ওরা এর চেয়ে বেশি আর কী বা বলতে পারত? কিন্তু আমার মন তো মানছিল না। ওই রাতে কেউ আর কোন কথা বলছিল না। আমি ওই দিন ভাল করলেই বরং সবাই এর চেয়ে বেশি মজা করত।’ স্টোকস ভাল বল করতে না পারলেও সেমিফাইনালে কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়ে নেন। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে দলকে জেতাতে বিশেষ ভূমিকাও রাখেন। আর তাই ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগান যেন ফাইনালেও তার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। তাতে এবার কাজ হয়নি। আস্থার প্রতিদান দিতে না পেরে হতাশ স্টোকস, ‘আমি মরগানকে তখনই বলেছি, আমি আসলে ফাইনালের চেয়ে সেমিফাইনালেই বেশি স্নায়ুচাপে ছিলাম। হয় তো সেমিফাইনালে ভাল করার পরেই বেশি আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু ওই ওভারের পর সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।’ এখন এ দুঃখস্মৃতি নিয়ে বসে থাকলে তো আর হবে না, এগিয়ে যেতে হবে। সামনে ভাল কিছু করে সেই দুঃস্বপ্ন ভুলে যেতে হবে। স্টোকস সেই ভাবনাই করছেন, ‘ওভারটা অনেক দিন আমার মনে থাকবে। আমাকে নিশ্চিত করতে হবে, এ রকম কিছু যাতে না হয়। আর খারাপ সময়ই তো আপনার আসল পরীক্ষা।’ এত কিছুর পরও স্টোকসকে আত্মবিশ্বাসীই মনে হচ্ছে। এখন দেখা যাক, দুঃস্বপ্ন ভুলে আবার আগের অবস্থায় ফিরতে পারেন কি না স্টোকস।
×