ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অসাধারণ শিল্পকর্ম কুম্ভকারদের তৈরি দেবদেবী

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৯ এপ্রিল ২০১৬

অসাধারণ শিল্পকর্ম কুম্ভকারদের তৈরি দেবদেবী

লোক সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত অন্যতম শাখা হলো লোকশিল্প। কৃষিনির্ভর বাঙালী সমাজ থেকে বাংলার লোকশিল্পের উৎপত্তি। লোকশিল্পের সৃষ্টি ও বিকাশ ঘটেছে সমাজভুক্ত মানুষের প্রয়োজনে। প্রাত্যহিক জীবনের চাহিদা পূরণের জন্যই লোকশিল্প বিকাশ লাভ করেছে। মৃৎশিল্প মাদারীপুর জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত এ জেলার হাজার হাজার মানুষ। এরা কুম্ভকার বা কুমার নামে পরিচিত। পাল বংশের লোকেরা এ পেশায় নিয়োজিত। কাদামাটি দিয়ে কুমাররা বিভিন্ন আকৃতি-প্রকৃতির হাড়ি-পাতিল-বাসন-কোসনসহ গৃহস্থালীর কাজের উপযোগী নানা দ্রব্য-সামগ্রী তৈরি করে। হাত এবং চাকার সাহায্যে কাদা মাটি দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির পর কাঁচা থাকতে তাতে কাঠি দিয়ে পাতা, ফুল, পাখির নকশা করা হয়। কখনও আবার পোড়াবার পর এতে নানা রঙের সমাবেশে বৈচিত্র্যপূর্ণ আকর্ষণীয় নকশা করা হয়। খেলার পুতুল ও ঘর সাজাবার শৌখিন দ্রব্যও কুমাররা তৈরি করে। পাল বা কুমাররা হিন্দুদের দেব-দেবীর মূর্তি নির্মাণ করে। বাঁশ, খড়কুটা, মাটি, কাপড় ও রং দিয়ে নির্মিত তাদের এ মূর্তিগুলো অসাধারণ শিল্পকর্ম। কুমার শ্রেণীর সাধারণ মেয়েরা নানা সামগ্রী তৈরিতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে তাদের দক্ষতা এবং কুশলতা। মাদারীপুর জেলা লোকশিল্পের জন্য খ্যাত। এখনও গ্রামের মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত শ্রেণীর লোকেরা তাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র ব্যবহার করে থাকে। যেমন : হাড়ি, কলসি, মটকা, তউল্লা, বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক, ফুলদানী, সানকি, বদনা, দইয়ের ভাঁড়, ঘটি, মালসা, পাতিল, ছাইদানী ইত্যাদি। এ থেকেই মাদারীপুরের লোকায়ত মৃৎশিল্পের বিমূর্ত পরিচয় ফুটে ওঠে। ঐতিহ্য পরম্পরায় পাল সম্প্রদায়ের মানুষ এ শিল্পের কারিগর। নারীরাই প্রধানত কাজ করে থাকে। মৃৎশিল্পীরা রঙের ক্ষেত্রে প্রাকৃতির রং ব্যবহার করে থাকে। যেমন : চকের গুঁড়া, তেঁতুল বিচি, ইটের গুঁড়া ইত্যাদি। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাজারের কৃত্রিম রঙও ব্যবহার করা হয়। দৈনন্দিন জীবনে মানুষের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র হিসেবে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা, যেমন : ফুলদানী, ছবির স্ট্যান্ড, ঘর সাজানোর ওয়ালম্যাট, মাটির গয়না, মাটির শো-পিস ইত্যাদি। মাদারীপুর জেলায় এক সময়ে মৃৎশিল্পের ছিল জমজমাট অবস্থা। সে সময় এ শিল্পে শত শত লোক জড়িত ছিল। বর্তমানে সদর উপজেলায় মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে কোনমতে টিকে আছে ৩৮ পরিবার, রাজৈর উপজেলায় ৫৮ পরিবার, শিবচরে ২৫ পরিবার এবং কালকিনিতে ২২ পরিবার। সদর উপজেলার পূর্ব রাস্তির, কুলপদ্দী, ঘটমাঝি, মস্তফাপুর, রাজৈর উপজেলার খালিয়া, গোয়ালবাথান, সেনদিয়া, কদমবাড়ি, মজুমদারকান্দি, শিবচর উপজেলার চান্দেরচর, দ্বিতীয়াখ-, দত্তপাড়া, পাচ্চর, কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ির খাসেরহাট, কালকিনির পালপাড়া। যারা এখনও এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছে। Ñসুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×