ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমি তো সারাদিন ভিক্ষা করি, চুরির সময় কোথায়

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৮ এপ্রিল ২০১৬

আমি তো সারাদিন ভিক্ষা করি, চুরির সময় কোথায়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তৃতীয় ও শেষবারের মতো বাফুফের সভাপতি নির্বাচনে অংশ নিতে চান বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বর্তমান সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। বুধবার ‘বাঁচাও ফুটবল’-এর বিসিবি সভাপতির কাছে দ্বারস্থ হওয়ার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান সালাউদ্দিন। এখানে তিনি তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা-যুক্তি পেশ করেন। সেই সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারও চালান তিনি। এ সময় বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি বাঁচাও ফুটবলের ব্যানারে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন কিছু ফুটবল সংগঠক। এর প্রেক্ষিতে সালাউদ্দিন তাদের আক্রমণ করার চেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে অনুরোধ জানান। ‘এটা তাদের প্রতি আমার কোন চ্যালেঞ্জ নয়, এটা তাদের জন্য আমন্ত্রণ।’ বলেন তিনি। তিনি এ সময় তার বিরুদ্ধে আনা অনেক অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন, ‘গত ৮ বছরে আমার অধীনে ফুটবলে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও জাতীয় দলের পারফর্মেন্সে ব্যর্থতা ছিল। যা আমি স্বীকার করি। আর এবার নির্বাচিত হলে জাতীয় দলের পরিচালনা পদ্ধতি সম্পূর্ণ বদলে দেব।’ আর্থিক অনিয়মের যে অভিযোগ, এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফিফার কাছে গত তিন মাস আগে সব রকমের অডিট রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। যে অভিযোগ ছিল একাডেমির অর্থ পুরোপুরি ব্যয় করা হয়নি এর ব্যাখ্যা ফিফাকে দেয়া হয়েছে।’ সালাউদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘ফিফা দুই-এক বছর পর পরই হঠাৎই তাদের পছন্দমতো কোন একটা দেশকে বেছে নেয় অডিটের জন্য। উদ্দেশ্য, সেই দেশের ফুটবল ফেডারেশন কোন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে কি না, তা বের করা। কোন অনিয়ম খুঁজে পেলে ফিফা সে দেশকে আর কোন আর্থিক অনুদান দেয় না। ফিফা কেপিএফসি নামের একটা সংস্থাকে এবার সে দায়িত্ব দিয়েছে। তারা বাংলাদেশে এসে ২৩ দিন ধরে তদন্ত করে গেছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ফিফা বাফুফেকে আবারও টাকা পাঠিয়েছে। সেই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ফিফার যে এপ্রুভেল লেটার, সেটা আমি পকেটে নিয়ে ঘুরছি আপনাদের দেখানোর জন্য। তাহলে আপনারাই বলুন, আমি চোর হলাম কি করে?’ বাঁচাও ফুটবলের নামে তারা অযৌক্তিক আন্দোলন করছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে খেলেছি। সেখানে আমার অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। এই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিও আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন। গত নির্বাচনে তিনি আমার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। চারদিন পরে তিনি আমাকে ফোন করে জানান, পেপারে তিনি তথ্যগুলো লিখতে গিয়ে একাধিক ভুল করেছেন। আমি যেন নির্বাচন কমিশনকে বলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিই। তবে এক শর্তে, যদি আমি তার সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্য করি, সেক্ষেত্রে তিনি সরে দাঁড়াবেন। আমি বলেছিলাম, আমি টাকা দেব, তবে নির্বাচনও করেন। আমি ঠিকই তাকে টাকা দিয়েছিলাম। এরপর তিনি তার ভাই মঈনকেও আমার কাছে পাঠান। চোখের অপারেশনের জন্য তার টাকা চাই। দিলাম টাকা। অপারেশনের পর এসে আবারও এলো টাকা চাইতে। দিয়েছিও। ক’দিন আগে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের আইনুলকে অর্থ সাহায্য করেছি অনেক সমস্যার পরেও। আইনুল এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত। মজার বিষয়Ñ আইনুলকে আমার কাছে পাঠিয়েছেন জাকারিয়া পিন্টু!’ এছাড়া সালাউদ্দিন তার দুই সিনিয়র ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার শামসুল আলম মঞ্জু ও গোলাম সারোয়ার টিপু সম্পর্কে বলেন, ‘টিপু ভাইকে আমিই জাতীয় দলের কোচ করে এনেছিলাম। তিনি আমার কাছে অনুরোধ করেন, তার বেতন বাড়িয়ে দিতে। দিয়েছিলাম। তাও দ্বিগুণ! কিন্তু তিনি দল নিয়ে ব্যর্থ হওয়াতে তাকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছিলাম। শেখ কামালের সঙ্গে বেয়াদবি করায় মঞ্জুকে আবাহনী থেকে বের করে দেয়া হলে তিনি মোহামেডানে চলে যান। অনেকেই তখন মোহামেডান ক্লাবে গাড়ি পার্কিং করতেন। আমিও করতাম। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর একদিন মঞ্জু হকিস্টিক দিয়ে আমার নতুন গাড়ি ভাংচুর করে এবং হুমকি দেয়, ‘বঙ্গবন্ধু আর শেখ কামাল গেছে, এইবার সালাউদ্দিনরে পিটা! এই হলো সেই মঞ্জু।’ এই ঘটনার অনেকদিন পর তিনি আমার বাসায় এসে ওই ঘটনার জন্য আমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছিলেন। এই দুইজন এখন আমার বিষোদগার করছেন। আমার প্রশ্ন হলো, তারা ফুটবলের জন্য এতদিন কি করেছেন?’ সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘যারা আজ আমার ও বাফুফের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন, দেখা উচিত তাদের ও আমার ব্যাকগ্রাউন্ড কি? আমি স্পোর্টসে ও আমার চাচা সায়েন্স এ্যান্ড মেডিসিনে একই বছরে স্বাধীনতা পদক পেয়েছি, যা বিরল কীর্তি। আমার ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। যারা বলে আমি বাজার করতে সকালে বাফুফেতে আসি, তারা আসলে দেশের ফুটবলকে হেয় করছে। আমি দুর্নীতিবাজ হলে সাউথ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনে টানা আট বছর সভাপতি হিসেবে কাজ করতে পারতাম না। এখনও সেই দায়িত্বে আছি। মণিলাল, কোলাসো, গণেশ থাপা ... এরা সবাই আজ ফিফা স্ক্যান্ডালে বহিষ্কৃত, এক সালাউদ্দিন ছাড়া।’ এক সময় ফুটবল মাঠে ছিল না। যেটুক খেলা হতো, তা দিয়ে বছরে তাদের আয় ছিল এক-দুই লাখ টাকা। অথচ সালাউদ্দিন দায়িত্ব নেয়ার পর তারা বছরে পাচ্ছে ৫০-৬০ লাখ টাকা। জেলা ফুটবল হয়েছে অধিকাংশ জেলায়। বাফুফে জেলা ডিএফএগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, যা বাফুফের ইতিহাস এই প্রথম। এসব তথ্যগুলোও জানান সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জেলা ফুটবল নিয়ে যিনি আজ অভিযোগ করছেন, তিনিই কিন্তু এই দায়িত্বে ছিলেন। তাহলে কি ব্যর্থতার দায়ভার তার ওপর বর্তায় না? অথচ কিভাবে এই টাকা আমরা যোগাড় করি, সেটা কেউ বলে না। ফুটবলের জন্য টাকা আনতে তো সারাদিনই ভিক্ষে করি, চুরি করার সময় কোথায়! আমার বয়সভিত্তিক ফুটবলে সাফ অঞ্চলে আমাদের ছেলেমেয়ে দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। একটি ক্লাব আমাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। অথচ গত-সাত আট বছরে তারা নতুন কোন খেলোয়াড় সৃষ্টি করেনি। তাদের কোন পাইপলাইন নেই। তারা কোন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট খেলে না।’
×