ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুরে এ্যাসিডে ঝলসে গেছে এক পরিবারের চারজন ॥ আটক ১

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৮ এপ্রিল ২০১৬

মিরপুরে এ্যাসিডে  ঝলসে গেছে এক পরিবারের  চারজন ॥  আটক ১

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের ছোড়া এ্যাসিডে ঝলসে গেছে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের চার সদস্য। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সুরুজ আলী (৪০) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে মুখোশধারী ৪ জন দুর্বৃত্ত মিরপুরের রূপনগরের ৪৫০/সি-১ নম্বর টিনশেড বাড়ির দোতালায় মাহফুজা আক্তার সুবর্ণার (২৮) বাড়িতে প্রবেশ করে। এ সময় দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে এ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এ সময় ঘরে ঘুমিয়ে থাকা মাহফুজার মেয়ে সানজিদা সুলতানা রিমা (৯) ও তার বোন নিলুফার (৩২) এ্যাসিডে ঝলসে যায়। মাহফুজার স্বামী সুরুজ আলী (৪০) হাতে সামান্য এ্যাসিড দগ্ধ হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সুবর্ণার শরীরের বিভিন্ন অংশ, রিমার ডান হাত ও নিলুফারের ডান হাত এ্যাসিডে ঝলসে গেছে। আর মাহফুজার স্বামী সুরুজের ডান হাতে সামান্য ঝলসে যাওয়ায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মেডিক্যাল ফাঁড়ি পুলিশের পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, পারিবারিক কলহের জেরে সুরুজই লোক দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দগ্ধ মাহফুজা। তারই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুরুজ আলীকে আটক করা হয়। পরে রূপনগর থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, হাসপাতালে স্ত্রী মাহফুজা ও সন্তান রিমা দগ্ধ হওয়ার পর সুরুজ আলীর কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না। তার ওপর তার কর্থাবার্তা ও চলাফেরা সন্দেহজনক ছিল। এই সুরুজ আলীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে আটক করা হয়। দগ্ধ মাহফুজা আক্তার সুর্বণা জানান, তিনি একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। এটি তার স্বামী সুরুজ আলী পছন্দ করত না। তাকে চাকরি ছেড়ে দেয়ার জন্য বহুবার তার ওপর নির্যাতন চালায় তার স্বামী সুরুজ মিয়া। কয়েকবার হুমকিও দেয়। সুবর্ণা জানান, স্বামী সুরুজ মিয়া আগে দুটি বিয়ে করেছে। তারা সবাই এই টিনশেড বাড়িতে থাকে। সতিনদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালই ছিল। সুবর্ণা আরও জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে চারজন লোককে নিয়ে স্বামী সুরুজ টিনশেড দোতালায় তার রুমে ঢুকে। কিছু বুঝে ওঠার আগে স্বামীর পাশের ওই চারজন লোক তাকে লক্ষ্য করে এ্যাসিড ছুড়ে মারে। এ সময় তার পাশে ঘুমিয়ে থাকা মেয়ে রিমা ও বোন নিলুফার শরীর ঝলসে যায়। তারা এ্যাসিড ছুড়ে স্বামীর সামনে দিয়ে পালিয়ে যায়। স্বামী সুরুজ কোন চিৎকার বা তাদের ধরার কোন চেষ্টা করেনি। মাহফুজা অভিযোগ করেন, স্বামী ওই যুবকদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পারিবারিক কলহ থাকায় তার স্বামীই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। রূপনগর থানার ওসি তদন্ত শাহিন ফকির জনকণ্ঠকে জানান, দগ্ধ মাহফুজার অভিযোগের ভিত্তিতে তার স্বামী সুরুজ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তিনি জানান, ভোরের দিকে সুরুজ মিয়া ওই দুর্বৃত্তদের দোতালায় তার স্ত্রীর মাহফুজার রুমে নিয়ে আসে। দুর্বৃত্তরা এ্যাসিড ছুড়ে পালানোর সময় তার স্বামী সুরুজ তাদের ধরারও চেষ্টা করেননি। ওসি তদন্ত শাহিন ফকির জানান, ক্ষুদ্র শিল্প ব্যবসায়ী সুরুজ তার তিন স্ত্রীকে এমনিতে ভরণপোষণ দিতে পারতেন না। তার ওপর ছোট স্ত্রী মাহফুজার গামের্ন্টসের চাকরি ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দিত। এমনকি এই কারণে মাহফুজাকে মারধর করত সুরুজ। এসব নানা বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে।
×