ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সার্ক কৃষিমন্ত্রী সভায় ১২ দফা ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৮ এপ্রিল ২০১৬

সার্ক কৃষিমন্ত্রী সভায় ১২ দফা ঘোষণা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে কৃষি বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত ও দূরীভূত করা হবে। একই সঙ্গে এই অঞ্চলে কৃষিবাণিজ্যের নন-ট্যারিফ বাধাগুলো দূর করতে ঐকমত্য হয়েছেন সার্কের কৃষিমন্ত্রীরা। তারা এই অঞ্চলে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার ও টেকসই করারও ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকায় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) কৃষি মন্ত্রীদের সভা শেষে এসব ঘোষণা দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনার গাঁওয়ে সার্ক কৃষিমন্ত্রীদের তৃতীয় সভার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় আট বছর পরে সার্কের কৃষি সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতের কৃষি এবং কল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী রাধা মোহন সিং, নেপালের কৃষি উন্নয়ন মন্ত্রী হরিবোল গাজুরেল, পাকিস্তানের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও গবেষণা বিষয়ক মন্ত্রী সিকান্দার হায়াত খান বোসান ও ভুটানের কৃষিমন্ত্রী ইয়েসেই দর্জি। এছাড়া আফগানিস্তান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সার্ক কৃষিমন্ত্রীদের সভা শেষে ১২ দফা ঘোষণা করা হয়। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে সভার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। এসময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, সার্ক কৃষিমন্ত্রীদের সভায় ১২ দফা গৃহীত হয়েছে। এই ১২ দফা হলো, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে কৃষি বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত ও দূরীভূত করা হবে। এই অঞ্চলে কৃষি বাণিজ্যের নন-ট্যারিফ বাধাগুলোর বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টি দেয়া হবে। কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদার ও টেকসই করা হবে। সার্ক ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পল্লী উন্নয়নে উপযুক্ত আঞ্চলিক প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রাণিসম্পদ সংস্থার সঙ্গে সার্কের বর্তমান সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সেই সাথে প্রাণিসম্পদ সংক্রান্ত আঞ্চলিক সহযোগিতা ইউনিটের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাগুলো, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অংশীদারিত্ব অব্যাহত থাকবে ও আরও সুসংহত করা হবে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জানান, কৃষি কেন্দ্র ও কৃষি বিজ্ঞানীদের আঞ্চলিক একটি সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করে আরও বেশি পরিমাণে গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া সার্ক বীজ ব্যাংক ও প্রাণিসম্পদ জিন ব্যাংক মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে উচ্চমানের জার্মপ্লাজ অধিকতর বিনিময় নিশ্চিত করা হবে। সার্ক কৃষিমন্ত্রীদের বৈঠকে সার্ক ফুড ব্যাংককে আরও কার্যকর করে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের পাশাপাশি বিশেষায়িত সংস্থাগুলোর সহায়তা নেয়া হবে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়াতে এগ্রো প্রসেসিং ও দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্যের যথাযথ বাজার খুঁজে বের করতে সার্ক সচিবালয়, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব জোরদার করবে। সভায় সার্ক কৃষি কেন্দ্র এ অঞ্চলে কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী ও সম্প্রসারণকর্মীদের অভিজ্ঞতা ও সফর বিনিময়ে সহায়তা করবে। সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ৮ বছর পরে এবার সার্ক কৃষিমন্ত্রীদের বৈঠক হলেও এটা ইতিবাচক। এই বৈঠক সফল হয়েছে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। ফলে আমরা সামনের দিকে আরও অগ্রসর হতে পারব। এক প্রশ্নের উত্তরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নের বিষয়ে আমি বলতে চাইছি না। সেটা আপনারা জানেন। আমি শুধু এটাই বলতে চাই, এক সময়ে আমরা খাদ্য রফতানির কথা চিন্তাই করতে পারতাম না। তবে এখন সেই পরিস্থিতি আর নেই। এখন আমাদের অবস্থান বদলেছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, সার্ক অঞ্চলে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। এটা শুধু খাদ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, সব ক্ষেত্রেই সহযোগিতা বাড়াতে হবে। তাহলেই সার্কে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সার্ক তৃতীয় সভা থেকে সার্ক কৃষিমন্ত্রীদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। পরবর্তী সার্ক কৃষি সভা না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করবেন।
×