ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৮ এপ্রিল ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ চৈত্র আর মাত্র কয়েকদিন। মাসটি শেষ হলেই বৈশাখ। এরই মাঝে বাংলার হাওয়া জলে নতুন বছরের আগমনী বার্তা। বিশাল উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। গ্রামীণ জীবনে বৈশাখের প্রভাব অতি পুরনো। প্রাচীন। নানা আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নববর্ষের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নেয়া হয়। আর রাজধানী শহরে যে উৎসব, সবচেয়ে বড়। বর্ণাঢ্য। ভাবতেই মন কেমন রঙিন হয়ে ওঠে। প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষবরণ উৎসব সামনে রেখে মহাব্যস্ত নগরবাসী। বাঙালীর সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামের বাতিঘর ছায়ানটে প্রতিদিনই চলছে মহড়া। যে গানগুলো গেয়ে বৈশাখ আবাহন করা হবে সেগুলো সবাই মিলে গাইছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বাজতেই খ্যাতনামা শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা চলে আসছেন। মেঝেতে হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়ছেন। ভুল কিংবা বেসুরো কিছু চলবে না। শুদ্ধ সুন্দর একটি আয়োজন নিয়ে সামনে আসতে হবে। সে লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে ছায়ানট। পহেলা বৈশাখ ভোরে বাঙালীর প্রথম গন্তব্য হয়ে উঠবে রমনার বটমূল। এখানেই গানে গানে বৈশাখকে আবাহন করবে বাঙালী। তবে, এ বছরের প্রস্তুতির বিস্তারিত কিছু এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি ছায়ানট। কোন্ কোন্ গান নির্বাচন করা হয়েছে গাওয়ার জন্য, তা-ও বলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। এর ফলে প্রধানতম আয়োজনটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারছেন না কৌতূহলী মানুষ। ১৩ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর কথা রয়েছে। তখনই হয়ত জানা যাবে, বিস্তারিত। পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের গুরুত্বপূর্ণ দিক নতুন পোশাক। এদিন বাঙালী লাল সাদা পোশাকে সেজে বাইরে বের হয়। চলছে সেই কেনাকাটা। দেশীয় পোশাকের শোরুমগুলোতে এখন দারুণ ভিড়। বৃহস্পতিবার শাহবাগের আজিজ মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিটি দোকানে বাড়তি প্রস্তুতি। নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক দিয়ে সাজানো। লাল সাদা রঙের প্রাধান্য। সেই সঙ্গে আছে গেরোয়া রং। কালো রঙের কাপড়েও ফোক মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে। পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রিপিস থেকে শুরু করে আছে টি-শার্টও। ফ্যাশন হাউস কাপড়ই বাংলার বিথুন বললেন, আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব তো বৈশাখ। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি। যারা একটু শৌখিন, সুরুচির মানুষ তারা খুশি মনে কেনাকাটা করতে পারবেন। আর দু’-তিন দিনের মধ্যে ক্রেতা সমাগম বাড়বে বলে জানান তিনি। ভয়াবহ গরমের কথা না বললেই নয়। চৈত্রের যে হাঁসফাঁস অবস্থা গত কয়েকদিন টের পেয়েছেন রাজধানীবাসী। বৃহস্পতিবারের কথাই যদি ধরা যায়, বাপরে! সূর্য যেন গলে গলে পড়ছিল! প্রখর রোদে সকাল থেকেই প্রাণ যায় অবস্থা। দুপুরের অবস্থা ছিল আরও ভয়াবহ। খেটে খাওয়া মানুষের বেলায় এই গরম ছিল দুর্বিষহ। শাহবাগ থানার পাশে রিক্সাওয়ালাদের অনেকই হুড টেনে নিজেই যাত্রীর সিটে বসেছিলেন। কোথাও যেতে রাজি হচ্ছিলেন না তারা। কিন্তু সবাই তো বসে থাকতে পারেন না। পেটে ক্ষুধা। রিক্সার প্যাডেলে পা রাখতেই হয়। দুপুরে নাজিম উদ্দীন রোড দিয়ে যাওয়ার সময় তেমন একজন রিক্সাওয়ালাকে দেখা গেল। তার দিকে আলাদা করে তাকানোর কোন কারণ ছিল না। কিন্তু যখন রিক্সা চালাতে চালাতে মানুষটা গা ছেড়ে দিল, শরীর যখন মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, তাকাতে হলো তার দিকে। অতিরিক্ত গরম সহ্য করতে না পেরে এমনইভাবে সে লুটিয়ে পড়ল। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাঁকে ধরলেন। চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিলেন। ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালেন কঠোর পরিশ্রমে এইটুকুন হয়ে যাওয়া জীবন সংগ্রামী। এবার সেই বেদনার খবর। আরও একজন মুক্ত চিন্তার মানুষ খুন হয়েছেন এই শহরে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিমুদ্দিন সামাদকে বুধবার রাতে খুন করা হয়। খুনী সেই জঙ্গীগোষ্ঠী। অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের একনিষ্ট কর্মী। বুকে ‘রাজাকার নিপাত যাক’ সেøাগান লিখে রাজপথে ছিলেন। তখন থেকেই তিনি টার্গেটে পরিণত হন বলে ধারণা। একই সঙ্গে তিনি সরব ছিলেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। নিজের স্বাধীন মত প্রকাশ করতেন। ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে ছিলেন। সেসব কথা লিখেছেন। তাতেই জঙ্গীরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে নাজিমুদ্দিনকে। খবরটি রটে যাওয়ার পর প্রতিবাদ শুরু হয় শহরে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ চলে দিনভর। স্বাধীন দেশে এই ধরনের হত্যাকা- মেনে নিতে পারছেন না বিদগ্ধজনেরাও। তাদেরও মন বিষণ্ণ।
×