ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাতকদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে তৎপর সিআইডি

তনু হত্যার রহস্য দ্রুত উদ্ঘাটনে প্রধানমন্ত্রীর তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৮ এপ্রিল ২০১৬

তনু হত্যার রহস্য দ্রুত উদ্ঘাটনে প্রধানমন্ত্রীর তাগিদ

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলাটি সিআইডি দায়িত্ব নেয়ার পর সোমবার ঢাকায় সিআইডির উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি তাকে অবহিত করা হয় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পর্শকাতর মামলার অগ্রগতি ও অবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তারিত অবগত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ দ্রুত আসামিদের শনাক্তকরণের তাগিদ দেন। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পর থেকে মামলার রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সহসাই শনাক্তকরণ ও ঘাতকদের গ্রেফতারে তৎপর হয়ে ওঠে সিআইডি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার ৩য় বারের মতো কুমিল্লায় আসেন সিআইডি-ঢাকার বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দের নেতৃত্বে তদন্ত সহায়ক দল। শনিবার পর্যন্ত তারা টানা ৩ দিন কুমিল্লায় অবস্থান করবেন। এছাড়া ডিআইজি (ক্রাইম-ইস্ট) মোঃ মাহবুব মোহসিনের নেতৃত্বে সিআইডির উচ্চ পর্যায়ের একটি দল আগামীকাল শনিবার কুমিল্লায় আসছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিআইডি-কুমিল্লার কার্যালয়ে সেনাবাহিনীর দুই কর্পোরালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাতে জিজ্ঞাসাবাদের তালিকা আরও বাড়তে পারে বলে তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, দেশের বহুল আলোচিত ও রহস্যাবৃত কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন তনুর পিতা ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবি’র হাত ঘুরে মামলাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। এছাড়া আদালতের নির্দেশে কবর থেকে পুনরায় লাশ উত্তোলন করে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত, ভিসেরা রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত করা হয়। এতে প্রথম সুরতহাল রিপোর্টের সঙ্গে দ্বিতীয় সুরতহাল রিপোর্টের গড়মিল, প্রথম ভিসেরা রিপোর্টে বিষক্রিয়ার আলামত না পাওয়া এবং প্রথম ময়নাতদন্ত রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ না করা এবং ধর্ষণের আলামত না পাওয়ায় প্রতিবাদী জনতার মনে নানান প্রশ্নের উদ্রেক হয়। এছাড়া তনু হত্যার বিচার দাবিতে প্রথম থেকেই দেশব্যাপী প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সভা-সমাবেশ অব্যাহত আছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কার্যালয়ে এনে পিয়ার নামে এক সেনা কর্মকর্তার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অতিথিশালায় বসে তনুকে মৃত ঘোষণাকারী সিএমএইচের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, এক ওয়ারেন্ট অফিসার, দুই সার্জেন্ট ও এক আয়াসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে গত সোমবার তনু হত্যা মামলা তদন্তে সিআইডির কুমিল্লা ও ঢাকার তদন্তকারী দলের কর্মকর্তাসহ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ঢাকার মালিবাগ এলাকার সিআইডি সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র জানায়, পরদিন সিআইডির তদন্তকারী দলসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিআইডির সঙ্গে বৈঠকের বিষয় ও তনু হত্যার অগ্রগতি-করণীয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী দ্রুত তনু হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ জড়িতদের শনাক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন। এরপরই নড়েচড়ে বসে তদন্তকারী দল। এরই প্রেক্ষিতে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দের নেতৃত্বে সিনিয়র এএসপি এহসান উদ্দিন চৌধুরী, পরিদর্শক সৈয়দ গোলাম মাওলাসহ তদন্ত সহায়ক দল বৃহস্পতিবার ৩য় বারের মতো কুমিল্লায় আসেন। সিআইডি-কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করিম খান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহমেদ, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক গাজী মোঃ ইব্রাহীমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা বিকেল পর্যন্ত বৈঠক করেন এবং প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে পর্যালোচনা করেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেনানিবাসের দুই কর্পোরালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে পৌনে ৭টায় আরও ২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি কার্যালয়ে আনা হয়। এ জিজ্ঞাসাবাদের তালিকা রাতে আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
×