ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সার্ক ফুড ও সিড ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৮ এপ্রিল ২০১৬

সার্ক ফুড ও সিড ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

বিডিনিউজ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে খাদ্য ব্যাংক ও বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সার্ক কৃষিমন্ত্রীদের তৃতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা সার্ক ফুড ব্যাংক ও সার্ক সিড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এক দেশ অপর দেশকে যে কোন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে যেন সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারি, সেজন্য যৌথ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আমরা চাই একটি মানুষও যেন ক্ষুধার্ত বা অনাহারে না থাকে, অপুষ্টিতে না ভোগে। প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা- কোন দেশ এককভাবে এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। এজন্য দরকার সকলের যৌথ উদ্যোগ।’ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভারতের কৃষিমন্ত্রী রাধা মোহন সিং ও সার্ক মহাসচিব অর্জুন বাহাদুর থাপা বক্তব্য রাখেন। দারিদ্র্য বিমোচনেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সব সময়ই আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দিয়ে থাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, আমরা সবাই মিলে যদি কাজ করি, কারণ আমাদের সমস্যাগুলো তো একই রকম। আর দারিদ্র্য হচ্ছে সবচেয়ে বড় শত্রু। দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জীবনজীবিকার উন্নয়নে আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়টি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু প্রথম কলকাতায় তুলে ধরেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সার্কভুক্ত বেশিরভাগ দেশেরই অর্থনীতি এখনও প্রধানত কৃষিনির্ভর। যদিও কোন কোন দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। তবুও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, খাদ্য ও পুষ্টির যোগান এবং শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে কৃষি এখনও গুরুত্বপূর্ণ।’ বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির ১৬ শতাংশ অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের কৃষির ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এক দশকে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩ গুণ এবং শাকসবজির উৎপাদন বেড়েছে ৫ গুণ। বছরে ৩৪ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন করে দেশ চাল উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করেছে। বর্তমানে নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ থেকে চাল রফতানির কথাও তুলে ধরেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বর্তমান কৃষি ব্যবস্থা নানা কারণে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উচ্চমাত্রার দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে।’ টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি। এর মধ্যে রয়েছেÑ স্বল্প দামে উন্নত বীজ সরবরাহ, কৃষি কাজে সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা, ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা হ্রাস, রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব পদ্ধতির কৃষির প্রবর্তন, কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ, কৃষি উৎপাদন খরচ হ্রাস, কৃষক পর্যায়ে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি বিপণন ব্যবস্থা জোরদার। তিনি বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙ্গে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশের পথে থাকার এবং মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ ডলার হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। দেশে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবার অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার নেতৃত্বাধীন সরকার ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী বর্তমানের দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে আরও ১০ শতাংশ কমাতে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচীর কথাও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য ও কৃষি উৎপাদন, জনগণের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধান সর্বোপরি দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশে খাদ্য নিরাপত্তা তৈরির ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত আইনী কাঠামো প্রণয়ন ও প্রয়োগে আমার সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। আসুন, আমরা সকলে মিলে দক্ষিণ এশিয়াকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে একযোগে কাজ করি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সম্মেলনে আসা সার্কভুক্ত দেশগুলোর কৃষিমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। কৃষিমন্ত্রী ছাড়াও এতে অংশ নেনÑ ভারতের কৃষিমন্ত্রী রাধা মোহন সিং, ভুটানের কৃষিমন্ত্রী যেশি দরজি, নেপালের কৃষিমন্ত্রী হরিবল প্রসাদ গাজুরেল ও পাকিস্তানের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তামন্ত্রী সিকান্দার হায়াৎ খান বোসান। সোনারগাঁও হোটেলে ওই বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে সার্ক দেশগুলোর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ ডলারে উন্নীত হওয়ায় ‘উচ্চ প্রশংসা’ করেন। এছাড়া খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের গবেষণার ওপর জোর দেয়া ও খাদ্যে উদ্বৃত্তেরও প্রশংসা করেন তারা। প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে গবেষণায় জোর দেয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অভিন্ন লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য দূরীকরণÑ এ লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
×