ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ন্ত্রিত বৈশাখী উৎসব

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৮ এপ্রিল ২০১৬

নিয়ন্ত্রিত বৈশাখী উৎসব

পহেলা বৈশাখ বাঙালীর অন্যতম উৎসব। পুরাতনকে বিদায় দিয়ে নতুনের স্বপ্ন রচনার দিন। ‘এসো হে বৈশাখ’ বলে নতুন বর্ষকে আহ্বান জানানোর দিন। নতুন স্বপ্ন, উদ্যম ও প্রত্যাশার আলোয় রাঙানো নতুন বাংলা বছর আসে নতুন করে নতুন সাজে। না পাওয়ার বেদনাকে ধুয়ে-মুছে আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে শুচি করে তুলতেই ফিরে ফিরে আসে বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের প্রথম মাস। বর্ষবরণের উৎসবের আমেজে মুখরিত হয়ে উঠে বাংলাদেশ। কোটি কোটি মানুষের প্রাণের চাঞ্চল্য আর উৎসবমুখরতার মেলবন্ধনে সর্বত্র গীত হবে, ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখী ঝড়।’ বাঙালীর আনন্দিত হবার, নতুনত্বে রেঙে উঠার দিন পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর সত্যিকার অর্থেই প্রাণের উৎসবের দিন। পৃথিবীর যেখানেই বাঙালী ও বাংলাভাষী মানুষ রয়েছে, সেখানেই বর্ণাঢ্য উৎসবের সঙ্গে পালন করা হয়ে আসছে পহেলা বৈশাখ। জমজমাট অনুষ্ঠান হয় ঢাকা নগরীসহ সারাদেশে। এই বৈশাখী উৎসবেই প্রাণের আবেগে মিলিত হয় বাঙালী। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে এক কাতারে এসে দাঁড়ায় সবাই। বাঙালীর দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ। নতুন বছরকে উৎসব-আয়োজনের মধ্য দিয়ে বরণ করতে এখন প্রস্তুতি চলছে সবখানে। বাঙালীর এই সর্বজনীন উৎসবে মাতোয়ারা হতে প্রতিটি বাঙালীর প্রাণ জেগে উঠছে। একদিকে বিদায়ের ঘনঘটা, অন্যদিকে নতুনকে বরণের আয়োজন সবমিলিয়ে যুগ-যুগান্তের বাঙালীর আত্মানুসন্ধানের দিন, আত্মোপলব্ধির দিন, আত্মসাধনার দিন। এবার নববর্ষ উদ্যাপন শৃঙ্খলিত করার প্রয়াস চালানো হয়েছে, ভয়ভীতির আশঙ্কাকে জনমনে ছড়িয়ে দিয়ে এক ভীতিকর অবস্থার সম্প্রসারণ ঘটানো হয়েছে। জঙ্গীদের নাশকতার আশঙ্কা করা হয়েছে জঙ্গী নির্মূলকারীদের পক্ষ থেকে। জারি করা হয়েছে নানা বিধিনিষেধ। যা উৎসবের রংকে ফিকে করে দিতে হবে সহায়ক। পূর্বাহ্নেই জারি করা নিষেধাজ্ঞা যেন বাঙালরি আদি অকৃত্রিম সংস্কৃতি চর্চা ও জীবন চর্চার বিপরীতে নিয়ন্ত্রিত সংস্কৃতিকে উগড়ে দেয়া। উৎসব উদ্যাপনে সরকারের বেঁধে দেয়া সময়সীমা পলাতক মানসিকতার জ্বলন্ত উদাহরণ বৈকি! যা জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদেরই শক্তি জোগাবে। গত বর্ষবরণে টিএসসিতে পুলিশের উপস্থিতিতে নারী লাঞ্ছনার ঘটনাকে সামনে এনে বিধিনিষেধ আরোপ করা যেন মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলে দেয়া। সেদিন পুলিশের নিষ্ক্রিয়, ভূমিকায় দেশবাসীর মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছিল। দুর্বৃত্তদের আটক করা হলেও পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। এই ন্যক্কারজনক কাজের লক্ষ্যই ছিল বৈশাখ উদ্যাপনকে ম্লান করা। তাদের সেই লক্ষ্যকে বক্ষে ধারণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিষেধাজ্ঞার পক্ষে যেসব অযৌক্তিক ও অনাকাক্সিক্ষত ভাষ্য দিয়েছেন, তা বাঙালী জাতি ও সংস্কৃতির প্রতি জঙ্গীবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। উৎসবে নিরাপত্তা দিতে না পারার অজুহাত তুলে এরাই বলবে জঙ্গীবাদ থেকে রক্ষার জন্য নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। সবদিক বিবেচনা করে এই বিধিনিষেধের যৌক্তিকতা মেলে না। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানুষকে উৎসববিমুখ করার অর্থ উৎসব বিরোধীদের জয়ের পথ দেখানো। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার নামে বাঙালীর ওপর আঘাত হানার এই আয়োজন মেনে নেয়া দুষ্কর। সরকার অযৌক্তিক বিধিনিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহার করে পুরো দেশবাসীকে নিয়ে আয়োজন করবে উৎসবের, বরণ করবে নয়া বর্ষকে- এটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।
×