ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রবৃদ্ধি ৭.০৫ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৮ এপ্রিল ২০১৬

প্রবৃদ্ধি ৭.০৫ শতাংশ

দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বলেছিল, বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৬ শতাংশের মতো। অন্যদিকে এডিবি বলেছে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থবছরের শুরুতে বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে সরকারের লক্ষ্য ছিল ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। সর্বশেষ মঙ্গলবার পরিকল্পনামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসেবে চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর মানুষের মাথাপিছু আয় হবে ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। এতদিন বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি আটকে ছিল ৬ শতাংশের কমবেশি বৃত্তে। সে অবস্থায় এই প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রবৃদ্ধি অতিক্রম করল ৭-এর ঘর। অবশ্য এর কারণও আছে । এর মধ্যে বেড়েছে রফতানি আয় ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের অর্থ প্রেরণের পরিমাণ। কৃষি খাত তো বরাবরই সাবলীল ও ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখে চলছে। সর্বোপরি বেড়েছে বিনিয়োগ। জাতীয় আয়ের হিসেবে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৮৯ থেকে উন্নীত হয়েছে ২৯ দশমিক ৬৬ ভাগে। বর্তমান সরকারের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। অথচ কাজটি মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। কুসুমাস্তীর্ণ তো নয়ই। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের অর্থনীতি ছিল প্রায় ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। মানুষের আয় ছিল সীমিত অথচ দ্রব্যমূল্য ছিল আকাশচুম্বী। সেই অবস্থা থেকে জাতীয় অর্থনীতি ও সমৃদ্ধিকে টেনে তোলা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্য ছিল রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ। ২০১৬ সালের জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে অকুণ্ঠচিত্তে বলতে হয়, বর্তমান সরকার অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গেই সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হলো, এ সময় প্রায় সমগ্র বিশ্ব দু’দুটো মন্দাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় প্রবৃদ্ধি গেছে কমে। এমনকি অনেক দেশে লক্ষ্য করা গেছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। এ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মন্দাবস্থার উত্তাপ প্রায় লাগেনি বললেই চলে। বরং শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শনৈঃশনৈঃ গতিতে এগিয়ে গেছে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। পাশাপাশি বলতে হয় একাত্তরের ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামীর লেজুড়বৃত্তি করা দল বিএনপিও অপরাজনীতির নামে ক্রমাগত হরতাল-বোমাবাজি-অবরোধ-পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির চাকাকে থামিয়ে দিতে কম চেষ্টা হয়নি। সরকার জনগণের সহায়তায় কঠোর হাতে সেসব দমন করে সচল রেখেছে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির গতি। ফলে গত দু’বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। এর পাশাপাশি বিদ্যুত উৎপাদনও বেড়েছে আশাব্যঞ্জক হারে। কুইক বা রেন্টাল পাওয়ার স্টেশন নিয়ে যত বিতর্কই থাকুক না কেন, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তা অবদান রেখেছে। বর্তমানে সরকার একাধিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনসহ দেশের অভ্যন্তরে বহুমুখী পণ্য উৎপাদনে আগামীতে আর সমস্যা হবে না। বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমছে। মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং শিল্পোৎপাদনের জন্য অপরিহার্য কাঁচামালের দামও কম। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার এখনই প্রকৃষ্ট সময়। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। সেক্ষেত্রে ঋণের সুদহার কিছু কমিয়ে এবং জমিসহ শিল্পকারখানা স্থাপনের অবকাঠামো গড়ে তুলে সরকার সুগম করে দিতে পারে বিনিয়োগের পথ। সেক্ষেত্রে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া আদৌ কষ্টসাধ্য হবে না।
×