ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়িঘর বিধ্বস্ত ব্যাপক ক্ষতি

কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ॥ যশোরে ৫, খুলনা ও চুয়াডাঙ্গায় হত ২

প্রকাশিত: ০৮:০৪, ৭ এপ্রিল ২০১৬

কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ॥ যশোরে ৫, খুলনা ও চুয়াডাঙ্গায় হত ২

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ চৈত্রের শেষেই কালবৈশাখীর তা-ব দেখল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসী। কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে ৩ জেলায় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যশোরে ঝড়ের সময় ঘর চাপা পড়ে ও আতঙ্কে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। এছাড়া কালবৈশাখীতে চুয়াডাঙ্গায় দেয়াল চাপায় এক নারীর এবং খুলনায় দেয়ালচাপা পড়ে আবদুর রহিম (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বহু টিনের ঘরের চালা উড়ে গেছে, ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। বাগেরহাটে ফসলের ক্ষেতসহ পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর তছনছ হয়ে গেছে। ঝড়ের কবলে পড়ে আহত হয়েছেন নারীসহ অন্তত ১০ জন। লালমনিরহাটে শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এসব জায়গায় কালবৈশাখী আঘাত হানে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। যশোর ॥ মঙ্গলবার রাতে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে যশোরে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাত সাড়ে সাতটার দিকে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। এর সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। প্রায় এক ঘণ্টা ঝড় ও বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত হয়েছে অনেক এলাকা। ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেছে। বিদ্যুত লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন পড়ে। যশোর জেলা ত্রাণ অফিস জানায়, যশোর সদর, ঝিকরগাছা, চৌগাছা, মণিরামপুর ও অভয়নগরের ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। এতে অভয়নগরের ধুলগ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত (৪০), একতারপুর গ্রামের সাহিদা বেগম (৭০) এবং সদর উপজেলার হালসা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ (৮০) মারা যান। ঝড়ের সময় ঘর চাপা পড়ে এদের মৃত্যু হয়। এছাড়া ঝড়ের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শহরের চোরমারা দীঘিরপাড় এলাকার গৃহবধূ পারভীন (৩৫) ও উপশহর এলাকার গৃহবধূ জামেলার (৪০) মৃত্যু হয়। ঝড়ের সময় ঘরের চাল উড়ে যাওয়া ও গাছ ভেঙ্গে পড়তে দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ে শহরের নাজিরশংকরপুর এলাকায় নির্মাণাধীন হাইটেক সফটওয়্যার পার্কের ক্রেন হেলে শ্রমিকদের অস্থায়ী ঘরের ওপর পড়ে। এতে ঘর ভেঙ্গে আট শ্রমিক আহত হন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় আরও অন্তত ৪৫ জন আহত হয়েছেন। অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নে মসজিদ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৭ দোকানের ওপর গাছ ভেঙ্গে পড়ে দুই শিশুসহ পাঁচজন আহত হন। শুভরাড়ায় নদীর পাড়ে ১৩ অস্থায়ী দোকান, দীঘিরপাড়ে মেলার ৩০ দোকান ঝড়ে তছনছ হয়ে যায়। এতে অন্তত আটজন আহত হন। সুন্দলী ও প্রেমবাগ ইউনিয়নে ১৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় যশোর-খুলনা মহাসড়কে ছয়টি বড় গাছ ভেঙ্গে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ ছিল প্রায় চার ঘণ্টা। কালবৈশাখীতে জেলার ৪০ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা ॥ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি আঘাত হানে চুয়াডাঙ্গার ওপর। ৪৫ মিনিট স্থায়ী এ ঝড়ে অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়ে। উড়ে গেছে টিনের চালা। উপড়ে পড়েছে বিদু্যুত ও স্ট্রিট লাইটের পোল। ছিঁড়ে গেছে বিদ্যুত, টেলিফোল ও ডিস লাইনের তার। সেই সঙ্গে উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে মাটির দেয়াল চাপা পড়ে আলমডাঙ্গা মাঝহাদ গ্রামের মইনুদ্দিনের স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৬৫) নিহত হন। বুধবার বিকেল পর্যন্ত বেশিরভাগ গ্রামে বিদ্যুত ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। ঝরে পড়েছে আমের গুটি, ভেঙ্গে গেছে পানবরজ। মাঠের পর মাঠ জমির ভুট্টা গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। ঝড়ে দামুড়হুদা উপজেলার বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। খুলনা ॥ খুলনার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রচ- ঝড় ও বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টা থেকে পৌনে ৯টা পর্যন্ত স্থায়ী ঝড়ে নগরীতে অসংখ্য গাছপালা, সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড ভেঙ্গে পড়ে। খুলনা শহরে ঝড়ের সময় দেয়ালচাপা পড়ে আবদুর রহিম (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ের কারণে বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় ঘটে। বিদ্যুত না থাকায় নগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। এতে গোটা শহরে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে বাণিজ্যমেলার বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ল-ভ- হয়েছে। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বহু কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি, ক্ষেতের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগেরহাট ॥ মঙ্গলবার রাতে আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ে জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। জেলাব্যাপী বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা স্থায়ী এ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে পাঁচ উপজেলায় ৫ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান ল-ভ- হয়ে গেছে। অনেক পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। বাগেরহাট সদর, কচুয়া, ফকিরহাট, রামপাল, চিতলমারী, মোল্লাহাট, মোরেলগঞ্জ উপজেলায় বোরোধান, ভুট্টা, তরমুজ, বাঙ্গি, আম ও সবজিসহ ফসলের ক্ষেত তছনছ হয়েছে। উপড়ে পড়েছে বিপুল সংখ্যক গাছপালা। গাছ পড়ে প্রায় চার ঘণ্টা বাগেরহাট-মাওয়া, খুলনা-বাগেরহাট, খুলনা-মংলা ও খুলনা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুত ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় পানিরপাম্প ও হাসপাতালসহ প্রায় সর্বত্র ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। লালমনিরহাট ॥ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফুল, ফল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একেকটি শিলের ওজন প্রায় দেড় পোয়া হবে। চায়ের দোকানদার শামীম জানান, এত বড় বড় শিলা ২০-২৫ বছরে দেখিনি। লালমনিরহাট জেলায় কোন আবহাওয়া অফিস নেই। ফলে সরকারীভাবে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির কোন পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার রাতের শিলাবৃষ্টিতে নানা ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক জানান, শিলাবৃষ্টি ও বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহের চার উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে সাতজনের আহতের খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাতে ৩০ মিনিট স্থায়ী এ ঝড়ে কয়েকশ’ বাড়ি, ঘর ভেঙ্গে পড়েছে, অসংখ্য গাছ পালা ল-ভ- হয়ে গেছে। বিদ্যুতের পোল ভেঙ্গে পড়ায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুত সরবরাহ।
×