ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খোকন ভাই ও কিছু স্মৃতি

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৭ এপ্রিল ২০১৬

খোকন ভাই ও কিছু স্মৃতি

চলে গেলেন মেধাবী পরিচালক শহিদুল ইসলাম খান। বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান যেমন বিশাল, তেমনি মানুষ হিসেবেও ছিলেন বিশাল মনের। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন-দাউদ হোসাইন রনি শহিদুল ইসলাম খোকন কেন আমার কাছে স্পেশাল একজন মানুষ... ১॥ আমার ছোট ফুপুরা প্রথমবার ভিসিআর কিনেছেন। ভিসিআরের সঙ্গে দু’টি ক্যাসেট কিনে নিয়ে এসেছেন, ‘মনের মতো বউ’ আর ‘ঘাতক’। ভাড়া করে আনা ক্যাসেট তো পরদিনই ফেরত দিতে হয়, এই দু’টি বাসাতেই থাকত। প্রথমটা ফুপুর পছন্দের রোম্যান্টিক ছবি। দ্বিতীয়টা ফুপার পছন্দ। ফুপা মুক্তিযোদ্ধা। সে সময় আবার ঘাতক-দালাল নির্মুল কমিটির কার্যক্রম নিয়ে জাহানারা ইমামের আন্দোলন তুঙ্গে। ‘ঘাতক’-এ গোলাম আজমের বেশ ধরেছেন হুমায়ূন ফরীদি। গোলাম আজমের কূটচাল, দুই নম্বর কান্ডকারখানা আর ছবির শেষ দৃশ্যে ফরীদির বুকের ওপর পতপত করে ওড়ে বাংলাদেশের পতাকা। এসব দেখে শান্তি পান ফুপা। রাজাকারের এমন পরিণতিই কামনা করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে আমরা তিন কাজিনও [মুখতার, দিদার আর আমি] শান্তি পাই। বারবার দেখি এই ছবি। প্রতিটি সংলাপ আমাদের মুখস্ত। দিদার আর আমার মধ্যে সংলাপ নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো। কে কত নিখুঁত সংলাপ বলতে পারে! শাবানা-আলমগীর-ফরীদি-খলিল-রুবেল-সোনিয়া-দিলদার এমনকি ছোটখাটো চরিত্রগুলোর সংলাপও আমাদের মুখস্ত। সত্যি বলছি, এখনও মুখস্ত। কিছুদিন আগে ছবিটা আবার দেখেছি টেলিভিশনে। কি অবাস্তব একটা গল্প আর কান্ডকারখানা! ছোটবেলার কথা মনে করে হেসেই ফেললাম। পরক্ষণেই ভাবলাম, এই গল্পটাই অনেক মানুষকে জাগিয়েছে, চেতনা তৈরি করেছে। ধর্মীয় লেবাসধারীদের দিকেও যে আঙ্গুল তোলা যায়, সেটা দেখিয়েছে। শহিদুল ইসলাম খোকন ভাইকে আমার ছোটবেলার এই গল্প বলার সুযোগ পেয়েছি আরও অনেক পরে, আমি যখন সাংবাদিকতা শুরু করি। ২ ॥ ‘চেহারা’ নামে একটি ছবি নির্মাণ করেছিলেন শহিদুল ইসলাম খোকন। ২০১০-এর মে মাসে মুক্তি পাওয়ার পর ‘ব্যবচ্ছেদ’ করেছিলাম। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সমালোচনা করলে বেশিরভাগ পরিচালক গালিগালাজ করেন, এখানে-সেখানে দেখা হলে এড়িয়ে চলেন। কিন্তু শহিদুল ইসলাম খোকন ভাইয়ের বেলায় হল উল্টো। তাঁর সঙ্গে আমার সখ্য হয়ে গেল। বসুন্ধরা সিটিতে এলেই ফোন করেন। ফুড কোর্টে গিয়ে কথা বলতেন। খানাদানা খুব একটা হতো না, আমরা কথাই বলতাম বেশি। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতেন, আমি শুনতাম। আর আমার দৃষ্টিভঙ্গি জানার চেষ্টা করতেন। ঢাকাই ছবির নেপথ্যের অনেক ভাল ও খারাপ দিক আমি তার কাছ থেকেই শুনেছি। শোবিজের লোকজন সাধারণত বেহুদা কাজে সময় নষ্ট করেন না। সাংবাদিকের সঙ্গে ১০ মিনিট হেসে কথা বলার পেছনে উদ্দেশ্য থাকে, একটা নিউজ যদি করানো যায়! খোকন ভাইয়ের মধ্যে এই বিষয়টা আমি দেখিইনি। ৩॥ ২০১০-এর আগস্টে ‘হ্যালো ডার্লিং’ নামের একটা হিন্দি ছবির ট্রেলার দেখলাম টিভিতে। জাভেদ জাফরি, সেলিনা জেটলি, গুল পানাগ, ঈশা কপিকর অভিনীত ছবিটার ট্রেলার দেখে রীতিমতো অবাক! শহিদুল ইসলাম খোকনের ‘পালাবি কোথায়’ ছবির সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। দুইদিন পরেই তিনি এলেন বসুন্ধরা সিটিতে। আমি আগ্রহ দেখিয়ে বললাম, আপনার ছবি তো বলিউড মেরে দিলো! পুরো ঘটনা শুনে তিনি হাসেন। তাঁর হাসি দেখে আমি আরও অবাক হই। বললাম ঘটনা কী? খুলে বলেন! বললেন, ‘দুইটা ছবির গল্পের উৎস একই। ওরা আমারটা নকল করেনি।’ শহিদুল ইসলাম খোকন কিন্তু সেদিন আমার সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলতেই পারতেন, ‘দেখেছো, কেবল আমরাই বলিউড থেকে নকল করি না, ওরাও আমাদের নকল করে।’ অনেকেই এই কাজটা করে। খোকন ভাই এই সবের প্রয়োজন বোধ করেন না। পরে খবর নিয়ে জানতে পারলাম কমল হাসানের তামিল মুভি ‘মাগালির মাত্তুম’ (১৯৯৪) থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি বানিয়েছেন ‘পালাবি কোথায়’। হুমায়ূন ফরীদির চরিত্রটার সঙ্গে তিনি স্বৈরাচার এরশাদকে মিলিয়েছেন, ব্যস! [মৃত্যু, লাশ, দাফন, আহাজারি... এই বিষয়গুলো ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গিয়েছি]
×