ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আটকে আছে লন্ডনে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৭ এপ্রিল ২০১৬

বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আটকে আছে লন্ডনে

শরীফুল ইসলাম ॥ জাতীয় কাউন্সিলের পর ২০ দিন সময় অতিবাহিত হলেও দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি বিএনপি। দুই দফায় মাত্র ৫ জনকে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার পর থমকে গেছে দলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়া যেতে পারে এমন ৫ শতাধিক নেতার নামের একটি তালিকা কাউন্সিলের পর লন্ডনে তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হলেও সেখান থেকে এখনও কোন সঙ্কেত পাওয়া যায়নি। তাই এখনও লন্ডনে আটকে আছে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি। জানা যায়, দুই দফায় ৫ জনকে কেন্দ্রীয় কমিটির পদ দেয়ার পর স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের তালিকা ঠিক করার পরও বিভিন্ন কারণে তা এখনও প্রকাশ করেনি বিএনপি। তবে লন্ডনের সঙ্কেত পেলে যে কোন দিন তা প্রকাশ করা হবে। এদিকে ২ দফায় ৫ গুরুত্বপূর্ণ পদের পর আর কোন পদে কারও নাম ঘোষিত না হওয়ায় বিএনপিতে বর্তমানে ৫ জন ছাড়া কোন কেন্দ্রীয় নেতার পদ নেই। এ পরিস্থিতিতে পদবিহীন সিনিয়র নেতারা দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও সংকোচ বোধ করছেন। জাতীয় কাউন্সিলের পর ২ দফা কমিটি দেয়ার পর পুরনো কমিটির আর কোন বৈধতা নেই বিধায় তারা এখন কী পরিচয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তা নিয়ে সঙ্কোচ বোধ করছেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, জাতীয় কাউন্সিলের পর নতুন কমিটি দেয়া হবে এটাই স্বাভাবিক। একটি কমিটি প্রস্তুত রয়েছে বলেও আমরা জানি। কিন্তু কী কারণে জাতীয় কাউন্সিলের এতদিন পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হচ্ছে না তা জানি না। তবে পদ না থাকায় কাউন্সিলের পর ২টি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ পেলেও সেখানে দলের পরিচয় কী হবে তা ভেবে আর যাওয়া হয়নি। আমার মতো দলের আরও কোন কেন্দ্রীয় নেতা এ বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত হচ্ছেন কিনা জানি না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির আরেক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, শুনেছিলাম জাতীয় কাউন্সিলের পরপরই পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হবে। কিন্তু ২ বারে ৫ জনের পদ ঘোষণা করা হলেও অন্যদের পদ ঘোষণা করা হয়নি। তবে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে ৫ শতাধিক নেতার একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তারেক রহমান এসব নেতা সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। তাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হতে আরও সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ১৯ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের কর্ম অধিবেশনে খালেদা জিয়াকে চেয়ারপার্সন ও লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমানকে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। আর ৩০ মার্চ নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মহাসচিব, রুহুল কবির রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মিজানুর রহমান সিনহাকে দলের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। জাতীয় কাউন্সিলের ২০ দিন পরও নতুন কমিটিতে স্থান না পাওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সুবিধাজনক পদ পেতে এখন নানামুখী তদ্বির ও দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন। খালেদা জিয়া ও তার আশপাশের লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি লন্ডনে যোগাযোগ করে তারেক রহমানের আশীর্বাদ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ সুবিধাজনক পদ পাওয়ার আশ্বাস পেয়ে এখন খোশ মেজাজে আছেন। আর কোন আশ্বাস না পেয়ে কোন কোন নেতার মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে যারা স্থান পেতে পারেন বলে জানা গেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন আগের কমিটিতে এ পদে থাকা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আসম হান্নান শাহ, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান। এ পদে এ ক’জনকে রাখার ব্যাপারে তারেক রহমানেরও সায় রয়েছে বলে জানা গেছে। আর পদোন্নতি পেয়ে স্থায়ী কমিটিতে আসার জন্য যারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মন রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আগের কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান ও মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এম মোরশেদ খান, আগের কমিটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক, শামসুজ্জামান দুদু, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান প্রমুখ। এবারের জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদ ১৭টি থেকে বাড়িয়ে ৩৫টি করা হয়েছে। তাই আগের কমিটিতে নিচের পদে থাকা ক’জন নেতা এবার পদোন্নতি পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থান পাবেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থান পেতে যারা ঢাকা ও লন্ডনে চেষ্টা-তদ্বির করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বরকতউল্লাহ বুলু, মিজানুর রহমান মিনু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, আগের কমিটির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, এ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, আবদুল হালিম, ফজলুর রহমান পটল, মোসাদ্দেক আলী ফালু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, মেজর জেনারেল (অব) মাহমুদুল হাসান, অধ্যাপক এমএ মান্নান, অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, আগের কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক কবির মুরাদ, সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, নিতাই রায় চৌধুরী, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস প্রমুখ। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদে যারা স্থান পেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন আগের কমিটির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম শামসুল ইসলাম, সারোয়ারী রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বিচারপতি টিএইচ খান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক আবদুল হাই, পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মনিরুল হক চৌধুরী, দলের নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হক, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, একেএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ। পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম মহাসচিব পদ পেতে যারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন তারা হলেন আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন, নাজিমউদ্দিন আলম, যুববিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-প্রচার এমরান সালেহ প্রিন্স, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা প্রমুখ। পদোন্নতি পেয়ে যারা সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেতে লবিং করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আগের কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম চৌধুরী, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কৃষক দল নেতা তকদির হোসেন জসিম, শাহজাহান মিয়া সম্রাট আগের কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক হাবিব উন নবী খান সোহেল, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবুল খায়ের ভূইয়া, ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদী লুনা, রেহানা আক্তার রানু, ওয়াদুদ ভুইয়া, নীলুফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আক্তার, আসিফা আশরাফি পাপিয়া, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, জনকণ্ঠকে বলেন, দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ এগিয়ে চলছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের পাশাপাশি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করলেও বিভিন্নভাবে তিনি কমিটি গঠনের কাজে সহযোগিতা করছেন। যাচাই-বাছাই করে একটি ভাল কমিটি দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এ কারণেই কিছু সময় লেগে যাচ্ছে।
×