ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জানতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৭ এপ্রিল ২০১৬

জানতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস

খন্দকার মাহবুবুল আলম ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি অতি স্বাতন্ত্রিক, অধিকার সম্পন্ন এবং মর্যাদার। বাঙালী জাতির ইতিহাস ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকার। ব্রিটিশ বেনিয়ার পর ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শাসন শোষণ আর বহুমুখী নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এই বাঙালী। এক সময় বাঙালী তার স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে লাগল। যা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দানা বাঁধতে থাকে। বাঙালীর স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক দীর্ঘ প্রবহমান ধারার এক পর্যায়ে ৬ দফা ও ১১ দফা ইত্যাদির সিঁড়ি বেয়ে এক দফার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। যার অর্থ হচ্ছে ‘স্বাধীনতা’। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপোসহীন নেতৃত্ব ও আহ্বানে বাঙালী ঐক্যবদ্ধ হয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। ১৯৭১ সালের নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে বাঙালী বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। এ যুদ্ধে ত্রিশ লাখ বাঙালীর আত্মদান এবং অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জতহানির ঘটনা ঘটে। পশ্চিম পাকিস্তানীরা এত ভয়ানক অত্যাচার চালিয়েও বাঙালীদের দমাতে পারেনি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানীদের এদেশীয় কতিপয় দোসর যথাক্রমে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামী ইসলামী নানাভাবে পাকিস্তান গবর্নমেন্টকে এদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নানাভাবে সহায়তা করেছিল। বিশেষত জামায়াতে ইসলামী, আলবদর, আল শামসরা পশ্চিমা খান সেনাদের সঙ্গে নিয়ে বাঙালীদের হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজ চালিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানীরা এদেশ ছেড়ে চলে গেলেও তাদের এদেশীয় দোসরদের রেখে যায়। তাদের কেউ কেউ তখন আত্মগোপনও করেছিল। যারা এদেশে ঘাপটি মেরে থেকে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে পরবর্তী সময় নানাভাবে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। যার গভীর এবং সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের ফল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি ছিল ন্যক্কারজনক ঘটনা। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির উত্থান ঘটা দুর্ভাগ্যজনক। এই স্বাধীনতাবিরোধীরা এদেশে বাস করলেও এদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। যে কারণে তারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে এদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখে। সবচেয়ে লজ্জার বিষয় হচ্ছে- এরা এই স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ও আরোহণ করতে পেরেছিল। যা বিবেক সচেতন মাত্রই হতবাক হয়েছেন। যারা ‘জিন্দাবাদ’ সংস্কৃতিকে ভালবাসে এবং মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের স্লোগান ‘জয়বাংলা’ শব্দটি উচ্চারণ করতে লজ্জা পায় তারা পাকিস্তানের দোসর তথা স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বললে অত্যুক্তি হবে না। তারা ‘বাংলাদেশ বেতার’কে পাকিস্তানী সুরে ‘রেডিও বাংলাদেশ’। তারা অসাম্প্রদায়িক চেতনার পরিবর্তে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতায় থাকতে পছন্দ করেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক বলতে পছন্দ করেন না। এরা মুখে স্বাধীনতার কথা বললেও স্বাধীনতার প্রকৃত বিপক্ষ শক্তি। স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক পরেও আমাদের পরাধীনতার শেকলে ওরাই জড়াতে চায়। অনেক ইতিহাস সৃষ্টির মাধ্যমে চড়াদামে কেনা স্বাধীনতার এই সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হলে এখনই সতর্কতা প্রয়োজন। আর তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও চেতনার পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মধ্যম হালিশহর, চট্টগ্রাম থেকে
×