ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ওদের মুখ ও মুখোশ

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৭ এপ্রিল ২০১৬

ওদের মুখ ও মুখোশ

রাখাল চন্দ্র মিত্র স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। স্বাধীনতাহীনতা এবং দাসত্ব শৃঙ্খল পরে কেউই বাঁচতে চায় না। এমনকি বনের পশু-পাখিরাও না। পরাধীন হয়ে বাঁচা হয়ত যায়। কিন্তু সে বাঁচা গৌরবের বাঁচার মতো নয়। সে বাঁচা গ্লানিময়। সেই অভিশপ্ত বাঁচা থেকে মানুষ মুক্তি চায়। এই অর্থে মানুষমাত্রেই স্বাধীনতাপ্রিয়। কেউই স্বাধীনতাবিরোধী নয়। একটি দেশ ও জাতির স্বাধীনতা সম্পর্কে একথা খাটে না। বিশেষ করে সেই স্বাধীনতা যদি সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই প্রেক্ষিতটিই প্রযোজ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঊষালগ্ন থেকেই এর পক্ষ-বিপক্ষ বিদ্যমান ছিল। এমনকি স্বাধীনতাপূর্ব সংগ্রামের কাল থেকেই স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা নিয়ে ঐকমত্যের অভাব ছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থাৎ ভাষা আন্দোলন, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসনের তথা স্বাধীনতার মুক্তিসনদ বলে কথিত ছয়-দফার আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির অস্তিত্ব প্রবলভাবে দৃশ্যমান ছিল। এর একটি ঐতিহাসিক অনিবার্য যোগসূত্র আছে। গোলাম আযম গংয়ের বর্ণনায় পাকিস্তানের যন্ত্রণাদায়ক প্রসব বেদনাজনিত গর্ভপাতের ফলে অবৈধভাবে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির উদ্ভব। তাদের ভাষায় এই অবৈধ রাষ্ট্রটির জন্ম ঠেকানোর জন্য তারা একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের শুধু রাজনৈতিক বিরোধিতাই নয় সশস্ত্রভাবে পাকবাহিনীর গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল। পাকবাহিনীর অীঁরষরধৎু ঋড়ৎপব হিসেবে রাজাকার, আলবদর, আলশামস ইত্যাদি বাহিনী গঠন করে মুক্তি ও স্বাধীনতাযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতায় লিপ্ত ছিল। উদ্দেশ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকানো এবং পাকিস্তানের অখ-তা বজায় রাখা। এটি ছিল তাদের সুচিন্তিত উদ্দেশ্যমূলক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যুদ্ধে পরাজয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে তারা মেনে নিতে পারেনি। পাকিস্তান পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে আন্ডারগ্রাউন্ডে আত্মগোপনে থেকে প্রতিবিপ্লব সংঘটনের অপেক্ষায় থাকে। পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তারা সেই প্রতিবিপ্লব সম্পন্ন করে এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেয়। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেই তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় প্রতিস্থাপন করার উদ্যোগ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ, সংবিধানের মৌলিক আদর্শগত (চার মূলনীতি) পরিবর্তন সাধন, স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পুনঃপ্রবর্তন, ধর্মব্যবসায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, একাত্তরের চেতনার পরিবর্তে সাতচল্লিশের চেতনায় প্রত্যাবর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে দ্বিজাতিতত্ত্বের বাংলাদেশে রূপান্তরের সকল আয়োজন সম্পন্ন করে। একটি স্বাধীন দেশে কোন নাগরিকই স্বাধীনতাবিরোধী হতে পারে না। এটাই স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম। এদেশে একদল মানুষ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেও তারস্বরে বলে বেড়াচ্ছে তারা কোন ভুল করেনি। মুসলীম লীগ, জামায়াত এবং ধর্মব্যবসায়ী রাজনৈতিক ঘরাণার দলগুলো এবং তাদের অনুসারী সমর্থক মানুষগুলোই স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত। এদের সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধার মুখোশধারী একদল পাকিস্তানী বাঙালী যারা মুজিবনগরে গৃহীত চৎড়পষধসধঃরড়হ ড়ভ ওহফবঢ়বহফবহপব মানেন না, মুক্তিযুদ্ধের ফসল সংবিধানের চার মূলনীতি গ্রহণ করেন না। জাতির জনককে স্বীকার করেন না, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মত্যাগের মহিমা অবমূল্যায়ন করেন, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের চলমান বিচার সমর্থন করেন না। গড়ংয়ঁব ধহফ গরষরঃধৎু নীতিতে পাকিস্তানী কায়দায় দেশ চালাতে চান, ওহফবসহরঃু এর মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি (ঈঁষঃঁৎব ড়ভ ওসঢ়ঁহরঃু) চালু করেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করেন, দেশের রাজনীতি উরভভরপঁষঃ করে তুলতে চান। এরা কারা তাদের চিহ্নিত করতে পারা কিন্তু কঠিন কোন কাজ নয়। এরা বর্তমানে বিএনপি নামক রাজনৈতিক প্লাটফরমে সংঘবদ্ধ হয়ে আছে। এদের মুখ ও মুখোশ বাঙালীদের খুব চেনা। তার পরেও বহু মানুষ এদের সমর্থন করে। ভোট দেয়। ক্ষমতায় বসাতে চায়। সত্যি কি বিচিত্র ব্যাপার! পটুয়াখালী থেকে
×