ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে নাশকতার পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৬ এপ্রিল ২০১৬

পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে নাশকতার পরিকল্পনা

শংকর কুমার দে ॥ দেশের উত্তরাঞ্চলকে ঘিরে ফের সংগঠিত হচ্ছে জেএমবিসহ জঙ্গী সংগঠনগুলো। রাজধানী ঢাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি তৎপরতার মুখে আবারও জঙ্গীরা নিরাপদ হিসেবে বেছে নিচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চলকে। জেএমবি’র জঙ্গীরা বগুড়ার শেরপুরের জোয়ানপুর কুঠিরভিটা গ্রামে বাড়িতে রবিবার রাতে বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে ২ জঙ্গী নিহত ও বিপুল পরিমাণ শক্তিশালী গ্রেনেড, বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির আধুনিক সরঞ্জামাদি, জেল আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার পর তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও কাউন্টার টেররিজম ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেনেড-বোমা বিস্ফোরণ ঘটনানোর নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে গ্রেনেড-বোমা বিস্ফোরকের মজুদ গড়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিল জঙ্গীরা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে জঙ্গীরা ঘাঁটি গেড়ে সংগঠিত হওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। জামায়াত-বিএনপির কথিত আন্দোলনের নামে গ্রেনেড-বোমা, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের যে নাশকতা ঘটানো হয়েছে সেই একই এলাকা ও বাড়ি থেকেই রবিবার বোমা বিস্ফোরণে দুই জন নিহত ও গ্রেনেড-বোমা তৈরির শক্তিশালী বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানান, রাজধানী ঢাকার চেয়ে অধিকতর নিরাপদ ভেবে উত্তরাঞ্চলকেই বেছে নিয়ে ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাচ্ছে জঙ্গীরা। উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রামে গাড়িয়ালপাড়ায় বাড়ির সামনের সড়কে ধর্মান্তরিত খ্রীস্টান হোসেন আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে আবারও জঙ্গী তৎপরতার জানান দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করিয়েছে জঙ্গী গোষ্ঠী। ধর্মান্তরিত খ্রীস্টান হোসেন আলীকে যেভাবে মোটরসাইকেলযোগে এসে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ঠিক একই কায়দায় মোটরসাইকেলযোগে এসে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক সিজার তাবেলা, রংপুরে জাপানী নাগরিক কুনিও হোশি ও পঞ্চগড়ে দেবীগঞ্জ উপজেলায় মঠপ্রধান যজ্ঞেশ্বরকে হত্যা এবং দিনাজপুরে খ্রীস্টান ধর্মযাজককে হত্যার চেষ্টা করে। প্রতিটি ঘটনায় একটি মোটরসাইকেলে তিনজন করে দুর্বৃত্ত অংশ নেয়। গত ছয় মাস ধরে জঙ্গী গোষ্ঠী যে এক ডজন ভিন্নমতাবলম্বীদের ধর্মীয় উপাসনালয়, মন্দীর, মসজিদ, গির্জায় যেসব হামলা করেছে তার প্রায় সবই উত্তরাঞ্চলকে ঘিরেই। এর মধ্যে হামলার শিকারে পরিণত হয়েছে, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের আহমদিয়া মসজিদ, হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দীর, খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের গির্জাগুলোতে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলকে নিরাপদ হিসাবে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার জন্য বেছে নিয়েছে জঙ্গী সংগঠনগুলো। বিশেষ করে জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। উত্তরাঞ্চলের লোকজন তূলনামূলক সহজ-সরল, দরিদ্র ও ধর্মভীরু হওয়ায় জঙ্গীরা এসব এলাকায় নাশকতা চালিয়ে আত্মগোপন করে থাকার সুযোগ পাচ্ছে। উত্তরাঞ্চল জেলাগুলোর মধ্যে পাবনা, বগুড়া, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় জঙ্গী হামলা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চালানো হয়েছে। দেশী-বিদেশী অর্থায়নে চলছে জেএমবির কর্মকা-। উত্তরাঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের ক্যাডার রয়েছে। তাদের একজন নিহত হলে আরেকজন সংগঠনের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কর্মকা-ই প্রমাণ করছে যে জঙ্গী সংগঠনটি ফের পুনর্গঠিত হচ্ছে। পহেলা বৈশাখসহ বিশেষ কোন দিবস আসলেই ফের সংগঠিত হয়ে নাশকতা ঘটাতে তৎপর হয়ে ওঠে জেএমবিসহ জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো।
×